ঘাটাল: গ্রামের মাতব্বররা সালিশি ডেকেছিল। কিন্তু সেই সালিশিতে হাজির ছিল না এক পক্ষ। আর তাতেই ওই পরিবারকে গ্রাম থেকে বয়কট (Social Boycott) করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল। শুধু তাই নয়, গ্রামে ওই পরিবারের একটি মুদিখানা দোকানও রয়েছে। সেই দোকানটিও তালাবন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। এমনকী যদি গ্রামের কেউ ওই দোকানের থেকে মালপত্র কেনেন, তাহলে যে কিনবেন তাঁর পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে, এমনও নাকি নিদান দিয়েছে গ্রামের মাতব্বররা। এই অভিযোগেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল (Ghatal) ব্লকে। সেখানে অজবনগর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের হরশঙ্কর গ্রামের এই ঘটনায় ছড়িয়েছে চাঞ্চল্য। দোকান বন্ধ হয়ে পড়ে থাকায় সমস্যা পড়েছেন পরিবারের লোকেরা। এমন অবস্থায় কোনও উপায় না পেয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে অসহায় পরিবার।
জানা যাচ্ছে, ওই গ্রামের সহদেব মণ্ডল ও মহাদেব মণ্ডল নামে দুই ভাইয়ের মধ্যে জমি সংক্রান্ত বিবাদ চলছিল দীর্ঘদিন ধরে। কিছুদিন আগে ওই জমি সংক্রান্ত বিবাদ হাতাহাতি পর্যন্ত গড়িয়েছিল। সেই ঝামেলা গড়ায় থানা-পুলিশ পর্যন্ত। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছিল পুলিশ। সেই তদন্তের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সাক্ষী হিসেবে নাম উঠে আসে ওই গ্রামেরই রেবা মণ্ডলের ছেলে সঞ্জিত মণ্ডলের। কেন পুলিশের কাছে সাক্ষী দেবে সঞ্জিত, তা নিয়েই আপত্তি গ্রামের মাতব্বরদের। এতে গ্রামের নাম খারাপ হচ্ছে বলে বক্তব্য তাদের।
এদিকে এই বিষয়টি নিয়ে, গ্রামে সালিশি সভা ডাকা হয়। সেখানে সঞ্জিতদের পরিবারকেও ডাকা হয়েছিল। কিন্তু তারা যায়নি সালিশিতে। এতে আরও চটে যায় মাতব্বররা। এরপর থেকেই কার্যত দোকানে মুদিখানার ব্যবসা লাটে উঠেছে সঞ্জিতদের। যদিও দোকানে তালা লাগিয়ে দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন মাতব্বররা। তাদের বক্তব্য, সঞ্জিতদের পরিবার নিজে থেকেই তালা লাগিয়ে দিয়েছে। তবে ওই মুদিখানার দোকানে কেউ না যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রামবাসীরাই মিলিতভাবে নিয়েছে বলে দাবি গ্রামের মাতব্বরদের। এমনকী পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার সিদ্ধান্তের বিষয়টিও সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে স্বীকার করতে দেখা গিয়েছে মাতব্বরদের।
এদিকে দোকান খুলতে না পারায় স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগ জানান রেবা মণ্ডল। খবর পেয়ে সোমবার সেখানে পুলিশ যায়। রেবা মণ্ডলের ছেলে সঞ্জিত দোকানের তালা ভেঙে ঢুকলেও ফের একবার তপ্ত হয় পরিস্থিতি। পুলিশের সামনেই চলে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের পালা। যদিও পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিয়ে সঞ্জিতকে তালা ভেঙে দোকানে ঢোকার ব্যবস্থা করে দেয়।
ঘাটাল ব্লকের বিডিও সঞ্জীব দাস এই বিষয়ে জানান, এই সামাজিক বয়কটের অভিযোগটি তাঁর কানেও গিয়েছে। ইতিমধ্যে গ্রামে পুলিশও গিয়েছে। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এমন বয়কটের মতো ঘটনা মেনে নেওয়া হবে না এবং প্রয়োজনে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গ্রামে যদি কোনও বিবাদ থাকে, তাহলে গ্রামের মানুষদের সঙ্গে নিয়ে তা মেটানো হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।