আসানসোল: দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) বনাম বাবুল সুপ্রিয় (Babul Supriy0)। একজন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি, অন্যজন বিজেপির ছেড়ে হালে যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। তার পর দু’জনই একে অপরকে নিশানা করে একের পর এক বাক্যবাণে বিদ্ধ করেছেন। সাংসদ পদ ছাড়ার পর প্রথমবার আসানসোলে এসে বাবুল তাঁর মূল নিশানা হিসাবে বেছে নিলেন সেই দিলীপকেই। তাঁকে উদ্দেশ্য করে দিলীপ ঘোষের ‘সর্বহারা’ মন্তব্যের জবাবে খাপ্পা বাবুল বললেন, উনি ‘আহাম্মক’।
তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক ঝালিয়ে নিতে বিজেপি দল ও সাংসদ পদ ছাড়ার পর এই প্রথমবার আসানসোলে হাজির হলেন বাবুল। জানালেন, আসানসোল তাঁর কাছে ‘সর্বোত্তম ও স্পেশাল’। আসানসোলের মানুষ তাঁর কাছে ভালবাসার। কিন্তু গত সাত বছরে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে অম্ল মধুর সম্পর্ক তৈরি হয়েছে প্রাক্তন সাংসদ মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র। সেই সম্পর্ক মধুর করতেই দল ছাড়ার পর এই প্রথমবার ছুটে এলেন আসানসোলে। আর সেখান থেকেই জবাব দিলেন দিলীপ ঘোষের কটাক্ষের।
বাবুলের তির্যক মন্তব্য, “দিলীপ ঘোষ বাঙালি মননের বিনোদন ফ্যাক্টার। আহাম্মকদের নিয়ে আমি বিশেষ কিছু বলব না। ওঁনার মজার বাণী শোনার জন্য কাগজে জায়গা রাখা হয়। উনি আনন্দেই আছেন। হাফপ্যান্ট পরছেন। ব্যায়াম করছেন। ঠিকই আছে। বাংলায় এখন অজন্তা সার্কাস দেখতে পাওয়া যায় না। উনি সেই সার্কাসের জায়গটাই নিয়েছেন।”
বাবুল আরও যোগ করেন, “আমি দল ছাড়াতে তথাগত রায় আমার সম্পর্কে অনেক কটু কথা বলেছেন। সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু বঙ্গ বিজেপি নিয়ে তথাগতবাবু যা বলেছেন তা ১২০ শতাংশ সত্য”। তার পর চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার ভঙ্গিতে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, “পরেরবার বিজেপি সাংসদরা আর কটা সিট ধরে রাখতে পারবে তা আপনারাই দেখবেন। আসানসোলের মানুষ সাংসদ তহবিল থেকে বঞ্চিত হবেন না। কারণ, আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত কাজের অনুমোদন আমার করে দেওয়া আছে। আমি সাংসদ না হলেও সেই তহবিল পেতে অসুবিধা হবে না।”
বিজেপির দু’ বারের সাংসদ থেকে অধুনা তৃণমূল নেতা দাবি করেন, আগামী দিনে আসানসোলের সাংসদ হবেন তৃণমূলের কোনও প্রতিনিধি। আর যিনি সাংসদ হবেন তিনি প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ২ কোটি টাকা পাবেন। কারণ, সেই তহবিল এক বছরের জন্য দেওয়া হবে। তার আগেই উপনির্বাচন হয়ে নতুন সাংসদ আসবেন।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবারই বাবুলকে আক্রমণ করে দিলীপ বলেছিলেন, ‘সিপিএম সর্বহারা নয়, সর্বহারা কে জানেন? বাবুল সুপ্রিয়’। তিনি এও যোগ করেন, “বাংলায় বেইমানের সংখ্যা বাড়ছে। অটল বিহারী বাজপেয়ীজি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর ভরসা করেছিলেন, তিনি বেইমানি করেছেন। নরেন্দ্র মোদী বাবুল সুপ্রিয়র ওপর ভরসা করেছিলেন, তিনিও বেইমানিই করলেন। আজকে কোথায় দাঁড়িয়ে বাবুল সুপ্রিয়? ওঁর গাওয়া গান আজকে ওঁকেই শুনতে হচ্ছে ত্রিপুরাতে!”
এদিকে বাবুলের এদিনকার কটাক্ষের প্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়া দিয়ছেন বিজেপির রাঢ়বঙ্গ জেলার কো-অবজার্ভার নির্মল কর্মকার। তিনিই প্রথমবার বাবুল সুপ্রিয়ের সাংসদ নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। তাঁর কটাক্ষ, “আজ যে রাজনীতিক বাবুল সুপ্রিয়র যে পরিচিতি, তাতে বড় কৃতিত্ব নির্মল কর্মকার ও তার টিমের। পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে বড় সার্কাস যদি কেউ দেখান, তাঁর নাম বাবুল সুপ্রিয়। ওঁর চেয়ে বড় কোনও সার্কাসের খেলোয়াড় হয় না। ওঁ ব্যক্তিগত জীবন থেকে রাজনৈতিক জীবন, সব জায়গায় সার্কাসই করে গিয়েছেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আগামিদিনে উনি সার্কাসই করবেন।”
আরও পড়ুন: Dilip Ghosh: ‘তৃণমূল এখন বৃদ্ধাবাস, রিজেক্টেড নেতাদের পুনর্বাসনের জায়গা’, কটাক্ষ দিলীপের’