
হাবড়া: এসআইআর নিয়ে একদিকে রাজনৈতিক চাপানউতোর বেড়ে চলেছে। আবার অন্যকে বাবা সাজিয়ে ভোটার কার্ড করার অভিযোগ সামনে এসেছে। তেমনই এসআইআরের জন্য নিখোঁজ স্বামীকে খুঁজে পেয়েছেন কেউ। এবার এসআইআর-র জন্য ২৬ বছর আগে নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া এক ব্যক্তির খোঁজ পেলেন তাঁর বৃদ্ধ বাবা-মা। ছেলের খোঁজ পেয়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ার বৃদ্ধ দম্পতি প্রশান্ত দত্ত ও সান্ত্বনা দত্ত। ছেলের খোঁজ পেয়ে এসআইআর প্রক্রিয়া ধন্যবাদ জানালেন তাঁরা।
মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর একমাত্র ছেলেকে নিয়ে ছিলেন হাবড়ার বাসিন্দা প্রশান্ত দত্ত ও তাঁর স্ত্রী সান্ত্বনা দত্ত। প্রশান্ত ও তাঁর ছেলে তরুণ দত্ত একসময় ধান কেনাবেচার ব্যবসা করতেন। একসময় ব্যবসায় লোকসান হয়। ধারদেনায় জড়িয়ে পড়েন। সেই দেনা শোধ করতে না পেরে লোকলজ্জার ভয়ে ১৯৯৯ সালে নিরুদ্দেশ হয়ে যান তরুণ। বৃদ্ধ দম্পতি তারপর থেকে আর ছেলেকে দেখেননি। তবে পাওনাদারদের চাপ দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় তিনি নিজে জায়গা জমি বিক্রি করে সেই দেনা মিটিয়েছেন। এরপরও ছেলের খোঁজ না পাওয়ায় কার্যত অসহায় হয়ে পড়েছিলেন বৃদ্ধ বাবা- মা।
সম্প্রতি এসআইআর শুরু হতে বৃদ্ধ দম্পতির পাশাপাশি তাঁদের ছেলে তরুণ দত্তের ফর্ম বাড়িতে এসে দিয়ে যান স্থানীয় বিএলও। প্রশান্ত দত্ত, নিজের পাশাপাশি স্ত্রী ও ছেলের ফর্ম পূরণ করে স্থানীয় বিএলওর কাছে জমা দেন। গত মাসের ২৯ তারিখ হাবড়ার ২৫৯ নম্বর বুথের বিএলও তপন ধর সেই ফর্ম নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে ম্যাপিং করার সময় দেখতে পান প্রশান্তর ছেলে তপনের নাম পশ্চিম মেদিনীপুরের একটি জায়গা থেকে অলরেডি ম্যাপিং করা হয়ে গিয়েছে। বিএলও তপন ধর তখন পশ্চিম মেদিনীপুরের নির্দিষ্ট যে জায়গা থেকে তরুণ দত্তের নাম অনলাইনে আপলোড করা হয়েছে, সেই জায়গার বিএলওর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ওই বিএলও-কে তপন ধর জানান, তরুণ তাঁর এলাকার ভোটার। তাঁর বাবা সমস্ত নথি দিয়ে গিয়েছেন। সেই সময় ফোনের অন্য প্রান্ত থেকে ওই বিএলও জানান, তরুণ নিজে এসে তাঁকে ফর্ম জমা দিয়ে গিয়েছেন।
এরপর ওইদিন রাত আটটা নাগাদ পশ্চিম মেদিনীপুরের সেই বিএলও মারফত হাবড়ার ২৫৯ নম্বর বুথের বিএলও তপন ধর, তরুণ ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন।২৬ বছর আগে বাড়ি ছেড়ে যাওয়া তরুণ মেদিনীপুরে বিয়ে করে বসবাস শুরু করেছেন। কলেজ পড়ুয়া ছেলেও রয়েছে তাঁর। এরপরই তরুণের ছেলে তপনবাবুর কাছ থেকে ফোন নম্বর নিয়ে তাঁর দাদু প্রশান্তকে ফোন করেন এবং দুই পরিবারের মধ্যে কথোপকথন হয়। বৃদ্ধ দম্পতি তরুণকে জানান, সমস্ত ধারদেনা তাঁরা মিটিয়ে দিয়েছেন। তরুণ যেন বাড়িতে চলে আসেন। আর পাওনাদারেরা তাঁকে চাপ দিতে পারবেন না। তাতে আশ্বস্ত হন তরুণ। খবর পেয়ে তরুণের দিদিদের সঙ্গেও তাঁর ভিডিয়ো কলে বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে।
এখন তরুণ চান তাঁর বৃদ্ধ বাবা মার কাছে ফিরতে। ছেলের খোঁজ পেয়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি বৃদ্ধ দম্পতি। তাঁরা জানান, ছেলে নিরুদ্দেশ হওয়ার পর থেকে দুশ্চিন্তায় দিন কেটেছে তাঁদের। ছেলেকে ফিরে পাওয়া সম্ভব হয়েছে এসআইআরের কারণে। না হলে শেষ বয়সে আর ছেলেকে ফিরে পাওয়া হত না। তাঁরা জানান, সেই সময় থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেছিলেন। খোঁজ পাওয়া যায়নি। তার উপর মাঝে এতগুলো বছর পেরিয়ে যাওয়ায় তাঁরা ধরেই নিয়েছিলেন ছেলে হয়তো আর কোনওদিনই ফিরবেন না। অথবা কোনও অঘটন ঘটে গিয়েছে। এখন যত দ্রুত সম্ভব ছেলেকে দেখতে চান বৃদ্ধ দম্পতি। ছেলের বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে রয়েছেন তাঁরা।