‘জ্যোতিবাবুর ছবিতে যখন মালা দিচ্ছিলাম…’ নস্ট্যালজিক মদনের মুখে হাসি, চোখ ‘ঝাপসা’
Madan Mitra: তৃণমূল নেতা (Madan Mitra) যে 'পলিটিক্য়াল ভুল'-এর কথা স্মরণ করালেন, সেই 'ভুলটি' যথাযথ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
উত্তর ২৪ পরগনা: বামশূন্য বিধানসভা। সেই বিধানসভা যেখানে টানা ২৩ বছর মুখ্যমন্ত্রীর পদে থেকে দায়িত্ব সামলেছেন জ্যোতি বসু। বঙ্গ রাজনীতিতে প্রথম বোধহয় বামশূন্য বিধানসভায় রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্য়োতি বসুর ১০৭ তম জন্মদিন পালিত হল। বিধানসভায় জ্যোতিবাবুর এই জন্মদিন পালন করতে গিয়েই নস্ট্যালজিক হয়ে পড়লেন কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র (Madan Mitra)।
সম্প্রতি, সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে পেট্রোপণ্য। তারই প্রতিবাদে কামারহাটির রাস্তায় বৃহস্পতিবার প্রতিবাদে নামেন মদন মিত্র। প্রতিবাদ মঞ্চ থেকে বলেন, “আজ যখন বিধানসভায় প্গিয়ে জ্যোতিবাবুর ছবি মালা দিচ্ছিলাম, অদ্ভুত লাগছিল। সেইসব সময় নিজের চোখের সামনে জ্বলজ্বল করছিল। ঝাপসা হয়ে উঠছিল দুই চোখ। যে বামেদের সরকার চৌত্রিশ বছর বাংলা শাসন করল আজ তাঁদেরই নেতাকে গলায় মালা দেওয়ার জন্য বিধানসভায় একটাও মুখ নেই! এদিনও দেখতে হবে আমি ভাবিনি কখনও। জ্যোতিবাবুর নামটা শুনলেই যে অসীম প্রজ্ঞার ছবিটা সামনে আসে তা মুখে বলে বোঝানো যাবে না। যে মানুষটা টানা তেইশ বছর একা হাতে দল রাজ্য় সব সামলে গেল তাঁরই দল আজ নিশ্চিহ্ন। শুধুমাত্র একটা পলিটিক্যাল ভুলের জন্য গোটা দলটাকেই আর দেখা গেল না। এর চেয়ে বড় দুঃখ আর কী আছে।”
এখানেই থামেননি তৃণমূল নেতা (Madan Mitra)। বিরোধী শিবির বিজেপিকে তোপ দেগে মদন বলেন, ” ঠিক যেভাবে সিপিএম আজ নিশ্চিহ্ন ঠিক সেইভাবে একদিন বিজেপিও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। এমন নিকৃষ্ট দল আমি আগে দেখেনি। সিপিএমের কথা ভাবলে সত্যিই খারাপ লাগে। তবে, বিরোধী দল হিসেবে মোদী-শাহ নিশ্চিহ্ন হলে খারাপ লাগবে না।”
কার্যত, একুশের নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে বামেদের। গোটা রাজ্যে একটিও আসন পায়নি বাম-কংগ্রেস। বরং, তাদের শরিক জোট আইএসএফ ভাঙড়ে একটি আসন লাভ করে। কার্যত বামশূন্য বিধানসভায় এদিন তৃণমূল নেতা বিধায়করাই জ্যোতি বসুর ছবিতে মাল্যদান করেন। সংযুক্ত মোর্চার তরফে ছিলেন ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী। জ্যোতি বসুর মন্ত্রিসভার সদস্য পরেশ অধিকারী ও বঙ্কিম ঘোষও এদিন উপস্থিত ছিলেন, তবে তাঁরা এখন ঘর বদলে তৃণমূলে। জ্যোতি বসুর জন্মদিনে তাঁর তৈলচিত্রে মাল্যদান করেন পরেশ, বঙ্কিমও। বিধানসভায় অনুপস্থিত থাকলেও, সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের ‘প্রবাদপুরুষ’-কে স্মরণ করেছে বামফ্রন্ট নেতৃত্ব। জেলায় জেলায় পালিত হয়েছে নানা কর্মসূচি।
সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের ভরাডুবির পর কার্যত বিস্ময় প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছিল মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। ৩৪ বছরের লাল দূর্গে ফাটল ধরিয়েছিলেন খোদ মমতাই। একুশের নির্বাচনে বামেদের এহেন পরাজয় মেনে নিতে পারেননি মমতা। বলেছিলেন, বিধানসভায় একেবারে শূন্য হয়ে যাবেন বামেরা, তা কখনও ভাবেননি তিনি। সপ্তদশ বিধানসভায় বামেরা একেবারে শূন্য হয়ে গিয়েছে। তথাকথিত বামেদের ‘এলিটিজম’-এর তকমা ভেঙে গুরুগম্ভীর পর্যালোচনার শিকড় উপড়ে একঝাঁক নবীনদের সামনে এনেছিল বাম শিবির। ভোটের প্রচারে জেনারেশন-ওয়াইকেই মূলমন্ত্র করা হয়েছিল। তবুও সাড়া পায়নি কাস্তে-হাতুড়ি। গলদটা কোথায় তা খুঁজতে চুলচেরা বিশ্লেষণে নেমেছেন বাম নেতৃত্ব।
তৃণমূল নেতা (Madan Mitra) যে ‘পলিটিক্য়াল ভুল’-এর কথা স্মরণ করালেন, সেই ‘ভুলটি’ যথাযথ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। বামশিবিরের অন্তর্দ্বন্দ্ব ছাড়াও জোটের অপরিণামদর্শীতা কার্যত ভরসা দিতে পারেনি আমজনতাকে। বরং, বারবার স্পষ্ট হয়ে উঠেছে জোটের জট। জ্যোতি বসুর জমানায় বেশ কয়েকটি ঘটনা কার্যত এখনও বাম শিবিরকে সমালোচনার মুখে ফেলতে বাধ্য় করে। ১৯৭৯ সালের মরিচঝাঁপি হত্যাকাণ্ড, ঠিক তার তিন বছরের মাথায় ১৯৮২ সালের ৩০ এপ্রিল বিজনসেতু হত্যাকাণ্ড, প্রায় একদশক পর ১৯৯৩ সালে ২১ জুলাই মহাকরণ অভিযানে পুলিশের গুলি চালানো। মহাকরণ অভিযানে তৎকালীন কংগ্রেস নেত্রী ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরই নেতৃত্বে ছিল ২১ জুলাইয়ের অভিযান।
বাম শাসন পতনের শেষ পেরেকটি পোঁতা হয় সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময়ে। ততদিনে অবশ্য, মুখ্যমন্ত্রীর পদে আসীন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। পাশাপাশি, বিরোধী হিসেবে তৈরি হচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১১ সালে ‘পরিবর্তনের ডাক’ দিয়ে বঙ্গ মসনদে ক্ষমতায় আসেন মমতা। তারপরে বঙ্গে তৃণমূলের বিরোধী শিবির হয়ে থেকে গিয়েছিল বাম কংগ্রেস। সেই বাম-কংগ্রেস আজ নিশ্চিহ্ন বিধানসভায় যা কার্যত নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
আরও পড়ুন: অধীরের গড়েই ‘দুর্দিন’ কংগ্রেসের, মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদে সদস্যপদ বাতিল ২ তৃণমূল প্রাক্তনীর