উত্তর ২৪ পরগনা: নেতাজি জন্মজয়ন্তী পালনকে কেন্দ্র করে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে ভাটপাড়া। চলে ৭ রাউন্ড গুলি। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশাল পুলিশবাহিনী নামে। ভাটপাড়ার সাংসদ অর্জুন সিংয়ের ছেলে পবন সিং নেতাজি প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করতে গেলেই এই সংঘর্ষ শুরু হয়। ইতিমধ্যেই গোটা ঘটনার বিবরণ জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে (Amit Shah) ফোন করেছেন বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং (Arjun Singh)। পাল্টা তৃণমূলের তরফে দায়ের করা হয়েছে এফআইআর (FIR)।
সূত্রের খবর, ভাটপাড়ায় সংঘর্ষের খবর সবিস্তারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে জানিয়েছেন ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফোন করে বিজেপি সাংসদের অভিযোগ, ভাটপাড়ায় তাঁর উপর প্রাণঘাতী হামলা চালানো হয়েছে। ভেঙে দেওয়া হয়েছে গাড়ির কাচ। তাঁকে লক্ষ্য করে ইট বৃষ্টিও হয়েছে। শুধুমাত্র দেহরক্ষীদের জন্যই তিনি রক্ষা পেয়েছেন। পাশাপাশি, ভাটপাড়ার পাঁচ তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর দায়ের করেছেন অর্জুন। সেই তালিকায় রয়েছেন, গোপাল রাউত, অমিত সাউ, অরুণ সাউ ও নুর আলম।
চুপ করে নেই তৃণমূলও। পাল্টা শাসক শিবিরের পক্ষ থেকে সাংসদ অর্জুন সিং ও বিধায়ক পবন সিংয়ের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগ দায়ের করেছেন ভাটপাড়া পুরসভার পুরপ্রশাসক গোপাল রাউত। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে হামলা, মারধর ও গুলি চালানোর অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তৃণমূল পুরপ্রশাসকের কথায়, “ভাটপাড়ায় অর্জুন সিং বরাবর অশান্তি সৃষ্টি করে চলেছেন। গাড়ি থেকে নেমে নিজে এসে আমাদের এক নেতার গায়ে হাত তুলেছেন সাংসদ। মারধর করেছেন। তাই আমরা এফআইআর দায়ের করেছি।”
রবিবার সকালে নেতাজি সুভাষচন্দ্রের জন্ম জয়ন্তী উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল বিজেপি। সেই অনুষ্ঠানে নেতাজির প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করতে যান ভাটপাড়ার তৃণমূল সাংসদ অর্জুন সিংয়ের ছেলে ভাটপাড়ার বিজেপি বিধায়ক পবন সিং। মালা দিয়ে বেরোনোর সময় তাঁর পিছনে তিন-চারজন ধাওয়া করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন অর্জুন সিং। তারপরই অর্জুন সিংয়ের সঙ্গে ধস্তাধস্তি লেগে যায়। বোমাবাজিও শুরু হয়। অর্জুন সিংকে ঘিরে ইট বৃষ্টির অভিযোগও ওঠে তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে। বিজেপি সাংসদকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি ও বোমাবাজির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি কর্মীরা।
বিজেপির অভিযোগ, পুলিশ এই ঘটনায় নিষ্ক্রিয় ছিল। পরিস্থিতি খারাপ দেখে অর্জুন সিংয়ের নিরাপত্তা রক্ষীরা বন্দুক বের করে হুঁশিয়ারি দিয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। শেষে শূন্যে পাঁচ রাউন্ড গুলি চালায় সিআইএসএফ। নেতাজি জয়ন্তীতে রীতিমত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় ভাটপাড়া। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে কাঁদানে গ্যাস চালায় পুলিশ।
ভাটপাড়ার পুর প্রশাসক গোপাল রাউতও নেতাজির প্রতিকৃতিতে মালা দিতে আসেন। জানা গিয়েছে, এই মালা দেওয়া নিয়েই তৃণমূল-বিজেপি রেষারেষি। স্থানীয় বাসিন্দা জানিয়েছেন, “যাঁরা সংগ্রামীদের নিয়ে রাজনীতি করছে তাঁদের থেকে দূরে থাকাই ভালে। সুভাষচন্দ্র বসু রাজনীতির জন্য আসেননি, দেশের জন্য এসেছে। এরা নিজেদের লাভের জন্য এসেছে।”
তৃণমূল দাবি করেছে, নিজের গড়েই অস্তিত্ব সংকট। অশান্তি পাকাচ্ছেন অর্জুনই। এর আগেও রাজনৈতিক সংঘর্ষে বারবার উত্তপ্ত হতে দেখা গিয়েছে ভাটপাড়াকে। বরাবরই বিশেষ ‘সংবেদনশীল’ স্থান বলে পরিচিত ভাটপাড়া। কয়েকমাস আগেই খোদ সাংসদ অর্জুন সিংয়ের বাড়িতে বোমাবাজির অভিযোগ উঠেছিল। সেবার তদন্তে নামে এনআইএ। ফের ভাটপাড়ায় শাসক-বিরোধী সংঘাতে কার্যত আতঙ্কে স্থানীয়রা। শান্ত হোক ভাটপাড়া, এটুকুই কামনা তাঁদের।
আরও পড়ুন: Dilip Ghosh on Bengal BJP: ‘কোন্দলের কিছু নেই, পরিবর্তনের হাওয়ায় একটু আওয়াজ হয়’