
পশ্চিম মেদিনীপুর: দীর্ঘ প্রায় চল্লিশ বছর ধরে সম্প্রীতির নজির স্থাপন করে আসছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুরের গ্রামবাসীরা। এক মুসলিম যুবকের তৈরি কালী প্রতিমায় পুজিত হচ্ছে গোটা গ্রাম।
দাসপুর থানার নাড়াজোল গ্রামের ৬১ বছর বয়সের ইসমাইল চিত্রকার। পরিবারে স্বামী-স্ত্রী ছাড়াও রয়েছে পাঁচ মেয়ে। অভাবের সংসার তাঁদের। আগে পটশিল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বরাবরই হিন্দু দেবদেবতার প্রতিমা গড়ে সংসার চালিয়ে আসছেন ইসমাইল চিত্রকার। বর্তমানে লক্মী,সরস্বতী,কার্তিক,গণেশ সহ কালী প্রতিমা তৈরি করে পরিবার নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন ইসমাইলবাবু।
তার এই কাজে হাত লাগান স্ত্রী আয়রন বিবি সহ মেয়ে হাসিনা ও আসপিয়ারা । অভাবের সংসারে মেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর সামর্থ্য হয়নি। তাই বাবার সঙ্গে মেয়েরাও প্রতিমা তৈরির কাজে এখন সাহায্য় করে। এই নিয়ে যদিও আক্ষেপ নেই তাদের।
ইসমাইল বাবু আগে পটশিল্পী হিসাবে পরিচিত ছিলেন। পটের তৈরি বিভিন্ন জিনিস নিয়ে কলকাতা সহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন। কিন্তু পটের তেমন চাহিদা বা অর্থ না আসায় বর্তমানে প্রতিমা তৈরিকে পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছেন।
ইসমাইলবাবু মূলত ডায়াসের তৈরি বিভিন্ন দেবদেবীর প্রতিমা বানিয়ে থাকেন। মাটি কিনে তা ছাঁচের তৈরি করে তার উপর সিমেন্টের প্রলেপ দিয়ে ডায়াসের প্রতিমা তৈরি করে বিক্রি করেন। তার তৈরি প্রতিমার চাহিদাও তুঙ্গে। শুধু দাসপুর নয় ঘাটাল,পাঁশকুড়া,কেশপুর সহ দুরদুরান্তে বিক্রি হয়ে চলে যায়। ভিন ধর্মের হলেও ইসমাইল বাবুর হাতের তৈরি প্রতিমা কিনতে বা পুজোয় কোনও অনীহা নেই কারও।
সামনেই কালী পুজো তার আগে ইসমাইলবাুর বাড়িতে ব্যস্ততা তুঙ্গে। ইতিমধ্যে খরিদ্দাররা আসতে শুরু করেছে প্রতিমার অর্ডার দিতে। কম দামে ডায়াসের তৈরি প্রতিমা পেতে কালী পুজোর আগে রীতিমতো ভিড় জমে যায় নাড়াজোলে ইসমাইল চিত্রকারের বাড়িতে। এমন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মেলবন্ধন বিরল এবং এতে এলাকার সবধর্মের মানুষ খুশি এমনটাই জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।
তাঁদের দাবি, এলাকায় সব ধর্মের মানুষ মিলেমিশে বসবাস করে।এখানে কোনও জাতপাতের বিচার কেউ করেনা। তাই ইসমাইল চিত্রকার ইসলাম ধর্মের হলেও তার তৈরি প্রতিমা কিনতে কোনও দ্বিধা বোধ করেনা হিন্দু ধর্মের মানুষজন। সকলেই সাদরে ইসমাইলবাবুর তৈরি কালী প্রতিমা কিনে নিয়ে গিয়ে পুজো করেন।
কালী পুজোর কয়েকটা দিন বাকি ইসমাইলবাবু সহ তার পরিবারের সদস্যদের চরম ব্যস্ততা। কালী প্রতিমা সময়ে প্রস্তুত করে ক্রেতাদের হাতে তুলে দেওয়ার। নাওয়া-খাওয়া ভুলে তাই পুজোর আগে জোরকদমে চলছে কালী প্রতিমা তৈরির কাজ। সেই প্রতিমা কিনে নিয়ে গিয়ে পুজোর জন্য ইতিমধ্যে তার বাড়িতে আনাগোনা শুরু হয়েছে ক্রেতাদের।
আরও পড়ুন: Fire Crackers: রাত পোহালেই কালীপুজো, আজ হাইকোর্টে ফের বাজি-মামলা! ‘পেসো’র স্বীকৃত বাজির পক্ষে সওয়াল
আরও পড়ুন: Kali Puja 2021: দীর্ঘদিন ধরে এই গ্রামে কালীর পুজো করছেন একজন মুসলিম মহিলা পুরোহিত!