একুশের প্রথম দফার (West Bengal Assembly Election 2021) নির্বাচনের আগে শেষ প্রচারে মেদিনীপুরে সভা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক গুচ্ছ প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পাশাপাশি কর্মীদের দিলেন লাস্ট মিনিট সাজেশন। তৃণমূলের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে মমতা বলেন, “বিজেপি সরকার তো গাজাখুরির সরকার। এরকম প্রধানমন্ত্রী যেন পৃথিবীতে আর না জন্মায়। গুন্ডাগিরি, দাঙ্গাগিরি। চোখগুলো দেখলে মনে হয় ঠুকরে খেতে আসছে।”
একইসঙ্গে মেদিনীপুরের মেদিনীতে দাঁড়িয়েই নাম না করে একের পর এক নিশানা সাধেন দলত্যাগী অধিকারীদের বিরুদ্ধে। বলেন, “সিপিএমের হার্মাদ বিজেপির ওস্তাদ। আর আমাদের কিছু গদ্দার ছিল, কিছু মীরজাফর ছিল, তারা এখন বিজেপির বড় ওস্তাদ। টাকা লুকোতে হবে যে। মেদিনীপুর ব্যাঙ্ক, কন্টাই ব্যাঙ্ক, কত ব্যাঙ্ক, কত জাহাজ, কত তেলের কারখানা, কত জলের কারখানা আছে না। এখন পা ধরছে মোদীর, বাঁচাও বাঁচাও করছে। হাতে একটা ভিক্ষার থালা দিয়ে দিন। ভুললে চলবে না, চোর চিরকালই চোর হয়। মীরজাফর চিরকালই মীরজাফর হয়। ওদের কেউ বিশ্বাস করে না। সিরাজ-উদ-দৌলা মীরজাফরকে বিশ্বাস করেছিল, মাথার মুকুট তোমাকে দিচ্ছি, দেশের সম্মান রক্ষা কর। মীরজাফর করতে পারেনি। গদ্দারদের কেউ বিশ্বাস করে না। না ঘরকা না ঘাটকা।” এক নজরে দেখে নিন আর কী কী বললেন মমতা—
এজেন্টরা মনে রাখবেন কয়েকটি কথা। ইভিএম নিয়ে অনেকের সন্দেহ আছে। আর বিজেপি করতে পারে না এমন কোনও কাজ নেই। চারটে কথা মনে রাখবেন। কাউকে বিশ্বাস করবেন না। এক, ৩০টা ভোট গণনার পরই মেশিন চালু করবেন না। দু’বার অন করবেন, দু’বার অফ করবেন। দু’ নম্বর, ভিভিপ্যাট মেশিনের কাগজপত্র ঠিক পড়ছে কি না দেখে নেবেন। তিন নম্বর, অনেক মেশিন খারাপ করে দেবে। যাতে আপনি রেগে বাড়িতে চলে যান, ও ভোটটা পেয়ে যায়। আপনারা কেউ ভুলেও যাবেন না। ছায়ায় অপেক্ষা করবেন। গণনার সময় কেউ কিছু দিলে খাবেন না। এক মাস ভোট মেশিন পাহারা দিতে হবে। পালিয়ে গেলে চলবে না।এটা যুদ্ধ। ১০ জন করে ছেলে মেয়েরা যারা মাথা নত করবে না, আগামিদিনে তাদের জন্য আমি কিছু করবই করব।
৭৫ ইউনিট পর্যন্ত যাঁরা বিদ্যুৎ পান, তাঁদের জন্য বিনামূল্যে। বাংলার মত সুলভে বিদ্যুৎ কোথাও পাওয়া যায় না। এটা নরেন্দ্র মোদীর গাজাখুরির সরকার নয়। নোটবন্দির সরকার নয়। সব্বাইকে ধমকে রেখে দিয়েছে। ভোট চলছে পাঁচ রাজ্যে। সংসদে সদস্যরা যেতে পারছেন না। মধ্যরাতে বিল পাশ করিয়ে দিল। দিল্লির সরকারের ক্ষমতা কেড়ে নিল। কী ক্ষমতার জোর! এরকম প্রধানমন্ত্রী যেন পৃথিবীতে আর না জন্মায়। গুন্ডাগিরি, দাঙ্গাগিরি। চোখগুলো দেখলে মনে হয়, ঠুকরে খেতে আসছে। আর আমি যেহেতু লড়াই করি, বলে তোমায় দেখাব। আমি বলি, তুমি আমায় কাঁচকলা দেখাবে। আমাকে বড় জোর মেরে ফেলতে পার। আর কী দেখাবে।
আমরা একটার পর একটা কাজ করছি, করব। ছোট বাচ্চাদের জন্য চিন্তা করবেন না। ওদের তো স্কুলের বই-ব্যাগ, মিড-ডে মিল দিই। আমরা কন্যাশ্রী-শিক্ষাশ্রী দিই। ছেলেমেয়েদের জন্য মা বাবাকে আর চিন্তা করতে দেব না। ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্রেডিট কার্ড করে দেব পড়ুয়াদের জন্য। এর জন্য ব্যাঙ্কে কাউকে জামিনদার হতে হবে না। আমরাই থাকব। ৫ লক্ষ ছেলে মেয়ের কর্মসংস্থান করে দেব। ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের কাজে ৫০ লক্ষ ছেলে মেয়ে কাজ পাবেন। ১ কোটি ছেলেমেয়ের চাকরি করে দিয়েছি। ৪০ শতাংশ দারিদ্রসীমা কমিয়ে দিয়েছি। আগামী দিনে ৫ শতাংশে নিয়ে যাব। কৃষকবন্ধুরা যাঁরা ৬ হাজার টাকা পাচ্ছেন, আমাদের সরকার আবার জিতলে ১০ হাজার টাকা হয়ে যাবে। বাড়ির মা বোনেরা, যাঁরা স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী, ১০০ দিনের কাজ করেন, আশা কর্মী, পঞ্চায়েতে কাজ করেন, শিক্ষিকা, ডাক্তারি করেন কিন্তু নিজের জন্য কিছু রাখতে পারেন না, তাঁদের আমরা প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে হাত খরচ দেব।
অনেকে বলে আমি নাকি দুয়ারে সরকার করেছি ভোটের আগে। জেলায় গিয়ে গিয়ে ৫০০-এর উপর মিটিং করেছি। আমাকে দেখাক কোনও সরকার এত প্রশাসনিক বৈঠক করেছে। বিশ্বের গিনেস রেকর্ডেও পাবেন না। আমি নিজে উপস্থিত থেকে করেছি। আমরা বছরে চার মাস দুয়ারে সরকার করব। আমরা বিনা খরচে রেশন দিই। ১ কিলো চালের দাম বাজারে ৩১ টাকা। আমরা বিনা পয়সায় দিই পাঁচ কেজি করে। এরপর আমাদের সরকার আসলে, আমাদের সরকারই আসবে, কিন্তু আপনাদের একটা করে ভোট দিতে হবে। তখন দেখবেন, আপনাদের দুয়ারে দুয়ারে আমরা খাদ্য পৌঁছে দেব। অর্থাৎ রেশন দোকানেও যেতে হবে না।
কৃষকদের জমির খাজনা আমরা মকুব করে দিয়েছি। কৃষকবন্ধুতে এখন অনেক সরলীকরণ করে দিয়েছি। এখন পরচা পরে দেখাবেন, আগে দরখাস্ত জমা দিলেই কৃষকবন্ধুতে যুক্ত হবেন। কৃষকবন্ধু হলে আপনি বছরে এক একর জমি থাকলে ৬ হাজার টাকা পাবেন, প্রান্তিক চাষি বা ক্ষুদ্র চাষি হলে হলে এটা ৩ হাজার হবে। শস্যবিমা আমরা দিচ্ছি। স্বাধীনতার ৬০ বছর পর বাংলায় মাত্র ২৫ হাজার রাস্তা হয়েছিল, আমরা আট বছরে ৯৫ হাজার রাস্তা করেছি। আরও ৪৬ হাজার রাস্তা পথশ্রী প্রকল্পতে চলছে। কোলাঘাট ব্রিজটা কতদিন পড়ে ছিল। সব আমরা করে দিয়েছি। আমরা পাট্টার ব্যবস্থা করেছি। কোনও রিফিউজি কলোনি বলতে পারবে না আমাদের স্থায়িত্ব নেই।
এখানে অনেক মন্দিরের সংস্কারের জন্যও আমরা অর্থ বরাদ্দ করেছি। বাংলায় আবাস যোজনা প্রকল্পে ৩০ লক্ষ বাড়ি তৈরি করে দিয়েছি। আমফানের ক্ষতির পর কেন্দ্র সরকার একটা টাকাও দেয়নি। আমরা নিজেদের ৮ হাজার কোটি টাকা দিয়ে ২০ লক্ষ বাড়ি ঠিক করেছি। বড় কাজ করতে গেলে কোথাও কোথাও একটু ভুলভাল হয়। দু’ একটা জায়গায় সমস্যা যদি থাকে তাঁরা দুয়ারে সরকারে আবেদন জানাবেন, মিটে যাবে। এটা নিয়ে চিন্তা করবেন না। একটার পর একটা কাজ হচ্ছে। কন্যাশ্রী, যুবশ্রী থেকে সমব্যথী সব দিচ্ছে আমাদের সরকার।
ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান তৈরি করে কেন্দ্র সরকারকে পাঠিয়েছি চার পাঁচ বছর আগে। কেন্দ্র সরকার না নড়ে না চড়ে। হোদল কুতকুতরা শুধু আসে, মেদিনীপুরে ভাষণ দিয়ে চলে যায়, আমাদের ভোট দাও ভোট দাও। ওরা না করে দিলে, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান আমাদেরই করতে হবে। ২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। কিছু কিছু জায়গায় আমরা কাজ করতে শুরু করেছি।
মেদিনীপুর জেলায় কতগুলো সমস্যা ছিল। এক তো জঙ্গলমহল লালে লাল হয়ে গিয়েছিল। সমস্ত জঙ্গলমহলের শান্তি, পাহাড়ের শান্তি আমাদের সরকার এসে ফিরিয়ে দিয়েছে। এর জন্য জনগণের কাছেও আমরাও কৃতজ্ঞ। পাশাপাশি যারা মাওবাদী রাজনীতি করতেন, সশস্ত্র ছেড়ে তাঁরা বিনা পারিশ্রমিকে, বিনা শর্তে মূল স্রোতে ফিরে এসেছেন। তাঁদেরও আমি ধন্যবাদ জানাই। তাঁদেরও প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ছেলেমেয়েকে চাকরি করে দিয়েছে এই সরকার। প্রায় ৪০ হাজার হোমগার্ড, কনস্টেবল, জুনিয়র কনস্টেবল করে দিয়েছি। আপনারা জানেন মেদিনীপুর ঢেলে সাজানো হচ্ছে। এই জেলায় মাল্টি সুপার হাসপাতাল, ৬টা কলেজ, মেদিনীপুর বিশ্ববিদ্যালয়।
৮ বছরে প্রায় এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। ৪০ শতাংশ বেকারি কমিয়েছি। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। ১৪৩টির বেশি রাস্তা, ব্রিজ, সেতু তৈরি করা হয়েছে। বেলদায় মাল্টি সুপার হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষিতীর্থ, কর্মতীর্থ- সব আছে।
বিজেপি জানে ম্যাচটা হেরে গেছে। এখন জনগণের খেলা নয়, অফিসার বদলির খেলায় নেমেছে। যারা এসেছে, আমি খুশি, তারা সবাই আমার লোক। ওদের প্ল্যান জোর করে ভোট দখল করার। বিজেপির হয়ে ভোট লুঠ করতে এলে ঢুকতে দেবেন না। ওড়িশা থেকে লোক ঢুকে ভোট লুঠ করতে এলে ঢুকতে দেবেন না।
আপনারা যদি মনে করেন সব রিজিওন্যাল পার্টিগুলিকে খতম করবেন, তাহলে কিন্তু ভুল করছেন। বাংলায় কিন্তু এর পাল্টা হবে। অফিসারকে বদল করে কী হবে? অফিসার কি ভোট দেয়? না একজন অফিসারকে বদল করে, অসম্মান করে, আরেকজন অফিসারকে সম্মান করছেন। মনে রাখবেন অফিসারদের মধ্যেও সংঘবদ্ধতা রয়েছে। তাঁরাও কিন্তু পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। যে কায়দায় আপনারা বিবেক সহায়কে সাসপেন্ড করেছেন, এক উচ্চ পদস্থ কর্তা ওঁ, এটা ইতিহাসে লেখা থাকবে। আগামী দিনে এসব নিয়ে কাজ হবে, কথা হবে। আপনাদের সঙ্গে বিজেপি বসে বসে কী কী প্ল্যান করছে, সব জানি। মনে রাখবেন ঘরের ঘর আছে।
বিজেপি দলটা এমনভাবে নির্বাচন কমিশনে হস্তক্ষেপ করছে, যেন মনে হচ্ছে ওটা বিজেপি কমিশন হয়ে গিয়েছে। আরও অনেকগুলো ডিএম, এসপি বদলে দিয়েছে বিজেপির কথা মতো। আমি বললাম সবাইকেই বদলে দেও। কিচ্ছু হবে না। কারণ যাদের বদলে আনছ, তারাও আমাদের লোক। তোমরা ভুল করছ। যাদের বদলে আনছ, তারা আরও বেশি করে আমার লোক। নির্বাচন কমিশনকে রেসপেক্ট জানিয়ে বলি, পুলিশ ইলেকশনে যেমন থাকে না, আপনারা বলেন, আপনাদের আন্ডারে। কেন্দ্রীয় সরকারের যখন নির্বাচন হয়, পুলিশ কেন আপনাদের আন্ডারে থাকে না। রাজ্যের নির্বাচনেও কেন্দ্রীয় সরকারের পুলিশ আপনাদের আন্ডারে থাকে না কেন? আপনারা বিমাতৃসুলভ আচরণ দেখাচ্ছেন, যারা বিজেপি বিরোধী দল ,তাদের প্রতি। এটা আপনাদের কাছ থেকে আমরা আশা করি না। তার জন্য আপনি আমাকে শোকজ করতে পারেন, ১০টা চিঠি দিতে পারেন। আমার যায় আসে না। আমি নির্ভীকভাবে লড়াই করি। বিজেপির লোকেরা যা বলবেন, তাই করতে হবে। বিজেপি কী দেয় আপনাদের?
ভোট মেশিন খারাপ করে বিভ্রান্ত করবে। কতগুলি বুথ ওরা বেছে নিয়েছে। ওখানে বিজেপির ভোট ভরে দেবে। খেয়াল রাখতে হবে। ভোট হয়ে গেলে মেশিন রক্ষা করতে হবে। পুলিশকে বলবেন, এটা আমার কাজ, দলের দায়িত্ব, মানুষের দায়িত্ব। আমাকে করতে দিন। আমি ভোট মেশিন রক্ষা করব। বিরিয়ানি, জল, চা, পান, বিড়ি, সিগারেট কিছু দিলে খাবেন না। মনে রাখবেন ওটায় কিছু মেশানো থাকবে।
আমরা বলেছিলাম ৫০ হাজার পুকুর কাটব, সারে তিন লক্ষ কেটেছি। হোদল কুতকুত যে বলে মমতাদি কিছু করেনি। তাহলে মমতাদি কাজে কীভাবে এক নম্বর হল। কেউ ছোটখাটো ভুল করলে মনে রাখবেন, আমফানের টাকা থেকে কেউ বাদ যাবেন না।
আমফানের নষ্ট হয়ে যাওয়া ধান আগে গরু ছাগলে খেত। কিন্তু আমরা সেটা আর নষ্ট করছি না। আমরা ওটাকে কালো চাল বানাচ্ছি। কৃষকরা প্রত্যেক মাসে ১০ হাজার টাকা করে পাবেন। বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা পাবেন। সাগরে উন্নতি করব এমন লোকে বলবে, কুম্ভের সাগর এক বার, গঙ্গাসাগর বারবার।
লোককে দেখে এমনভাবে নমস্কার করবে, যেন ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানে না। গুজরাটে, উত্তরপ্রদেশে দাঙ্গা কে করেছে? তুমি যদি মনে কর নির্বাচনের সময় নাটক করে ভুল বোঝাবে, তা হবে না। মোদীকে সরাসরি তোপ মমতার। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার হারতে জানে না। বিজেপি-কে ইঁদুরে পরিণত করবে।
বিজেপিকে এপ্রিল ফুল করে দিন। বিজেপিকে এই মাটিতে রাজনৈতিকভাবে কবর দিন। বলে পোয়াতি হলে মেয়েরা ডিম সিদ্ধ খাবে না, ওদের মাথা খাবে? সালোয়ার কামিজ পরবে না, শাড়ি পরবে না, ওরা হাফ প্যান্টুল পরিয়ে দেবে। আর ভোট চাইবে। কে কী পরবে না পরবে, তার নিজের ব্যাপার। বিজেপি আসলে বলবে মেয়েদের ঘরের বাইরে বেরোতে দেব না, মেয়েদের স্কুলে পাঠাব না। বিজেপি হল বহিরাগত গুন্ডা, দুর্যোধন, দুঃশাসনের পার্টি
ছাত্রছাত্রীদের জন্য ১০ লক্ষ টাকার ক্রেডিট কার্ড। একশো দিনের কাজে, গ্রামের রাস্তা তৈরি করতে, গ্রামীণ রাস্তা তৈরি করতে আমরা এক নম্বর। বছরে দুবার করে চার মাস দুয়ারে সরকার হবে। স্বাস্থ্য সাথী কার্ডে ভেলোরে গিয়ে চিকিৎসা করাতে পারবেন। ওরা বলেছিল ১৫ লক্ষ টাকা করে দেবে। দিয়েছে? ভোটের আগে গ্যাসের দাম ১০০ টাকা কমাবে, আবার বাড়াবে। বিনা পয়সায় চাল দেব, আর ৯০০ টাকা দিয়ে ফোটাতে হবে?
ভোট লুঠ করতে এলে হাতা খুন্তি নিয়ে তেনড়ে যাবেন। আর কসিয়ে একটা দেবেন। নির্বাচনটা দিল্লির নয়, বাংলার। বহিরাগত গুন্ডা নিয়ে এসেছে। এখানকার উত্তরপ্রদেশের লোকেদের আমি বহিরাগত বলি না, যারা বাংলায় থাকে। কিন্তু ওরা বাইরে থাকে, ওরা দিল্লির। পুলিশ ভয়ে চাকরি ছেড়ে দিচ্ছে।
পরশু দিন অমিত শাহ বাবুর একটা প্রেস মিট হল। কয়েকটা প্রেসকে ডেকে নিয়ে গেল, মিটিং করল। তারপর খাওয়ালো, ধমকাল, চমকাল। বলল, শোনো যদি সার্ভে করে দেখ তৃণমূল কংগ্রেস ২৫০ আসন পাচ্ছে, বলবে ওরা ১০০ পাচ্ছে, বিজেপি ২০০ পাচ্ছে। একটি সংবাদ চ্যানেলের নাম উল্লেখ করে বলেন, “গতকাল দেখবে ওরা দেখিয়েছে বিজেপি ১৭৫ পাচ্ছে। আরে ওরা আগে ৭৫ পা। তারপর তো ১৭৫ পাবি।” আমিও ঘুরে বেড়াচ্ছি। বাঁকুড়া আমার করা হয়ে গিয়েছি। পুরুলিয়া আমার করা হয়ে গিয়েছি। মেদিনীপুরে পশ্চিম আজও যাব। মনে রাখবেন আমি মানুষকে খুব ভাল চিনি। আর আমি এই ব্রিগেড দেখে যদি এটুকু না বুঝতে পারি, যে আপনারা আমাকে ভোট দেবেন কিনা, তাহলে তো আমার রাজনীতি করাটাই বৃথা।
আরএসএসের কিছু নেতা এসে বলবে, এই নাও ৫০০ টাকা দিচ্ছি, ভোটটা কোথায় দেবে আমি কিন্তু দেখব। আমি আপনাদের বলে দিচ্ছি, ভোট কে কোথায় দিচ্ছে, কেউ কিন্তু দেখতে পায় না। আমি বলছি, টাকা দিলে নিন। ওটা আপনাদেরই টাকা, ট্যাক্সের টাকা।
সংখ্যালঘুদের কাছে বলব, বিজেপির সঙ্গে ডিল করে সিপিএম, কংগ্রেস আরেকটা নতুন রাজনৈতিক দল এসেছে। হঠাৎ করে বিজেপি থেকে গজিয়েছে। বিজেপি টাকা দিয়ে ওদের পাঠিয়েছে। সংখ্যালঘুদের ভোট ভাগ করে নেওয়ার জন্য। আমি অনুরোধ করব, জীবন নিরাপত্তা, শান্তিতে থাকতে চাইলে আপনার একটা ভোট অন্য কাউকে দিয়ে নষ্ট করবেন না। যে সিপিএম, সেই বিজেপি। যে সংখ্যালঘুর নামে বলছে, সে বিজেপির কাছ থেকে প্রচুর টাকা নিয়েছে।
পিএম কেয়ারের নামে টাকা তুললে, কোথায় গেল টাকা? কেউ পায়নি। রেল বিক্রি করে দিচ্ছ, কোথায় টাকা? কোল বিক্রি, সেল বিক্রির টাকা কোথায় গেল? ত্রিপুরায় পিএফ তুলে দিয়েছে, ১০ হাজার শিক্ষকের চাকরি খেয়ে নিয়েছে। গ্রুপ ডি স্টাফদের ক্যাজুয়াল করে দিয়েছে।
ওরা বলে আমফানের সময় নাকি ওরা টাকা দিয়েছিল। ১৯ লক্ষ লোককে আমরা বাঁচিয়েছিলাম। আমি নবান্নে বসে পাহারা দিয়েছিলাম। নবান্নটা থরথর করে কাঁপছিল। আমি ভাবছিলাম কখন আমফানটা বিদায় নেবে। আমারা আমফানের সময়ে ৩ লক্ষ বাড়ি করে দিয়েছিলাম। ৬ কোটির মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝড়ের আগেই ১৯ লক্ষ মানুষকে সরিয়ে নিয়েছি। নরেন্দ্র মোদী একদিন ঢং করে দেখতে এল, প্লেনে করে। বলল টাকা দিয়ে গেলাম, এক হাজার কোটি টাকা। আমার প্রশ্ন এটা কার টাকা? মাছের তেলে মাছ ভাজা। আমার রাজ্য সরকারের প্রাপ্য টাকা দিয়ে বলল দিয়ে গেলাম। এক পয়সা দেয়নি। এত বড় যজ্ঞে একটা দুটো ভুল হতেই পারে। আমরা সাত হাজার কোটি টাকা দিয়েছি আমফানে। ২১ লক্ষ বাড়ি তৈরির জন্য ২ হাজার কোটি টাকা দিয়েছি। আরও রাস্তা হচ্ছে। জেটি করছি। আমরা রিলিফ সেন্টার তৈরি করেছি। আমরা ৫ কোটি ম্যানগ্রোভ গাছ পোঁতা হচ্ছে। একটা লোক যদি কারোর কাছে ৫০০ টাকা নিয়েছে, তাহলে বলছে তৃণমূল কংগ্রেসে সব চোর। আমি চোর? আমি ডাকাত? আমি খুনি? আমি মানুষকে জীবন দিয়ে ভালবাসি। তুমি শালা খুনি, ডাকাতদের সর্দার।
সেল্ফ হেল্প গ্রুপে ৫ হাজার টাকা করে পাবে। আরও ১০ লক্ষ মেয়ে নেব। তাদের ২৫ হাজার কোটি ঋণ দেব। তাঁরা যাতে নিজের পায়ে দাঁড়ায়। মাত্র ২ শতাংশ সুদের হারে ৩০ শতাংশ ভর্তুকি দেব। বিধবাদের জন্য ভাতা দেব। ১৮ বছরের পর যে কোনও বিধবাকে ১ হাজার টাকা করে ভাতা। মৎস্যজীবীদের মৃত্যু হলেও ক্ষতিপূরণ। বাড়ির মহিলাদের ৫০০ টাকা করে হাতখরচ। এসসি, এসটি মহিলাদের জন্য ১০০০ টাকা হাতখরচ।
পাথরপ্রতিমায় মমতার আশ্বাস, আড়াই হাজার টিউবওয়েল দেওয়া হয়েছে। বাংলা আবাস যোজনাতে ৩০ লক্ষ বাড়ি তৈরি করে দিয়েছি। যদি মমতা দিদিকে চাই, যা করেছি, আর কী কী করব, তাই বলে যাই। বিজেপির মতো ধান্দাবাজ নই। ক্লাস নাইনের ছেলেমেয়েরা আগামী দিনে সবুজ সাথী সাইকেল পাবে। ক্লাস টুয়েলভের ছেলেমেয়েরা স্মার্ট ফোনের জন্য ১০ হাজার টাক পাবে। দুয়ারে দুয়ারে রেশন পৌঁছবে। কৃষকদের জন্য বছরে দশ হাজার টাকা। শস্য বিমা বিনা পয়সা করে দি। কোনও কৃষক মারা গেলে ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।