
দুর্গাপুর ও চন্দননগর: ঘটনার পরেই সাংবাদিক বৈঠক করতে দেখা গিয়েছিল আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের সিপি সুনীল চৌধুরীকে। সুতন্দ্রার মৃত্যুতে যখন ফের একবার জোরাল প্রশ্নের মুখে রাজ্যের নারীদের নিরাপত্তা তখন পুলিশের দাবি ছিল, পানাগড়ে নাকি কোনও ইভটিজিংই হয়নি। সিপি সুনীল চৌধুরী তো সাফ বলেছিলেন, “ইভটিজিংয়ের কোনও ঘটনা এখানে নেই। দুটো গাড়ির ওভাটেকের ফলেই এই ঘটনা।” যদিও পুলিশের সেই দাবি নস্যাৎ করছেন সুতন্দ্রার পরিজনরা। সুতন্দ্রার মা তনুশ্রী চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, রেষারেষির কারণে প্রাণ যায়নি মেয়ের। ইভটিজিং করা হয়েছে। সাদা এসইউভি-র খপ্পরে পড়েছিল সুতন্দ্রার গাড়ি।
প্রসঙ্গত, সুতন্দ্রার সঙ্গীরাও শুরু থেকেই একই দাবি করেছিলেন। তাঁদের সাফ কথা, টার্গেট ছিলেন সুকন্যাই। সুতন্দ্রা যে গাড়িতে ছিলেন সেই গাড়ির চালকও একদিন আগে পানাগড়ে একই দাবি করে। এদিকে ঘটনার পর সাংবাদিক বৈঠকে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের সিপি সুনীল চৌধুরী বলেছিলেন, “বলা হচ্ছে দুষ্কৃতীরা ধাওয়া করেছে, সেটা হয়নি। ভিক্টিমের গাড়ি অন্য গাড়িকে চেইজ করছে। অর্থাৎ মৃত সুতন্দ্রার গাড়ি ওই যুবকদের গাড়ির পিছু নিচ্ছিল।” সে কারণেই পুলিশি তদন্ত নিয়েই বারবার প্রশ্ন উঠতে থাকে।
চন্দননগরের নাড়ুয়া রায় পাড়ায় বাড়ি সুতন্দ্রাদের। বাবা সুকান্ত চট্টোপাধ্যায় ছিলেন রেলের ঠিকাদার। কিন্তু, ৯ মাস হল ক্যানসার কেড়েছে প্রাণ। বর্তমানে সুতন্দ্রাদের চন্দননগরের বাড়িতে রয়েছেন দিদিমা, ঠাকুমা আর মা। মেয়ের অকাল পরিণতিতে শোকে পাথর সকলেই। মঙ্গলবার সন্ধ্যার আগে সুতন্দ্রাদের বাড়ি আসেন চন্দননগর পুলিশের ডিসিপি অলকানন্দা ভাওয়াল, এসিপি সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়, চন্দননগর থানার আইসি শুভেন্দু মুখোপাধ্যায়। পরিবারের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথাও বলেন।
পরিবার সূত্রে খবর, চার সঙ্গীকে নিয়ে রবিবার রাত দশটা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন সুতন্দ্রা। গন্তব্য ছিল গয়া। একটি ছোট গাড়িও ভাড়া করেন। দুর্গাপুরের বুদবুদের কাছে একটি পেট্রল পাম্প থেকে তেল নিয়ে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কে ওঠে গাড়ি। এখানেই ঘটে আসল ঘটনা। অভিযোগ, রাস্তাতেই একটি ছোট সাদা গাড়ি তাঁদের ধাওয়া করে। অশালীন ইঙ্গিতও করা হতে থাকে। ভয়ে গাড়ি নিয়ে কাঁকসার পানাগড়ের দিকে নিয়ে চলে যান সুতন্দ্রার গাড়ির চালক। অভিযোগ, তখন সুতন্দ্রাদের গাড়ির পিছু ছাড়েনি সাদা গাড়িটি। ধাক্কাও মারে। উল্টে যায় সুতন্দ্রাদের গাড়ি। প্রসঙ্গত, এদিনই আবার বর্ধমান থেকে সাদা গাড়ির চালককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাবলু যাদব নামে ওই ব্যক্তিই গাড়ির মালিক বলে জানা যাচ্ছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এখন নতুন কী তথ্য উঠে আসে সেটাই দেখার।