পশ্চিম বর্ধমান: অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal) আছেন আপন মেজাজেই। বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা তিনি। নিন্দুকেরা বলেন, তাঁর কথা ছাড়া নাকি বীরভূমে গাছের একটা পাতাও নড়ে না। এখন অবশ্য তিনি জেলে। তবে জেলে রয়েছেন বলে প্রতাপ মোটেই কমেনি। তাই তো শনিবার আদালতের ভিতর থেকেই তৃণমূলের কর্মী ও তাঁর অনুগামীদের নির্দেশ দিতে দেখা গেল এই ‘বাহুবলী’ নেতাকে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে কীভাবে এগোবেন ‘ছেলেরা’, সে মার্গদর্শনই করালেন তিনি।
গরু পাচার মামলায় শনিবার আসানসোল সিবিআই বিশেষ আদালতে তোলা হয় অনুব্রত মণ্ডলকে। ৩৮ দিন পর এদিন হাজিরা দেন কোর্টে। সিবিআইয়ের আইনজীবী ও অনুব্রত মণ্ডলের আইনজীবীর সওয়াল জবাব পর্ব শেষে এজলাসে ‘ব্রেক’ হয়। বিচারকও নিজের চেম্বারে যান। আদালত সূত্রে খবর, সেই সময়ই অনুব্রত মণ্ডলের বেশ কিছু অনুগামী আসেন আদালতচত্বরে।
সূত্রের দাবি, তাঁরা ব্যক্তিগত কথাবার্তা বলেন ‘দাদা’র সঙ্গে। একজন তারাপীঠের পুজো করা ফুল মাথায়ও ঠেকিয়ে দেন অনুব্রতর। অনুব্রতও পাল্টা তাঁদের কাছে খবর নেন বিজয়া সম্মিলনী ঠিকমতো হচ্ছে কি না। এরপরই দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দেন, সকলে যেন নিজ নিজ বিধানসভা এলাকায় ভালভাবে নজর রাখেন। দলের কাজকর্ম দেখেন। কারও বাইরে যাওয়ার দরকার নেই বলেও নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটে সবাইকে উঠে পড়ে কাজে নেমে পড়ারও কথা বলেন তিনি।
অনুব্রত মণ্ডল বীরভূম জেলায় তৃণমূল কংগ্রেসের অভিভাবক। তাঁর হাতের মুঠোতেই জেলার সংগঠন। সংগঠক হিসাবে তাঁর দক্ষতা ইতিমধ্যেই প্রশংসা পেয়েছে। প্রশংসা করেছেন দলনেত্রী নিজে। সেই অনুব্রত এখন জেলে। এদিকে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ভোটের দামামা কার্যত বেজেই গিয়েছে। জেলায় জেলায় প্রস্তুতি শুরু। এই অবস্থায় অনুব্রতর অনুপস্থিতি একটা প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
কারণ, জেলায় বিভিন্ন জায়গায় যেমন দুবরাজপুর, নানুরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ থাকলেও অনুব্রত মণ্ডল তা সামাল দিতেন কোনও এক অদেখা জাদুবলে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে দলের মুখ তিনি বলেই মত রাজনীতির কারবারিদের। এদিন অনুগামী, কর্মীদের তাই হয়ত কিছুটা ভরসা জোগাতে দেখা গেল আদালত থেকেই।
আপাতত জেলেই থাকতে হচ্ছে অনুব্রত মণ্ডলকে। এদিন আদালত তাঁকে ফের ১৪ দিনের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। একইসঙ্গে বিচারক সিবিআইয়ের কাছে জানতে চান, মামলা শেষ করতে কতদিন সময় লাগবে? সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, আরও দু’মাস সময় লাগবে। অনুব্রতর সঙ্গে গরু পাচারের যোগ কোথায় তাও জানতে চান বিচারক।