
দুর্গাপুর: “বাংলার মানুষ রাষ্ট্রপতি শাসন চাইছেন।” দুর্গাপুর গণধর্ষণকাণ্ডে নির্যাতিতার সঙ্গে দেখা করার পর মন্তব্য রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের। মঙ্গলবার দুপুরে সাংবাদিক বৈঠকে তাঁর বক্তব্য, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাংবিধানিক ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু সর্বসমক্ষে তিনি এ বিষয়ে কিছু বলবেন না। দুর্গাপুরের এই ঘটনার পর যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে বলেও স্পষ্ট করেছেন তিনি। দুর্গাপুরে গিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করলেন রাজ্যপাল।
রাজ্যের শাসকদলের তরফ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে. রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়েই এই ধরনের মন্তব্য করছেন রাজ্যপাল। রাজ্যপালের ইঙ্গিতে এদিন স্পষ্ট, রাজ্যে যেভাবে পর পর ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে, একাধিক জায়গায় অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ উঠছে, সেখানে দাঁড়িয়ে বাংলার আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বাংলার দুয়ারে বিধানসভা নির্বাচন। রাজ্যে এখন নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকরা রয়েছেন। SIR প্রস্তুতি তুঙ্গে। এই আবহে দাঁড়িয়ে রাজ্যপালের এহেন মন্তব্য যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে অভিজ্ঞ মহল।
রাজ্যপালের এই মন্তব্য নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী বলেন, “রাজ্যপাল অত্যন্ত অভিজ্ঞ, প্রবীণ ব্যক্তিত্ব। আমার মনে হয় বাংলার মানুষ রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করতে দেবেন না। আর পার্লামেন্টে তো দুই তৃতীয়াংশ মেজারিটি বিজেপির নেই।”
অন্যদিকে, বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বলেন, “সাংবিধানিক প্রধান, তিনি তাঁর বক্তব্য রেখেছেন, তা নিয়ে যাঁদের চর্চা করার বিষয়, তাঁরাই চর্চা করবেন। তবে বাংলায় ভেঙে পড়া আইনশৃঙ্খলা, প্রশাসনিক অবস্থা, বাংলার মানুষের সামনে বর্তমান সরকার সম্পর্কে একটা প্রশ্ন চিহ্ন ঝুলিয়ে দিয়েছে। তারই প্রতিফলন সাংবিধানিক প্রধানের মুখ দিয়ে হয়েছে।”
সোমবার দুপুর আড়াইটার সময় তিনি হাওড়া স্টেশন থেকে গাড়িতে চেপে দুর্গাপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। দুর্গাপুরের যে বেসরকারি হাসপাতালে নির্যাতিতা চিকিরসাধীন, সেখানে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন তিনি। নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও দেখা করেন। দুর্গাপুর যাওয়ার আগেই হাওড়ায় দাঁড়িয়ে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানিয়েছিলেন, আগে তিনি নির্যাতিতার সঙ্গে কথা বলে পুরো বিষয়টি জেনে মন্তব্য করবেন। নির্যাতিতার সঙ্গে কথা বলে বাংলা রাষ্ট্রপতি জারি সম্পর্কে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ইঙ্গিত দেন।
এর আগেও সন্দেশখালির ঘটনার সময়ে দিল্লি গিয়ে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন রাজ্যপাল। কিন্তু এবার অকুস্থলে দাঁড়িয়ে তাঁর এহেন মন্তব্য যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ। অন্যদিকে আবার সিপিএমের বক্তব্য, রাষ্ট্রপতি শাসন জারির কথা বলে প্রকারন্তরে তিনি আদতে তৃণমূলকেই সুবিধা পাইয়ে দেবেন। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “এই পরিস্থিতিতে বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারির কথা বলে রাজ্যপাল আসলে প্রকারন্তরে তৃণমূলকেই অক্সিজেন জোগাচ্ছেন।”