
আসানসোল: শেষবার তাঁকে দেখা গিয়েছিল শুভেন্দু অধিকারীর পোস্ট করা একটি ভিডিয়োয়। জনসাধারণের টাকা ফেরত না দিতে পেরে ক্ষমা চাইছিলেন তিনি। গলার সুর ছিল নরম। তারপর দেখা গেল, ঝাড়খণ্ডের দিকে পালানোর পথে। শনিবার আসানসোলের চিটফান্ড কেলেঙ্কারির ঘটনায় মূল অভিযুক্ত তহসিন আহমেদকে গ্রেফতার করল আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা আর্থিক তছরুপের অভিযোগ। যা নিয়ে চড়েছে রাজনীতিও।
পুলিশি সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলা ছেড়ে ঝাড়খণ্ডের দিকে পালিয়ে যাচ্ছিলেন তহসিন আহমেদ। সেই সময়ই লোকেশন ট্র্য়াক করে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের চন্দ্রচূড় মন্দিরের মোড়ের কাছ থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এদিন তহসিনকে গ্রেফতারের পর তাঁর কাছ থেকে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকার সোনা উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে কি আন্তঃরাজ্য হয়ে একেবারে দেশের বাইরে পালাতে চেয়েছিলেন তহসিন? এই উত্তর আপাতত অধরা। রবিবার অভিযুক্ত তোলা হবে আদালতে।
গত বছর পাঁচেক ধরে এই ব্যবসা করতেন তহসিন। মোটা অঙ্কের সুদের নামে সাধারণ মানুষের থেকে বিনিয়োগ তুলতেন তিনি। এই ভাবেই ধীরে ধীরে আসানসোল জুড়ে নিজের প্রসার তৈরি করেছিলেন অভিযুক্ত। অবশ্য কেউ কেউ বলেন, তহসিনের ‘ব্যবসা’ বৃদ্ধির নেপথ্যে ছিল তাঁর রাজনৈতিক পরিচয়। তহসিন আহমেদের বাবা শাকিল আহমেদ তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের রাজ্য কমিটির সদস্য। অর্থাৎ আসানসোলের তাবড় নেতাদের মধ্যেই একজন। সেই নেতার ছেলেই এখন চিটফান্ড কেলেঙ্কারির মূল অভিযুক্ত। তাঁর বিরুদ্ধে প্রায় তিন হাজার লগ্নিকারী টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে।
আসানসোলের তহসিন আহমেদের কীর্তি সর্বপ্রথম জনসম্মুখে নিয়ে আসেন এক অবসরপ্রাপ্ত বিএসএফ জওয়ান। তিনিই প্রথম আসানসোল উত্তর থানায় তাঁর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ওই ‘প্রতারিত’র অভিযোগ, ‘‘প্রথমে ৩ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম। ভাল রিটার্ন পেয়েছিলাম। তারপর ৪১ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করি। কিন্তু আর কোনও সুদ দেয়নি।’ গত বৃহস্পতিবার তহসিনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে বসেছিল অন্য ‘প্রতারিতরাও’। হয়েছিল বাড়ি-অফিস ঘেরাও। পরবর্তীতে উত্তেজনার আগুন এতটাই ছড়িয়ে পড়ে যে জাতীয় সড়ক অবরোধ করতেও দেখা যায় বিক্ষুব্ধ জনতাকে।
এই ঘটনায় প্রথম থেকেই রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। নিজের এক্স হ্যান্ডেলে তহসিনের ক্ষমা চাওয়ার একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে ইডি ও সেবি তদন্তের দাবি জানিয়েছিলেন তিনি। অন্যদিকে, এই সকল অভিযোগ প্রকাশ্য়ে আসতেই তা থেকে গা ঝেড়ে ফেলে তৃণমূল। আসানসোল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সৈয়দ মাহফুজুল হাসান বলেন, ‘শাকিল আহমেদের সঙ্গে আমাদের কোনও যোগাযোগ নেই। উনি আমাদের পার্টির সহ-সভাপতি ছিলেন, কিন্তু এখন কোনও পদে নেই।’