ঘাটাল: আলু নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় কৃষকরা। বিঘে প্রতি আলু চাষে খরচ ৩০-৩৫ হাজার টাকা। আর এখন মাঠ থেকে আলু বিক্রি করে কৃষকরা পাচ্ছেন ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। আবার আলুর দাম কম হওয়ায় ব্যবসায়ীরাও মাঠে গিয়ে আলু কেনায় উৎসাহ দেখাচ্ছেন না। ফলে মাঠেই জমা হয়ে পড়ে রয়েছে আলু। তার উপর আবহাওয়া দফতরের তরফে বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়ায় জোড়াফলায় বিদ্ধ কৃষকরা। ভিন রাজ্যে আলু রফতানিতে সরকারের বিধিনিষেধের জেরে হিমঘরে এখনও মজুত রয়েছে পুরানো আলু। সবমিলিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পশ্চিম মেদিনীপুরের আলু চাষিরা।
আলু চাষের গড় হিসেবে পরিচিত পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা, চন্দ্রকোনা। বর্তমানে চন্দ্রকোনায় মাঠ থেকে উঠতে শুরু করেছে পোখরাজ আলু। কিন্তু মাঠের আলু মাঠেই পড়ে থাকছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় ব্যবসায়ীরা আসছেন না মাঠে। কৃষকরা বলছেন, এবার মাঠ থেকে আলু কেনায় অনীহা দেখাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
কৃষকদের বক্তব্য, চড়া দামে রাসায়নিক সার, আলু বীজ কিনে বিঘা পিছু আলু চাষ করতে খরচ হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় এবছর আলু চাষে বিলম্বও হয়েছে। বর্তমানে এক কুইন্টাল নতুন পোখরাজ আলুর দাম ৫০০ টাকা। এক বস্তা আলুর দাম ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা (এক বস্তায় ৫০ কেজি আলু থাকে)। কৃষকরা বলছেন, বর্তমানে যা আলুর দাম, সেই টাকায় আলু বিক্রি করে চাষের খরচ উঠবে না।
মাঠেই আলু জড়ো করে রাখছেন চাষিরা
প্রতিবছর নতুন আলু মাঠেই ব্যবসায়ীদের বিক্রি করে দেন অধিকাংশ কৃষক। কিন্তু এবছর আলু ব্যবসায়ীদের দেখা নেই। আলু খোলা শুরু হলেও মাঠেই জমা করে পড়ে রয়েছে। এদিকে আবহাওয়া দফতরের তরফে বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এসময়ে বৃষ্টি হলে মাঠে জমা করে রাখা আলু পচে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকছে। তা নিয়ে কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ কৃষকদের।
এবছর মাঠ থেকে আলু কেনায় কেন অনীহা ব্যবসায়ীদের? ব্যবসায়ী থেকে কৃষকরা জানাচ্ছেন, এবছর ভিন রাজ্যে আলু রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল রাজ্য সরকার। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় হিমঘরে মজুত আলু মুলত ভিন রাজ্যে যায়। এজেলার আলু কলকাতা বা অন্য জেলায় ব্যবহার কমই হয়। আলু রফতানির ক্ষেত্রে রাজ্যের সীমান্ত বন্ধ থাকায় এখনও জেলার হিমঘরগুলিতে মজুত রয়েছে পুরানো আলু। তার উপর মাঠে নতুন আলু উঠতে শুরু করায় ব্যবসায়ীরা এই মুহূর্তে আলু কেনায় অনীহা দেখাচ্ছেন। শেখ রাকেশ নামে এক আলু ব্যবসায়ী বলেন, এই জেলা থেকে পোখরান আলু মূলত যায় ওড়িশায়। সেখানকার ব্যবসায়ীরা প্রতি কুইন্টালে ৫০০ টাকার বেশি দিতে চাইছেন না। তাঁরা আরও কম দামে আলু কিনতে চাইছেন।
আলু চাষি বিল্টু আড়ি, শাজাহান খানরা বলছেন, আলুর বর্তমান দামে তাঁদের চাষের খরচ উঠবে না। কুইন্টাল প্রতি ৮০০-১০০০ টাকা হলে মাথা বাঁচবে। না হলে আলু চাষ করে ভরাডুবি হবে কৃষকদের। তবে এই মুহূর্তে মাঠ থেকে শুধু পোখরাজ আলু তোলা শুরু হয়েছে। জ্যোতি আলু মাঠ থেকে উঠতে এখনও অনেকটা সময় রয়েছে। তার মধ্যে আলুর দাম বাড়বে কি না, সেদিকে তাকিয়ে কৃষকরা।