আসানসোল: মাথার উপর খাঁ-খাঁ করছে রোদ। গরমে টেকা দায়। তার মধ্যে বসে রয়েছেন সারি-সারি যুবক। কেন? আদতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু পরে জানা গেল বিক্ষোভের নামে চূড়ান্ত হেনস্থা করা হয়েছে পিএইচইর ইঞ্জিনিয়ারদের। চড়া রোদে বসিয়ে মানসিক ও শারীরিক নিগ্রহ করা হয়েছে। আর গোটা ঘটনায় অভিযোগের তির তৃণমূল পরিচালিত রানিগঞ্জ পঞ্চায়েত সভাপতির বিরুদ্ধে।
শুধু তাই নয়, অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সভাপতি তথা তৃণমূল নেতা বিনোদ নুনিয়ার বিরুদ্ধে থানাতে অভিযোগ দায়ের হল। আর সেই অভিযোগের পরেই রাজ্যের ইঞ্জিনিয়ারদের সংগঠন (সোসাইটি ফর ডেভলপমেন্ট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং আর্কিটেক্টের) তরফে তিনদিন আগে হওয়া ঘটনার প্রতিবাদ করা হয়। শুক্রবার সংগঠনের ডাকে আসানসোলের ইসমাইলের বিবেকানন্দ পল্লীতে পিএইচইর আরসিএফএ ডিভিশন ১ -এর দফতরের সামনে কালো ব্যাজ পরে ও হাতে পোস্টার নিয়ে মৌন প্রতিবাদ করলেন জেলার ইঞ্জিনিয়ার থেকে সাধারণ কর্মীরা।
বস্তুত, গত ৮ মার্চ মঙ্গলবার পিএইচই দফতরের জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার সোমনাথ সরকার রানিগঞ্জে রাজ্য সরকারের জলস্বপ্ন প্রকল্প নিয়ে কথা বলতে বিডিও অফিসে যান। সেখানে তিনি রানিগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিনোদ নুনিয়া সহ আরও কয়েকজনের নেতৃত্বে বিডিও অফিস চত্ত্বরে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন বলে অভিযোগ করে। তার গলায় নাকি জলের খালি বোতলের মালা পড়িয়ে দেওয়া হয়। দীর্ঘ সময় ধরে তাঁকে রোদেও বসিয়ে রাখা হয়।
জানা গিয়েছে, রানিগঞ্জ ব্লকের বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে গ্রামবাসীরা জল পাচ্ছেন না। এই অভিযোগ তুলে সেদিন বিনোদ নুনিয়ার নেতৃত্বে বিডিও অফিস চত্বরে আন্দোলন হয়েছিল। এই ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার পিএইচইর ইঞ্জিনিয়ারদের সংগঠনের পক্ষ থেকে বর্ধমানে সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ারকে ডেপুটেশন দিয়ে বিচার চাওয়া হয়। বলা হয়, কাজ করতে গিয়ে ইঞ্জিনিয়াররা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। এরপর বৃহস্পতিবারই সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার বিষয়টি নিয়ে পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক এস অরুণ প্রসাদকে চিঠি দিয়ে জানান। তারপর এদিন আসানসোলের পিএইচইর এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার বিনোদ নুনিয়ার বিরুদ্ধে রানিগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। একইভাবে ইঞ্জিনিয়ার সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি কলকাতায় নিউ সেক্রেটারিয়েট ভবনে এই ঘটনার প্রতিবাদে দফতরের প্রধান সচিব ও মন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন।
শুক্রবার সংগঠনের পশ্চিম বর্ধমান জেলার সম্পাদক অঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, “কালো ব্যাজ পড়ে মৌনভাবে ওই ইঞ্জিনিয়ারের উপরে যে শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার হয়েছে তার প্রতিবাদ জানালাম। ইঞ্জিনিয়ার থেকে কর্মী সকলেই এতে সামিল হয়েছেন। আমরা চাই এই ধরণের ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে আর না ঘটে ও যারা ঘটিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। যদি তা না হয় তাহলে আগামী দিনে আরও বৃহত্তর আন্দোলনে যাবে আমাদের এই সংগঠন।” অন্যদিকে ঘটনা প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি বিধান উপাধ্যায় বলেন, “আইন-আইনের পথে চলবে। আইনের উর্ধ্বে কেউ নয়। দল ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। বিনোদ নুনিয়াকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।”