ঘাটাল: জলজ্যান্ত শিশুকে মৃত বলে ঘোষণা করে দিল হাসপাতাল। ডেথ সার্টিফিকেটও তুলে দেওয়া হল পরিবারের হাতে। এমনকী শিশুটিকে শেষকৃত্যের জন্য নিয়েও যাওয়া হয়েছিল বলে খবর। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঘটেছে ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ( Ghatal Super Specialty Hospital)। অভিযোগ, হাসাপাতালেই থাকা এক সদ্যজাত জীবিত শিশুকে মৃত (Child Death) বলে ঘোষণা করে ডেথ সার্টিফিকেট পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শিশুটির শেষকৃত্য করতে গিয়ে দেখা যায় শিশুটির (Child) দেহে তখন প্রাণ আছে। শ্বাস-প্রশ্বাসও নিচ্ছে। একরত্তি অবস্থা দেখে তাঁর পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফুটলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছেন তাঁরা। এ কীরকম ডাক্তার? এ কীরকম চিকিৎসা পরিষেবা? সবার মুখে একটাই প্রশ্ন।
দেহে প্রাণ আছে বুঝতে পারা মাত্রই তার পরিবারের সদস্যরা শিশুটিকে তড়িঘড়ি ঘাটাল হাসপাতেলে নিয়ে আসেন। ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া সেই জীবিত শিশুটিকে পুনরায় ভর্তি নিয়ে চিকিৎসা শুরু করেন চিকিৎসকরা। এমন নজিরবিহীন ঘটনায় জোর শোরগোল গোটা এলাকায়। চাপানউতর চলছে হাসপাতাল চত্বরেও। এই ঘটনায় চিকিৎসকদের শাস্তির দাবি তুলেছে শিশুটির পরিবার। হাসপাতাল চত্বরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা। খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাঁদের শান্ত করে।
এই ঘটনায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছে ওই শিশুটির পরিবার। জানা য়ায়, শনিবার ভোরে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে ঘাটাল হাসপাতালে ভর্তি হন মনলিশা খাতুন নামে গড়বেতা রসকুন্ডুর এক গৃহবধূ। দুপুর ২টো নাগাৎ তিনি একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। যদিও সেই শিশুটি সময়ের অনেক আগেই হয়েছে বলে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। ওজনও ছিল অনেক কম। বিকেল পাঁচটা নাগাদ শিশুটির পরিবারকে জানিয়ে দেওয়া হয় ওই শিশুটি মারা গিয়েছে। মাথায় মৃত স্ট্যাম্প দিয়ে ডেথ সার্টিফিকেট দিয়ে প্যাকিং করে রাত নটা নাগাৎ শিশুটিকে মৃত বলে পরিবারের হাতে তুলে দেন চিকিৎসকরা। পরবর্তীতে বাড়ি ফিরে শিশুটিকে কবরস্ত করতে গিয়ে চোখ কপালে ওঠে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। দেখা যায় দেহে তখনও প্রাণ আছে শিশুটির। শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে। তখনই তড়িঘড়ি ফের নিয়ে আসা হয় হাসপাতলে। সরকারি চিকিৎসা পরিষেবার এই অবস্থা দেখে তাজ্জব ঘাটালবাসি।
এ ঘটনায় হাসাপাতালের সুপার সুব্রত দে বলেন, “বাচ্চাটার জন্মের পর খুবই কম ওজন ছিল। মাত্র ৪৪০ গ্রাম ওজন ছিল। দুপুরে ওকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। সাত ঘণ্টা অর্জারভেশনে রেখে তারপর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। তারপর শুনলাম মাটি দিতে গিয়ে শিশুটির পরিবার দেখে দেহে প্রাণ আছে। তারপর ওরা ফের তাকে হাসপাতালে আনে। আমরা ঘটনার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। খতিয়ে দেখা হবে গোটা ঘটনাটা।” যদিও যখন এই খবর লেখা হচ্ছে তখনও পর্যন্ত পাওয়া শেষ আপডেটে জানা যাচ্ছে, পুনরায় হাসাপাতালে শিশুটিকে আনা হলেও তাঁকে বাঁচানো যায়নি। মৃত্যু হয়েছে। যদিও এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। শিশুটির পরিবারের সদস্য সেলিম খান বলেন, “কবর কাটা হয়ে গিয়েছিল। তারপর ওর দেহে প্রাণ আছে দেখে আমরা শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। সেখানে ফের চিকিৎসার পর ডাক্তাররা বলে মারা গিয়েছে। আমাদের প্রশ্ন একটা বাচ্চার দুবার মৃত্যু হয় কী করে? আমরা প্রশাসনের কাছে এ ঘটনার তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।”