
চন্দ্রকোনা: বিপিএল মিটার। বাড়িতে ২টা ল্যাম্প রয়েছে। গরমকালে পাখা চলে। কিন্তু, সেই বাড়িতে বিদ্যুতের বিল এসেছে ২ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকা। যা দেখে মাথায় হাত পড়ল বৃদ্ধর। কীভাবে এই বিল দেবেন, তা ভেবেই কার্যত রাতের ঘুম উড়েছে তাঁর। বিদ্যুতের বিল দেখে হতবাক তাঁর প্রতিবেশীরাও। ঘটনাটি পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনার। বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে বিদ্যুৎ দফতর। একইসঙ্গে তাদের বক্তব্য, ওই বৃদ্ধ কখনও বিদ্যুতের বিল দেননি।
চন্দ্রকোনা ২ নম্বর ব্লকের ধাইখণ্ড গ্রামের বাসিন্দা গোলাম নবি খান। কয়েক বছর আগে গোলাম-সহ অনেকের বাড়ি শিলাবতী নদীর গর্ভে তলিয়ে যায়। তারপর গ্রামেই মেয়ের বাড়িতে গিয়ে বসবাস শুরু করেন গোলাম। তাঁর বাড়িতে বিদ্যুতের বিপিএল সংযোগ ছিল। মেয়ের বাড়িতে তা স্থানান্তরিত করা হয়। জানা গিয়েছে, কয়েক বছর আগে গোলামের নামে ১ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা বিদ্যুতের বিল এসেছিল। সেই বিল দেখে গোলাম দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। সেই সময় বিদ্যুৎ দফতরে যোগাযোগ করেছিলেন। লিখিত আবেদনও করেছিলেন। তবে সেই বিল মেটাননি তিনি।
আবার কয়েকদিন আগে হঠাৎ গোলামের নামে ২ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকার বিদ্যুতের বিল এসেছে। চিন্তায় পড়েছেন তিনি। ওই বৃদ্ধ বলেন, “আমি মেয়ের বাড়িতে থাকি। অন্যের জমিতে কাজ করে খাই। বাড়িতে দুটো ল্যাম্প জ্বলে। আর গরমকালে একটু আধটু পাখা চলে।” কীভাবে তাঁর এত টাকার বিদ্যুতের বিল এল, তা বুঝতে পারছেন না বলে জানালেন গোলাম। তাঁর পক্ষে বিদ্যুতের বিল দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানান ওই বৃদ্ধ।
ওই বৃদ্ধের পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রতিবেশীরা। তাঁরা বলছেন, এত টাকা বিদ্যুতের বিল আসা সম্ভব নয়। আমজাদ খান নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “ওই বৃদ্ধ খুবই সাধারণ মানুষ। বাড়িতে AC নেই। কোনও মোটরও চলে না। ফলে এত টাকা বিল আসা সম্ভব নয়।” ওই এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য শক্তিপদ রায় বলেন, “আমি তাঁকে ভালভাবেই চিনি। নদীগর্ভে তাঁর বাড়িঘর তলিয়ে গিয়েছে। মেয়ের বাড়িতে থাকেন। কোনওমতে দিন চলে।” বিদ্যুৎ দফতর তাঁর এই বিল যাতে মকুব করে, সেই আবেদন জানান তিনি। গোলামের মেয়ে জামিলা বিবি বলেন, “আমাদের পক্ষেও এত টাকা বিল দেওয়া সম্ভব নয়। বাবা খুব দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। এই বিল মকুব না করলে আত্মহত্যা করা ছাড়া বাবার কোনও উপায় থাকবে না।”
গোলামের যে বিপিএল মিটার, তা স্বীকার করে নিয়েছে বিদ্যুৎ দফতর। তাদের বক্তব্য, ২০১০ সালের অগস্ট থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও বিদ্যুতের বিল দেননি ওই বৃদ্ধ। ২০২২ সালে একবার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল। পরে গোলাম নিজে বিদ্যুৎ সংযোগ করে নেন। তবে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে বলে বিদ্যুৎ দফতরের তরফে জানানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে বিদ্যুৎ দফতর।