আসানসোলে বিজেপি-ভাঙন, জেলা সম্পাদক সহ ৩৮ নেতা যোগ দিলেন তৃণমূলে
BJP -ত্যাগী এই নেতাদের অভিযোগ, দলীয় নীতি, হিন্দিভাষী নেতাদের বড় পদ বা টিকিট দেওয়া হয়নি। ভোটে টিকিট দেওয়া হয়েছে ক্রিমিনাল ও দুর্নীতীগ্রস্তদের।
আসানসোল: এবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র গড়ে ভাঙন ধরাল তৃণমূল (TMC)। বিজেপি (BJP)-র জেলা সম্পাদক, জেলা কোর কমিটির সদস্য, জেলা ইন্টেলেকচোয়াল কনভেনর-সহ কিষাণমোর্চা, ওবিসি মোর্চা, যুব মোর্চার জেলা-ব্লক ও মণ্ডলের মোট ৩৮ পদস্থ নেতা যোগ এদিন ঘাসফুলের পতাকা তুলে নেন।
রবিবার মন্ত্রী মলয় ঘটকের হাত ধরে এই নেতৃত্বের সঙ্গে প্রায় হাজার দুয়েক বিজেপি সদস্য তৃণমূলের যোগদান করেন। দলে হিন্দিভাষী নেতাদের অসম্মান করা, দুর্নীতি ও সাংসদ বাবুলের ব্যর্থতা নিয়ে তোপ দেগে ২০ বছর ধরে বিজেপি করে আসা সক্রিয় নেতারা গেরুয়া শিবির ছাড়েন এই নেতারা। আসানসোলের রবীন্দ্রভবনে এই যোগদান মেলা অনুষ্ঠানটি হয়। এদিকে জেলা বিজেপির পক্ষে বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালের (Agnimitra Paul) দাবি, এতজন নেতা যাননি। ভুয়ো দাবি করছে তৃণমূল।
বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের বিরাট জয়। আর তারপর থেকেই রাজ্য জুড়ে চলছে আরও একপ্রস্ত রাজনৈতিক পালাবদল। কিন্তু নির্বাচনের আগে হোক বা পরে, আসানসোলে কখনওই সে অর্থে বড় থাবা বসাতে পারেনি রাজ্যের শাসক দল। বরং আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি ভোটের যোগ দিয়েছেন গেরুয়া শিবিরে। কিন্তু এবার আসানসোলে বিজেপির সংগঠনে বড় থাবা বসালো তৃণমূল।
বিজেপির জেলা সম্পাদক ও সংঘ পরিবারের সদস্য মদন মোহন চৌবে, জেলা ইন্টেলাকচুয়াল কনভেনর ডাক্তার দেবাশিষ সরকার, জামুড়িয়া কনভেনর সুজিত পাল সহ রানিগঞ্জ, আসানসোলের ব্লক মণ্ডলের দায়িত্বে থাকা কনভেনর ও মণ্ডল সভাপতিরা ঘটা করে বিজেপি ছাড়লেন। বিজেপি নেতাদের এই সদলবলে তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় বাবুল সুপ্রিয়র সংসদীয় এলাকায় বিরাট ক্ষতির মুখে পড়ল গেরুয়া শিবির। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
কিন্তু কেন দলবদল? মদনমোহনের বিস্ফোরক মন্তব্য, “শুধু হোটেলে আর বোতলে এবারের নির্বাচন পরিচালনা করেছে বিজেপি।” দলীয় নীতি, হিন্দিভাষী নেতাদের বড় পদ বা টিকিট দেওয়া হয়নি। ভোটে টিকিট দেওয়া হয়েছে ক্রিমিনাল ও দুর্নীতীগ্রস্তদের। এমনটাই দাবি তাঁর।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে আসানসোল উত্তর কেন্দ্র থেকে বিজেপি-র প্রার্থী হয়েছিলেন মদনমোহন চৌবে। মলয় ঘটকের বিরুদ্ধে তিনি লড়াই করেছিলেন। সেই মলয় ঘটকের উপস্থিতিতে তৃণমূলে যোগ দিলেন তিনি।
অন্যদিকে ডাক্তার দেবাশিস সরকার ইন্টালেকচুয়াল জেলা কনভেনরের পাশাপাশি সংঘ পরিবারের জেলা সহ-সম্পর্ক প্রমুখের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর অভিযোগ, বিজেপিতে আর কোনও নীতি আদর্শ নেই। সাংসদেরও দেখা নেই। সামান্য রাস্তা ড্রেন কর্পোরেশনের কাজ, কিন্তু সেই কাজই সাত বছর ধরে করেছেন বাবুল সুপ্রিয়।
আসানসোলের শিল্প কারখানাগুলি বন্ধ হয়ে গেল তাঁরই সময়ে। মানুষকে জবাব দিতে পারছিলেন না। তাই এবার থেকে তৃণমূলে যোগদান করেছেন। মন্ত্রী মলয় ঘটক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি হিন্দিভাষীদের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরেন তিনি।
আরও পড়ুন: ‘নীতি-চাণক্য’! নদিয়ায় ‘ঝাঁকের কই’ ঘাসফুল জেরবার গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে
এ নিয়ে জেলা বিজেপির পক্ষে বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, যে কুৎসা এঁরা করছেন তা একেবারেই মিথ্যা। বিজেপির ৩৮ জন পদের নেতাদের যে নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তা ভুল বলে দাবি তাঁর। পাশাপাশি তিনি এও বলেন, মাত্র দু’ চারজন বিজেপি থেকে তৃণমূলে গিয়েছেন। যাঁদের নাম দেওয়া হয়েছে তাঁরা অনেকেই এখনও বিজেপিতেই আছেন এবং এই মূহূর্তে বিজেপির সেন্ট্রাল পার্টি অফিসে উপস্থিত রয়েছেন বলে প্রতিক্রিয়া বিজেপি বিধায়কের।