মেদিনীপুর: এক সময় নাকি চন্দ্রকোণার জাড়া-রায় বাড়ির পুজোয় আসতেন স্বয়ং বিদ্যাসাগর মহাশয়। এসেছেন রাজা রামমোহন রায়ও। উত্তম কুমার অভিনীত অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি ছবিতেও উঠে এসেছে এই রায় পরিবারের কথা। সেই জাড়ার জমিদার বাড়ির পুজো এবার ২২২ বছরে পা দিল। ঐতিহ্যকে বুকে আঁকড়ে ধরে এতগুলো বছর ধরে মাতৃবন্দনা করে চলেছে এই পরিবার।
জানা যায়, বর্ধমানের রাজা রাজীবলোচন রায় ১২০৭ বঙ্গাব্দ, ১৮০০ খ্রীস্টাব্দে এই পুজোর সূচনা করেন। রায় বাড়ির সদস্যরাই জানান, আগে জমিদারি থাকাকালীন যেমন সাড়ম্বরে মায়ের আরাধনা হত, এখন রাজপাট, জমিদারি না থাকলেও পুজোর আয়োজনে কোনও পরিবর্তন আসেনি। সমস্ত আচার রীতি মেনেই বৈষ্ণব মতে পুজো হয় এ বাড়িতে। একটি চালাতেই সিংহবাহিনী তার সন্তানদের নিয়ে বিরাজ করে।
তবে বাহন-সহ সকল দেবদেবীর আলাদা করে ভোগ রান্না হয় এখানে। তবে কোনও বলিপ্রথার চল নেই এ বাড়িতে। ষষ্ঠীতে ঘটে জল ভরা হয়। সেই ঢাকে কাঠি পড়ে যায় চারদিনের নামে। প্রত্যেক দিন নরনারায়ণ সেবা করানো হয়। জাড়া ছাড়াও দূরদূরান্ত গ্রামের বহু মানুষ আজও রায়বাড়ির পুজোয় ভিড় জমান।
আগে এই পুজো উপলক্ষে যাত্রাপালা থেকে কবিগানের আসর পর্যন্ত বসত। তবে এখন আর সেসব আয়োজন সম্ভব হয় না। রায় বাড়ির এই পুজোয় আগে নাকি বহু গণ্যমান্য মানুষ আসতেন। এমনকী বিদ্যাসাগর, রামমোহন রায়ও এসেছিলেন জাড়া জমিদার বাড়ির পুজোতে।
এ বাড়ির প্রতিমা বিসর্জনেরও এক সুন্দর রীতি রয়েছে। বাড়ির ছোট বড় সকলে মিলে গান গাইতে গাইতে শোভাযাত্রা করে মাকে বিদায় জানান। এ বাড়ির অনেকেই বিদেশে থাকেন। যাঁরা পুজো উপলক্ষে চলে আসেন গ্রামের বাড়িতে। দুর্গোৎসব ঘিরে কার্যত পুনর্মিলন উৎসবের আবহ তৈরি হয় এই রায় বাড়িতে।
রায় পরিবারের সদস্য ভারতী রায় বলেন, “একটা সময় এ বাড়িতে নহবতখানা ছিল। আমরা এসে দেখেছি সে সব ভেঙে গিয়েছে। তবে এখনও ষষ্ঠীর দিন থেকে সানাই বাজে। বাকি পুজোর যা কিছু অনুষ্ঠান সবটাই অপরিবর্তিত রয়েছে।”
অপর সদস্য অভিজিৎ রায়ের কথায়, “আমরা তো এই প্রজন্ম। মায়েদের কাছে গল্প যা শুনেছি, তাতে এটুকু বলতে পারি একটা সময় এ বাড়ির পুজোয় আরও আড়ম্বর ছিল। সে সময় আমাদের বাড়িতে যাত্রা হত। ন’দিন ধরে যাত্রা হত। একসময় রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতো মানুষ এসেছেন। এখানে সিনেমারও শুটিং হয়েছে। উত্তম কুমারের অ্যান্টনি ফিরিঙ্গির শুটিং হয়েছে এখানে। আমরা জমিদার। তবে রাজা উপাধি পাওয়ায় অনেকেই এই বাড়িকে জাড়া রাজবাড়িও বলে। রাজা রাজীবলোচন রায়ের আমলেই তা পায়। উনি আমাদের পূর্ব পুরুষ। ওনার অনেক প্রথিতযশা মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিল। সেই সুবাদেই এ বাড়ির পুজোয় বহু অতিথি এসেছেন।”
আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: লোহার ঢাকের তালেই এবার দুলছে কোমর, বাজার গরম কাটোয়ার শিল্পীর