উত্তর ২৪ পরগনা: মাত্র একুশ বছর বয়স। পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন মডেলিং-কে। চোখে ছিল স্বপ্ন। কিন্ত তার বাস্তবায়ন হওয়ার আগেই সবটা শেষ এক লহমায়। উঠতি মডেল বিদিশা দে-র রহস্যমৃত্যুতে এখন পরতে-পরতে দানা বাঁধছে রহস্য। এ দিকে মেয়ের মৃত্যুতে পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
সূত্রের খবর, মাত্র দু’বছর আগে মডেলিং জগতে পা রেখেছিলেন বছর একুশের বিদিশা। মেয়ে একদিন নাম উজ্জ্বল করবে এমনই আশা ছিল পরিবারের। তবে হঠাৎ চরম পরিণতি। বিদিশা, অকালেই নিলেন বিদায়।
সাফল্যের শিখরে পৌঁছনোর আগেই মেয়ের এমন মর্মান্তিক পরিণতি মেনে নিতে পারছেন না তাঁর বাড়ির লোকজন। এ দিন, বিদিশার বাড়ির ভিতরের পরিবেশ ছিল বেদনাদায়ক। ঘরের ভিতর তাঁর মা-কে ঘিরে রেখেছেন আত্মীয়স্বজন থেকে সাধারণ মানুষ। মেঝেতে বসেই বুকফাটা কান্নায় ভেঙে পড়লেন কন্যাহারা মা। শুধু বলে যাচ্ছেন, ‘আমি কিছুই চাই না। আমার আর ক্ষিদে নেই। আমি বড় পাপী। কী পাপ করেছি আমি যে আমার মেয়েটা এতবড় শাস্তি দিল আমায়। আমার জলজ্যান্ত মেয়েটা যার জন্য চলে গেল তাঁর যেন শাস্তি হয়। এইরকম চটজলদি সিদ্ধান্ত নেওয়ার মেয়ে নয় ও…।’
তাকানো যাচ্ছে না বিদিশার বাবার দিকেও। বিশ্বনাথ দে মজুমদার বলেন, ‘সিরিয়ালে অভিনয় করার জন্য সুযোগ এসেছিল ওর। কিন্তু পেমেন্ট সংক্রান্ত বিষয়ের জন্য চুক্তি পত্রে সই করেনি ও। কিন্তু এর জন্য মানসিক অবসাদে কখনোই দেখিনি আমরা।’ পাশাপাশি বিদিশা, যে কঠিন রোগে আক্রান্ত ছিল সেই কথাও সম্পূর্ণ অস্বীকার করলেন তাঁর বাবা।
এক প্রতিবেশী বলেন, ‘বিদিশার মা আমায় রাত্রিবেলা কাঁদতে-কাঁদতে ফোন করে বলেন আমার মেয়ে আর নেই। এরপর গোটা বিষয়টি খবরে জানতে পারলাম।’ বিদিশার বাবার এক সহকর্মী বলেন, ‘বিদিশার বাবা আমার সহকর্মী। ওদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আগে থেকে। তবে কী ঘটনা ঘটেছে তা বলতে পারব না। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষ। ওকে ছোট থেকে বড় হতে দেখেছি। তাই আমরা চাই যে বা যাঁরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাঁর যেন শাস্তি হয়।’
বস্তুত, বুধবার নাগের বাজার এলাকার একটি আবাসন থেকে উদ্ধার হয়েছে বিদিশা দে মজুমদার নামে এক অভিনেত্রী তথা মডেলের ঝুলন্ত দেহ। বিদিশা দে মজুমদার নামে ওই তরুণী মূলত মডেল হিসেবেই পরিচিত ছিলেন এলাকায়। বেশ কিছু মডেলিং-এর কাজও করেছেন তিনি। তাঁর ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রাম জুড়ে রয়েছে সে সব ছবি। তবে ব্যক্তিগত জীবনে কোনও সমস্যা ছিল কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয় পুলিশের কাছে। বুধবার বিকেলে বেশ কিছুক্ষণ ডাকাডাকির পর বিদিশার সাড়া না পাওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারাই এ দিন পুলিশকে খবর দেন। এরপর পুলিশ এসে দরজা ভেঙে বিদিশাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়। ইতিমধ্যেই বিদিশার দেহ ময়নাতদন্তের জন্য আর জি কর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে মৃত্যুর কারণ অনেকটা স্পষ্ট হবে বলে মনে করা হচ্ছে।