
উত্তর ২৪ পরগনা: ‘সারা বাংলায় একটাই স্বর, জাস্টিস ফর প্রদীপ কর’, আগরপাড়ায় মৃত প্রদীপ করের বাড়িতে গিয়ে সুর চড়ালেন তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সামাজিক মাধ্যমে নিজের ডিপিও বদল করেছেন অভিষেক। প্রদীপ করের মৃত্যুর জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ও নির্বাচন কমিশন দায়ী বলে অভিযোগ করেন তিনি। পাশাপাশি বঙ্গবাসীর উদ্দেশে বার্তা দেন, “SIR শুরুর পর থেকে আমি রাস্তায় থাকব, আপনারা ভয় পাবেন না।” প্রদীপের মৃত্যুর পরও কেন বিজেপির কেউ তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন না, সে প্রশ্নও তোলেন।
অভিষেক এদিন দুপুর তিনটে নাগাদ প্রদীপ করের বাড়িতে যান। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন। তারপর সামনে এসে খোলা মঞ্চে এলাকাবাসীর উদ্দেশে বার্তা দেন তিনি। অভিষেক বলেন, “খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। গত পরশু জাতীয় নির্বাচন কমিশন SIR ঘোষণা করেছে। আর তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই খবর পাই। SIR এর ভয়ে নিজেই নিজের প্রাণ নিয়েছেন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। একটা প্রাণ চলে গেলে তো কেউ ফিরিয়ে আনতে পারে না।”
প্রদীপ কর অবিবাহিত। বাড়ির পাশেই একটা দোকান চালিয়ে সংসার চালাতেন তিনি। ভাইয়েরও ওপেন হার্ট বাইপাস সার্জারি হয়েছে। অভিষেক বলেন, “পরিবারের লোকেদের কাছ থেকে শুনেছিল, তিনি দানধ্যান করতেন, এলাকার তাঁর পরিচিত রয়েছে। নিপাট ভদ্রলোক। প্রদীপবাবুর পরিবার এই এলাকায় ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে রয়েছেন। এই বাড়িতে হয়তো কিছুদিন এসেছেন। তার আগে এখানেই অন্য বাড়িতে থাকতেন।”
এলাকাবাসীকে অভয় বার্তা দেন অভিষেক। এক জন ভোটারের নামও বাদ গেলে, এক লক্ষ ভোটার নিয়ে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও করার ডাক দেন তিনি। কলোনি এলাকার বাসিন্দাদেরও নিশ্চিন্তে থাকার পরামর্শ দেন তিনি। উল্লেখ্য়, অভিষেক যখন আগরপাড়ায়, তখনই খবর সামনে আসে দিনহাটায় আরও এক জন SIRএর ভয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। সে প্রসঙ্গও উত্থাপন করেন তিনি।
মঙ্গলবার ঘর থেকে প্রদীপ করের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। আর পুলিশের দাবি, তাঁর পাশ থেকে উদ্ধার হয় একটি নোট। সেই নোট নিয়ে রহস্য জোরাল হচ্ছে। পুলিশের দাবি, নোটে লেখা ছিল, ‘আমার মৃত্যুর জন্য NRC দায়ী।’ কিন্তু পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য, প্রদীপ করেন ডান হাতের চারটে আঙুল ছিল না। ‘৮০ সালের আগে একটি দুর্ঘটনায় ডান হাতের চারটে আঙুল কাটা যায় প্রদীপ করেন। ডান হাতেই খেতেন, কাজ করতেন, তবে লিখতে পারতেন কিনা, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।
সে প্রসঙ্গ উত্থাপন করে অভিষেক বলেন, “আমি সত্যিই লজ্জিত, একটা রাজনৈতিক দল এতটা নিচে নামতে পারে। প্রদীপবাবুকে ব্যক্তি আক্রমণ করা হচ্ছে, তিনি লিখতে পারেন নাকি পারেন না, সে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। তিনি পরিস্কারভাবে লিখে দিয়ে গিয়েছেন, ‘আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী NRC’, তারপরও এটা নিয়ে রাজনীতি করবেন?” কেন এখনও পর্যন্ত বিজেপির কেউ পরিবারের সদস্যদের কাছে গিয়ে দেখা করেননি, সে প্রশ্নও তোলেন। অভিষেক বলেন, ” যারা নিজেদের হিন্দু ধর্ম, হিন্দুদের রক্ষাকর্তা, ধারকবাহক বলে দাবি করেন, তাঁদের কেউ এসে পরিবারটার খোঁজ নিয়েছেন।”
এদিনই অবশ্য রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “ওটা ফলস কেস। ২০০২ সালে ওনার নাম ভোটার লিস্টে ছিল। ওনার পরিবারের সদস্যরা সব তৃণমূল করেন। ওনার কাছে তো CAA, NRC-র কোনও ব্যাপার নেই তো, আমার কাছে ওনার সিরিয়াল নম্বর, পার্ট নম্বর সব রয়েছে। আমি নিজে দেখেছি।”