Witch: ডাইনি অপবাদে ঘরছাড়া মহিলা, ২ লক্ষ টাকা দাবি পাড়ার লোকের

Medinipur: ওই গৃহবধূ বলেন, "বাড়িতে ঠাকুরঘর করি গত আষাঢ়ে। তখন পাড়ার কেউ কিছু বলেনি। এখন বলছে আমি ডাইন। আমি কান্নাকাটি করে, ওদের হাতে পায়ে ধরে বলেছি এসবের কোনও ভিত্তিই নেই। তবু ওরা শুনছে না। বলছে আমি নাকি ডাইনবিদ্যা জানি, মন্ত্র জানি।"

Witch: ডাইনি অপবাদে ঘরছাড়া মহিলা, ২ লক্ষ টাকা দাবি পাড়ার লোকের
বাড়িতে আপাতত শুধুই পোষ্যরা রয়েছে। Image Credit source: TV9 Bangla

| Edited By: সায়নী জোয়ারদার

Sep 28, 2023 | 4:46 PM

মেদিনীপুর: ডাইনি অপবাদে ঘরছাড়া পরিবার। অভিযোগের আঙুল পাড়ার লোকজনের দিকেই। চন্দ্রকোনা-১ ব্লকের এই ঘটনার তীব্র নিন্দায় সরব আদিবাসী সংগঠন। বিডিও জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে তাঁর কাছে কোনও খবরই নেই। অন্যদিকে চন্দ্রকোনা থানার পুলিশের দাবি, অভিযোগ পেয়েছে। তদন্ত চলছে। অভিযোগকারী জানান, আষাঢ় মাসে বাড়িতে একটি ঠাকুরঘর করেছিলেন তিনি। সে সময় পাড়ার কেউ কিছু বলেননি। গত এক মাস ধরে তাঁকে ডাইনি বলে দোষারোপ চলছে। এমনকী তাঁকে যে গুনিনের কাছে যাওয়ার নিদান দেওয়া হয়েছে, নিজের খরচেই সমস্তটা করতে হবে বলে জানিয়েছেন পাড়ার লোকেরা। এখন তাঁদের কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকা চাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। সেই টাকা দিতে না পারলে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে নিদান দিয়েছেন পাড়ার লোকেরা। আপাতত সপরিবারে বাড়িছাড়া ওই বধূ। সুবিচার চেয়ে পুলিশ, আদিবাসী সংগঠনকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন তিনি। চন্দ্রকোনা-১ ব্লকের বিডিও রথীন্দ্রনাথ অধিকারী বলেন, “এ বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ জানায়নি। আপনাদের কাছেই শুনলাম। খোঁজখবর নিচ্ছি। দেখছি ঘটনাটা কী ঘটেছে।”

গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ওই গৃহবধূ বাড়িতে পুজোপাঠ শুরু করতেই পাড়ায় একের পর এক বিপদ ঘটছে। বাচ্চারা অসুস্থ হচ্ছে, গরু ছাগল মরে যাচ্ছে। তাতেই পাড়ার লোকজনের সন্দেহ ওই গৃহবধূর মধ্যে কোনও অপশক্তি ভর করেছে। ওই বধূর স্বামীর দাবি, তাঁদের মারধর পর্যন্ত করেছেন পাড়ার লোকজন। পাল্টা প্রতিবেশীদের দাবি, অভিযুক্ত পরিবারই মারধর করছে গ্রামের লোককে।

অভিযোগকারী মহিলা বলেন, “বাড়িতে ঠাকুরঘর করি গত আষাঢ়ে। তখন পাড়ার কেউ কিছু বলেনি। এখন বলছে আমি ডাইন। আমি কান্নাকাটি করে, ওদের হাতে পায়ে ধরে বলেছি এসবের কোনও ভিত্তিই নেই। তবু ওরা শুনছে না। বলছে আমি নাকি ডাইনবিদ্যা জানি, মন্ত্র জানি। আমাকে বলছে গুনিনের কাছে নিয়ে যাবে। আমাকে চাপ দিয়ে পুরুলিয়ায় ৪০ হাজার টাকা খরচ করিয়ে গুনিনের কাছে যেতে হয়েছে। এক মাস ধরে এসব চলছে। ঘরে খাওয়া দাওয়া উঠে গিয়েছে। এখন বলছে ২ লক্ষ টাকা দিতে হবে। দরকারে গরু বিক্রি করে, জমি বিক্রি করে সে টাকা দিতে হবে। না হলে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলছে।”

ভারত জাকাত মাঝি পরগনা মহলের ঘাটাল মহকুমা সভাপতি বিজয় টুডু বলেন, “ন্যক্কারজনক ঘটনা। স্বাধীনতার এতগুলো বছর পর এসব আর আছে বলে আমাদের মনে হয় না। ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। পাড়ার সকলে নয়, কয়েকজন মিলে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। এসব টাকা হাতানোর জন্য করছে। আমরা এসব বরদাস্ত করব না। সংগঠনের তরফে ব্যবস্থা নেব। প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। তারা কী ব্যবস্থা নেয় দেখব।”

ভারত জাকাত মাঝি পরগনা মহলের আরেক নেতা দেবেন মাণ্ডির কথায়, “পাড়া থেকে যেভাবে অপদস্থ করেছে এটা খুবই অন্যায়। এসব কুসংস্কার। আমরা বহু জায়গায় মানুষকে এ নিয়ে বুঝিয়েছি। কয়েক জায়গায় থেকে গিয়েছে। আমরা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব এ নিয়ে।” পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। চন্দ্রকোনার তৃণমূল বিধায়ক অরূপ ধাঁড়া বলেন, “ওখানকার মানুষকে বলব ডাইনি বলে কিছুই নেই। আর প্রশাসনকে বলব সচেতনতা বাড়াতে আরও বেশি করে প্রচার চালাতে হবে।”