ডেবরা: সালিশিসভার নিদানে গৃহবধূকে ন্যাড়া করা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরার এই ঘটনার তদন্তে নেমে এবার আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য এল জেলা প্রশাসনের নজরে। বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে ওই গৃহবধূর কন্যাসন্তানকে। নিজে মুখেই সে কথা স্বীকার করেছেন শিশুর বাবা। তিন বছরের শিশু কন্যাকে মাত্র ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সাগর সিং নামে ওই ব্যক্তি। তাঁর দাবি, চিকিৎসার খরচ চালাতেই এমন কাজ করেছেন তিনি। ঘটনার তদন্ত করে রিপোর্ট দেওয়ার পাশাপাশি শিশুকে উদ্ধারের চেষ্টা করতে নির্দেশ দিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা শাসক। সম্প্রতি জানা যায়, স্বামীর নির্দেশেই সালিশিসভায় নিয়ে গিয়ে ন্যাড়া করে দেওয়া হয় ওই গৃহবধূকে। এরপরই তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে উঠল চাঞ্চল্যকর অভিযোগ।
অতিরিক্ত জেলা শাসক (উন্নয়ন) কেমপা হুন্নাইয়া ডেবরা বিডিওকে নির্দেশ দিয়েছেন যাতে, দ্রুত ওই ঘটনার তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়। পাশাপাশি শিশুকে দ্রুত উদ্ধারের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ডেবরার চক অনন্ত গ্রামের ঘটনা। গৃহবধূর স্বামী সাগর সিং জানিয়েছেন, কয়েক মাস ধরে তিনি অসুস্থ। টিবি-তে ভুগছেন তিনি। চিকিৎসার খরচ জোগানোর টাকা নেই। তাই মেয়েকে বিক্রি করেছেন তিনি। তিনি আরও জানান, দুই সন্তানকেই বিক্রি করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ছেলে পালিয়ে যাওয়ায় বিক্রি করতে পারেননি তিনি। আপাতত ৫ হাজার টাকা পেয়েছেন, বাকি টাকা পরে দেওয়া হবে।
দু দিন আগে এক গৃহবধূর চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ওঘ গ্রামে। গ্রামের কয়েকজন মোড়লের বিরুদ্ধে নিদান দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। জানা যায়, বাড়ির বাইরে গিয়ে কাজ করতে চেয়েছিলেন ওই মহিলা। তারপরই তাঁকে ওই নিদান দেওয়া হয়। ওই ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজ গৃহবধূ। সম্প্রতি তাঁর মা এসে জানতে পারেন মেয়ে বাড়িতে নেই, নাতনিও নেই। তিনি থানায় অভিযোগ জানানোর পরই সামনে আসতে শুরু করেছে একের পর এক তথ্য। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে গৃহবধূর ন্যাড়া হওয়ার সেই ভিডিয়ো।
পুলিশ তদন্তে নেমে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার। শুক্রবার সকালে ওই গ্রামে গোটা বিষয় নিয়ে খোঁজ করতেই উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা যায়, আর্থিক অনটনের মাঝেই ওই গৃহবধূর কন্যা সন্তানকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে মাস খানেক আগেই।
প্রসঙ্গত, ওই গৃহবধুর স্বামী সাগর সিং মাস চারেক ধরে অসুস্থ। ওই গৃহবধূর ২ সন্তান রয়েছে। পুত্র সন্তানের বয়স ৭ বছর, কন্যা সন্তানের বয়স ৩ বছর। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দিন ১৫ আগেই রোজগারের তাগিদে ওই গৃহবধূ অন্যত্র কাজে চলে যান। সেখান থেকে ফিরলেই গৃহবধূর মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হয়।