
আসানসোল: রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বাড়ি ছেড়ে পালানোর ঘটনা সামনে এসেছে। বহু ভোটারের খোঁজ নেই! বাড়িতে ঝুলছে তালা। সেই ছবিই এবার দেখা গেল নিষিদ্ধপল্লীতে। বাড়ি বাড়ি ঘুরেও কারও সাড়া পেলেন না বিএলও-রা। ২০০২-তে ভোটার হওয়া সত্ত্বেও কোথায় গেলেন তাঁরা? বলতে পারছেন না প্রতিবেশীরাও। আসানসোলের কুলটির লছিপুর ও চবকা এলাকার নিষিদ্ধপল্লীর ঘটনা। প্রশ্ন উঠছে, বাংলাদেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীরাই কি ছিল ওই এলাকার ভোটার?
এলাকায় খোঁজ নেই বহু ভোটারের। ভোটারদের হদিশ পাচ্ছেন না বিএলও-রা। বুথ, পাড়া, বাড়িগুলি এক থাকলেও সেখানে নেই ২০০২-এর সেই ভোটাররা। অভিযোগ, এই ‘নিখোঁজ’ ভোটাররা আসলে অস্তিত্বহীন অথবা বাংলাদেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারী, যাদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হয়। দীর্ঘ সময় ধরে এই ভোটারদের কোনও হদিশ নেই বলে অভিযোগ। অথচ বছরের পর বছর ধরে তাঁদের নাম তালিকায় রয়ে গিয়েছে।
বুথ নম্বর ১১৬-র বিএলও মহম্মদ এজাজ আহমেদ জানান, তাঁর বুথে ৯৯৫ জন ভোটার থাকলেও ৮৪ জনের কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। তিনি ৪-৫ বার ওই বাড়িগুলিতে গিয়েছেন। জানতে পেরেছেন, পুরনো ভাড়াটিয়ারা চলে গিয়েছেন এবং নতুন বাসিন্দারা তাঁদের চেনেন না।
১১৩ নম্বর বুথের বিএলও দেব কুমার জানান, তাঁর এলাকায় ৮১৪ জন ভোটারের মধ্যে প্রায় ৬০-৭০ জনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। রেড লাইট এলাকা হওয়ায় অনেকে ভয়ে বা অন্য কারণে সামনে আসছেন না বলে তাঁর অনুমান। ওই নিষিদ্ধপল্লী এলাকার ১১৪ নম্বর বুথে ভোটার ৭৮৭ জন। কিন্তু খোঁজ নেই ৬০ জনের।
যৌনকর্মীদের সংগঠন দুর্বারের ফিল্ড কো-অর্ডিনেটর রবি ঘোষ জানিয়েছেন, মুর্শিদাবাদ, বনগাঁ বা বীরভূম থেকে আসা অনেক যৌনকর্মী ওই এলাকায় কাজ করলেও তাঁরা নিজের গ্রামের বাড়িতে ভোট দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, তাই এখানে ফর্ম পূরণ করছেন না।
এদিকে, এলাকার বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, এই ভোটাররা আদতে অস্তিত্বহীন। বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, কুলটি বিজেপির শক্ত ঘাঁটি হওয়ায় তৃণমূল কংগ্রেস পরিকল্পনামাফিক ১০-২০ হাজার ভুয়ো ভোটারের নাম তালিকায় ঢুকিয়ে রেখেছে ভোটে জেতার জন্য।
ভুয়ো ভোটারের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূল জেলা সম্পাদক মীর হাসিম বলেন, “যাঁদের পাওয়া যাচ্ছে না, তাঁদের মধ্যে অনেকে মারা গিয়েছেন। এলাকার মেয়েদের বিয়ে হয়ে শ্বশুরবাড়ি চলে গিয়েছেন।“ মৃত বা স্থান পরিবর্তনকারীদের নাম বাদ যাওয়াটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
শাসক দলের মতে, নিষিদ্ধপল্লীর মতো এলাকায় জনসংখ্যার একটি বড় অংশ ‘ফ্লোটিং পপুলেশন’ বা ভাসমান। তাই খোঁজ নেই অনেক ভোটারের। পরিস্থিতি এমন যে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে এলাকায়, যাতে এলাকার বাসিন্দারা বিএলও (BLO)-দের সঙ্গে সহযোগিতা করে ও দ্রুত ফর্ম জমা দেয়।