
আসানসোল ও ঢাকা: একজন বাংলাদেশের জাতীয় কবি। যাঁর কবিতা, গানে সম্প্রীতি বার্তা। অন্যজন ছিলেন বাংলাদেশের ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক। যিনি নিজের বক্তব্যে ভারতের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াতেই। প্রথমজন বাংলাদেশের জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম। আর দ্বিতীয়জন ওসমান হাদি। প্রথমজনের কবরের পাশেই সমাধি দেওয়া হয়েছে দ্বিতীয়জনকে। যা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। এই নিয়ে এবার মুখ খুললেন কবির পরিবার। ক্ষোভ প্রকাশ করলেন কবির নাতনি সোনালি কাজী।
৫০ বছর আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার সেখানেই সমাধিস্থ করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে। তাই নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। এ বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে নজরুলের পরিবারও। তারা নিশানা করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে। পশ্চিম বর্ধমানের চুরুলিয়ায় কবির জন্মভূমিতে বসে তাঁর পরিবারের সদস্যদের আশঙ্কা, এরপর বাংলাদেশের জাতীয় কবির সমাধির উপর আক্রমণ হবে না তো!
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন ও মর্মাহত কাজী নজরুল ইসলামের গ্রাম চুরুলিয়া ও কাজী পরিবার। কবির ভিটেমাটি থেকে সংগ্রহশালা সব রয়েছে এখানে। এখানেই রয়েছে কবিপত্নী প্রমীলাদেবীর সমাধিস্থল। গ্রামজুড়ে দেওয়ালে দেওয়ালে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আর দেশ প্রেমের বার্তার আঁকিবুকি। কবি এই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বহু স্মৃতি রয়েছে গ্রামে। কবির স্ত্রী প্রমিলা কাজী এই গ্রামেই মারা যান। কাজী নজরুল ইসলাম ও প্রমীলা দেবীর সমাধিস্থল রয়েছে চুরুলিয়াতে। রয়েছে নজরুল অ্যাকাডেমি। রয়েছে নজরুল গবেষণাগার। সেই চুরুলিয়া গ্রামে সারা বছর আনাগোনা লেগে থাকে বাংলাদেশের নজরুল গবেষকদের। কিন্তু বাংলাদেশের এই হিংসার বাতাবরণে এখন আনাগোনা বন্ধ।
নজরুলের সমাধির পাশে হাদিকে সমাধিস্থ করা নিয়ে কবির নাতনি সোনালি কাজীর বক্তব্য, “যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা অনৈতিক। নিয়ম মতো ওই স্থানে বিশেষ কয়েক জনকে সমাধিস্থ করা হয়। বাঙালিদের কাছে এটা চরম দুঃখজনক ঘটনা।” এত জায়গা থাকতে নজরুলের সমাধির পাশে হাদিকে সমাধিস্থ করার সিদ্ধান্তের নেপথ্যে রাজনীতি রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। সোনালি বলেন, ‘‘আমাদের প্রাণের কবি বাংলাদেশে শেষ জীবন কাটিয়েছেন। এত দিন বাংলাদেশে আমরাও ভাল ছিলাম। কিন্তু এখন যা হচ্ছে, আমরা আশঙ্কিত।’’ তাঁর সংযোজন, ওই কবরস্থানে সকলকে সমাধিস্থ করা হয় না। কিন্তু ছায়ানট ভাঙচুর করা, রবীন্দনাথের বই পুড়িয়ে দেওয়া উগ্রবাদীরা হাদিকে সমাধিস্থ করলেন কবির সমাধির পাশে। নজরুল যেখানে সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে গিয়েছেন, জাতের নামে বজ্জাতির কথা বলেছেন, তখন তাঁর সমাধির পাশে এমন এক জনকে সমাধিস্থ করা হল সরকারেরই নির্দেশে। তাঁর আশঙ্কা, “আগামিদিনে হয়তো কবির সমাধিও ওখানে থাকবে না। আমরা ভীষণ মনকষ্টে রয়েছি। আমরা মর্মাহত।’’
১৯৭৬ সালে বিদ্রোহী কবি নজরুলকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয়। সেখানে আততায়ীদের গুলিতে নিহত কট্টরপন্থী নেতাকে কোন যুক্তিতে কবির সমাধির পাশে কবর দেওয়া হয়, মাথায় ঢুকছে না চুরুলিয়ার বাসিন্দাদের। বিদ্রোহী কবি নজরুল চেয়েছিলেন দুই বাংলার সৌহার্দ্য, সম্প্রীতির বাতাবরণ। কিন্ত এখন যা হচ্ছে, তাকে ধিক্কার জানানোর ভাষা নেই। চুরুলিয়াবাসীর স্পষ্ট বক্তব্য, এই বাংলাদেশ দেখতে চাননি নজরুল। আর তাই তিনি লিখেছিলেন ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।’