পশ্চিম মেদিনীপুর: রাত তখন অনেকটাই। জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়ায় রাস্তাতেই লোকজন কম। আচমকাই একটা বিকট শব্দ শুনতে পেয়ে ছুটে এসেছিলেন স্থানীয়রা। ততক্ষণে যা ঘটার ঘটে গিয়েছে। একটি দাঁড়িয়ে থাকা লরির পিছনে গিয়ে সজোরে ধাক্কা মেরেছেন পিক আপ ভ্যানের চালক। পিক আপ ভ্যানটির সামনের অংশ একেবারে দুমড়ে মুছড়ে গিয়েছে। ভিতরে গাড়ির যন্ত্রাংশের সঙ্গেই আটকে গিয়েছে চালকের শরীর। প্রায় ৪০ মিনিট ওই অবস্থাতেই আটকে থাকলেন তিনি। পরে তাঁকে উদ্ধার করে পাঠানো হল হাসপাতালে। পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদার খাকুড়দাগামী রাজ্য সড়কের ধারে আজদা মোড় এলাকার ঘটনা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা নাগাদ বেলদা থেকে খাকুড়দার দিকে যাচ্ছিলেন একটি পিক আপ ভ্যান। আজদা মোড় এলাকায় রাস্তার ধারে আগে থেকেই দাঁড়িয়েছিল একটি লরি। একে রাস্তার আলো কম। তারওপর কুয়াশা থাকায় আরও কমে গিয়েছিল দৃশ্যমানতা।
পিক ভ্যানের চালক সজোরে গিয়ে ধাক্কা মারেন লরির পিছনে। পিক আপ ভ্যানের সামনের অংশ একেবারে দুমড়ে মুছড়ে যায়। গাড়িটি এমনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যে সেখানে থেকে বের হতে পারেননি চালক। তাঁর শরীরটা গাড়ির যন্ত্রাংশের সঙ্গে একেবারে পেঁচিয়ে যায়।
দুর্ঘটনার সময় একটা বিকট শব্দ শুনতে পেয়েছিলেন আশেপাশের মানুষজন। তাঁরা দৌড়ে সেই এলাকায় আসেন। গাড়ি দেখে তাঁরা স্তম্ভিত হয়ে যান। খবর যায় পুলিশে। তার আগেই চালককে তাঁরা গাড়ি থেকে বার করার চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু টেনে হিঁচড়ে কোনওভাবেই তাঁকে বার করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাতে তাঁর আরও বেশি শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। পরে পুলিশ এসে পৌঁছয় ঘটনাস্থলে। বেলদা থানা ও জোড়াগেড়িয়া ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছয়। পুলিশও ওই চালককে বার করতে সক্ষম হচ্ছিলেন না। এরপর গ্যাস কাটারের সাহায্যে গাড়ির পাল্লা খুলে বার করার চেষ্টা করা হয় চালককে।
কিন্তু সেটাও কাজে আসে না। পরে স্থানীয়রাই বুদ্ধি বার করেন। ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির সামনের অংশ দড়ি দিয়ে বাঁধেন। সেটাকে জোরে টেনে খুলে চালককে বার করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় বেলদা গ্রামীণ হাসপাতালে।
এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “আমরা হঠাত্ই একটা বিকট শব্দ শুনতে পাই। প্রথমে আমরা বিশেষ আমল দিইনি। পরে একটা গোঙানির শব্দ শুনতে পাই। সেটা শুনেই আমরা এদিকে এসে দেখি ভয়ঙ্কর কাণ্ড। যে গাড়িটা ধাক্কা মেরেছে তার অবস্থা আর দেখার মতো ছিল না। ভিতর চালকের শরীরটা পুরো জড়িয়ে আটকে ছিল। কোনওভাবেই টেনে তাঁকে বার করা যাচ্ছিল না। আমরা অনেকটা চেষ্টা করি। কিন্তু টানা হিঁচড়াতে ওই চালকের অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছিল।”
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “লরিটা দাঁড়িয়েই ছিল। বোধহয় অন্ধকারে ওই গাড়িটাকে দেখতে পাননি চালক। গিয়ে সজোরে ধাক্কা মারেন। আর তাতেই দুর্ঘটনা। গাড়ির চালক ভিতরে খুব বাজে ভাবে আটকে পড়েছিলেন। তাতে তাঁকে বার করতে অনেকটা অসুবিধা হচ্ছিল। পুলিশ আধ ঘণ্টা পরেই চলে এসেছিল। কিন্তু চালককে তখনও গাড়ি থেকে বার করা সম্ভব হয়নি। পরে অনেক কায়দা করে বার করা হয়।”