CBI arrested Burdwan Municipal Chairperson in Chit Fund Case: চিটফান্ড মামলায় আগেই প্রণবকে ডেকে জেরা করেছিল ইডি, ৩ দিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ আদালতের

CBI: আসানসোলে জেলা আদালতে মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট তরুণ কুমার মণ্ডলের এজলাসে মামলা শুনানি শুরু হয়। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে এদিন সওয়াল করতে কলকাতা থেকে এসেছিলেন আইনজীবী দীপক পড়িয়া। পুরপ্রশাসকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শেখর কুণ্ডু।

CBI arrested Burdwan Municipal Chairperson in Chit Fund Case: চিটফান্ড মামলায় আগেই প্রণবকে ডেকে জেরা করেছিল ইডি, ৩ দিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ আদালতের
সিবিআইয়ের হেফাজতে প্রণব, নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 10, 2021 | 11:22 PM

পশ্চিম বর্ধমান: এক-দুই হাজার নয়। লাখও নয়। একেবারে  কোটি টাকার দুর্নীতি! প্রায় ৩ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকার দুর্নীতির অভিযোগে সিবিআইয়ের জালে বর্ধমানের পুরপ্রশাসক প্রণব চট্টোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার কলকাতায় সিবিআই (CBI) গ্রেফতার করে প্রণবাবুকে। শুক্রবার আসানসোল জেলা  আদালতে তোলা হয় প্রণববাবুকে। আদালত সূত্রে খবর, আপাতত তিনদিনের জন্য সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

এদিন, আসানসোলে জেলা আদালতে মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট তরুণ কুমার মণ্ডলের এজলাসে মামলা শুনানি শুরু হয়। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে এদিন সওয়াল করতে কলকাতা থেকে এসেছিলেন আইনজীবী দীপক পড়িয়া। পুরপ্রশাসকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শেখর কুণ্ডু। আদালত থেকে বেরনোর পর যদিও সংবাদমাধ্যমকে প্রণববাবু এদিন বলেন, “২০১০ সালের মামলা। আর ২০২১ সালে আমায় গ্রেফতার করা  হল। এ বার বাকিটা সকলে বুঝে নিন।” কার্যত, বর্ধমানরে পুরপ্রশাসক প্রকারান্তরে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি কোনওভাবেই চিটফান্ড মামলার সঙ্গে যুক্ত নন।

এদিন আদালতে দীর্ঘ সওয়াল জবাবের পর বিচারক নির্দেশ দেন আপাতত তিনদিনের জন্য সিবিআই হেফাজতে থাকবেন প্রণব চট্টোপাধ্যায়। আগামী সোমবার আবার প্রণববাবুকে আদালতে হাজিরা দিতে হবে।  তবে সিবিআইয়ের তরফে আদালতে বলা হয়, এর মধ্যে কোন ওয়ার্কিং ডে নেই। জেরা করার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে। কিন্তু সিবিআইয়ের আইনজীবীর এই যুক্তি আদালতে গ্রাহ্য হয়নি।

সূত্রের খবর,  প্রণব চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির ৪০৬, ৪০৯, ৪১৯, ৪২০, ৪৬৮ ও ১২০/বি নম্বর ধারায় মামলা হয়েছে। প্রায় ৪ কোটি টাকার কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত প্রণববাবু অভিযোগ এমনটাই।

এদিন আসানসোল আদালতে বিচারকের সামনে সিবিআইয়ের আইনজীবী দীপক পড়িয়া বলেন,  “বর্ধমানে নিজেদের বাড়িতে এই চিটফান্ডের অফিস করতে ভাড়া দিয়েছিলেন প্রণব চট্টোপাধ্যায়। বর্ধমান আদালতের আইনজীবী প্রণব চট্টোপাধ্যায় ওই সংস্থার লিগ্যাল এ্যাডভাইজার বা আইনী পরামর্শদাতা ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে এই চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে থাকার একাধিক প্রমাণ রয়েছে। লক্ষ লক্ষ টাকা তাঁর অ্যাকাউন্টে গিয়েছে ও লেনদেন হয়েছে। শুধু তাই নয়, তাঁর স্ত্রী রেখা চট্টোপাধ্যায়ও এতে জড়িত রয়েছেন। বারবার জেরা করা হলেও, তিনি প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাচ্ছিলেন। তাই প্রণববাবুকে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করা হয়েছে।

পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে প্রণববাবুর আইনজীবী শেখর কুণ্ডু বলেন,  “প্রথম চার্জশিটে আমার মক্কেলের নাম নেই। তা সত্বেও তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে যতবার জেরার জন্য ডাকা হয়েছে, তিনি গিয়েছেন। এছাড়াও তিনি বর্ধমান পুরসভার পুরপ্রশাসক পদে রয়েছেন। তাঁর এই দায়িত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও তিনি একজন আইনজীবী। তাই তাকে জামিন দেওয়া হোক।” শেখরবাবুর জবাবে সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, “পরে এই মামলায় সাপ্লিমেন্টারী বা অতিরিক্ত চার্জশিট দেওয়া হবে।”

প্রসঙ্গত, সিবিআই ও পুলিশ সূত্রে খবর, সানমার্গ নামে একটি বেআইনি অর্থলগ্নিকারী সংস্থার থেকে প্রায় পৌনে চার কোটি টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে প্রণববাবুর বিরুদ্ধে। সানমার্গ চিটফান্ডের তথ্যতালাশে আগেই তদন্ত শুরু করেছিল সিবিআই। তাতেই প্রণববাবুর নাম উঠে আসে। অভিযোগ ওঠে, মোটা টাকার বিনিময়ে সানমার্গে লগ্নিকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি ও অন্যান্য় নানাভাবে সাহায্য করেছিলেন প্রণব।

২০১৮ সালেই চিটফান্ডের কেলেঙ্কারিতে তদন্ত শুরু করে সিবিআই। অতি সম্প্রতি তারা এই মামলায় একটি চার্জশিট দেয়। তাতে চন্দ্রশেখর সাভার ও সৌম্যদ্বীপ ভৌমিকের নাম ছিল। বৃহস্পতিবার সকালে এই মামলায় জেরার জন্য প্রণববাবুকে কলকাতায় ডেকে পাঠিয়েছিল অন্য একটি কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডি। সেই জেরা শেষে বিকেলে বেরিয়ে আসতেই সিবিআই তাঁকে জেরা শুরু করে। শেষ পর্যন্ত  বৃহস্পতিবার রাতে সিবিআই গ্রেফতার করে।

শুক্রবারই বর্ধমানে, প্রণববাবুর বাড়িতে হানা দেয় সিবিআইয়ের বিশেষ প্রতিনিধি দল। অন্যদিকে, বর্ধমানেরই ঢলদীঘির একটি বহুতল আবাসনে তদন্তে যান কেন্দ্রীয় গোয়েন্দার প্রতিনিধিরা। সূত্রের খবর, ওই বহুতল আবাসনেই ছিল সানমার্গের অফিস। সেই অফিসের ভাড়া দিয়েছিলেন খোদ পুরপ্রশাসক।

ঘটনায়, প্রণববাবুর স্ত্রী রেখা চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “সিবিআই এসেছিল। বেশ কিছু প্রশ্ন করেছে। প্রায় আধঘণ্টা ছিল। সানমার্গের তরফে বেশ কয়েকজন আমাদেরই অন্য একটি ফ্ল্যাট  ভাড়া নেয়। আমরা জানতাম ওরা টেক্সটাইলের কাজ করে। এরপর যখন রিয়েল এস্টেটের কাজ শুরু করল ততদিনে ওরা ওই ফ্ল্যাট ছেড়ে দিয়েছে। এর বেশি আমরা আর কিছুই জানি না।”

মাত্র মাসখানেক আগেই পাঁচ সদস্যের কমিটি নিয়ে গঠিত হয় বর্ধমান পুরসভার নতুন প্রশাসক মণ্ডলী। নতুন প্রশাসক হন বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা প্রণব চট্টোপাধ্যায়। বর্ধমান পুরসভার পুরপতি হিসেবে দীর্ঘসময় দায়িত্বে ছিলেন তিনি। প্রণব পুরপ্রশাসকের দায়িত্ব পাওয়ার পর ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় তদন্তের জন্য একাধিকবার পুরসভায় এসেছিলেন সিবিআইয়ের বিশেষ তদন্তকারী দল। সেইসময়, প্রণববাবুকে জিজ্ঞাসাবাদও করেন তাঁরা। যদিও, সেই ঘটনায় প্রণববাবু স্পষ্টই নিজের যুক্ত থাকার কথা অস্বীকার করেছিলেন।

আরও পড়ুন: Mamata Banerjee Nepal Visit: মুখ্যমন্ত্রীর নেপাল সফরেও ‘না’ বিদেশমন্ত্রকের! দেওয়া হল না ছাড়পত্র