কালনা: এবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে থ্রেট কালচারের অভিযোগ। ২০২১ সালের অগাস্ট মাসে শেখ মোবারক হোসেন (২৩) নামে বর্ধমান মেডিক্যালের সার্জারি বিভাগের এক জুনিয়র চিকিৎসকের মৃত্যু হয়। পরিবার দাবি, কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, কলেজ হস্টেলের তিনতলার খোলা বারান্দা থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে মোবারকের। পরিবারের দাবি, পড়ে গিয়ে মৃত্যু নয়, এটা খুনের ঘটনা। আরজি করের ঘটনার আবহে আরও একবার সামনে উঠে এসেছে ২০২১ সালের সেই ঘটনা।
মৃত ডাক্তারি পড়ুয়ার দাদা শেখ ফিরোজ আহমেদের বক্তব্য, “আমাদের ধারনা মেরে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। ছাদ থেকে পড়লে মাটিতে দাগ হবে। কোনও দাগ ছিল না। আমি নিজে চোখে তো দেখেছি। আমরা কেস করি। ডেটের পর ডেট দেয়। কিন্তু শুনানি হয়নি কোনও এক অদৃশ্য কারণে। আমার কাকার ছেলে ও। কাকার সেই আর্থিক সামর্থ্য় নেই যে বড় উকিল নিয়ে মামলা লড়বেন।”
পরিবার সূত্রে খবর, ২০২১ সালের ১১ অগস্টের রাতে সিনিয়ররা তাঁকে ডিনারের আমন্ত্রণ জানায়। সেদিন ভোরেই কলেজ হস্টেলের নিচে পড়ে থাকতে দেখা যায় শেখ মোবারককে। পরিবারের দাবি, যখন রক্তাক্ত ডাক্তারি পড়ুয়াকে উদ্ধার করা হয়, পরণে অন্তর্বাসটুকু ছিল।
পরিবার খুনের অভিযোগ তুললে সে সময় ফরেন্সিক বিভাগ গিয়েছিল ঘটনাস্থলে। ঘটনার পুনর্নির্মাণও করা হয়। আনা হয় ডামি পুতুল। ঠিক যেমন যাদবপুরের ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত এগিয়েছিল। সিআইডির হাতে তদন্তভারও দেওয়া হয়। যদিও পরিবার সিবিআই তদন্তের দাবি তোলে। আদালতেও বিষয়টি ওঠে বলে দাবি পরিবারের। তবে মামলা খুব বেশি দূর এগোয়নি।
পূর্বস্থলী-১ ব্লকের নাদনঘাটের নওপাড়ার বাসিন্দা ছিলেন শেখ মোবারক হোসেন। বাবা শেখ হাফিজুল ইসলাম ব্যবসায়ী। তিন ভাই বোনের মধ্যে মোবারক ছোট ছেলে। মোবারকের বাবা জানান, ইন্টার্নশিপ শেষে কাউন্সিলিং হয়। হাউজস্টাফ হিসাবে কাজে যোগ দেওয়ার কথা ছিল ১৬ তারিখ। তার আগেই এই ঘটনা।
মোবারকের বাবা শেখ হাফিজুল ইসলাম বলেন, “মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাকে সরাসরি খবরও দেয়নি। হাসপাতালের এক জুনিয়র পড়ুয়া মারফত খবর আসে। আমাকে জানানো হয় হাসপাতালে ভর্তি। গিয়ে দেখি মারা গিয়েছে। আমি জানতে চাই কী করে এটা হল? ওরা বলেছিল, রাতে পার্টি করেছে। অতিরিক্ত মদ খেয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যায়। আমি সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করি। বলি ওকে খুন করা হয়েছে। আঘাতের চিহ্ন ছিল শরীরে।”
মোবারকের বাবা জানান, পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে কোনও অ্য়ালকোহলের উপস্থিতি মেলেনি। ছেলেকে খুনও করা হয়েছে। তাঁর দাবি, ছেলেকে এমডি হস্টেলে পার্টিতে ডাকা হয়। জুনিয়র ডাক্তারদের মধ্যে মোবারকই একমাত্র ‘আমন্ত্রিত’ ছিল। মোবারকের বাবার অনুমান, “সিনিয়রদের সঙ্গে হয়ত কিছু গোলমাল হয়েছিল, তাই মেরে ফেলে। পরে নিচে ফেলে রেখে দেয়। ছেলের গায়ে জামা ছিল না, অন্তর্বাস পরা শুধু। এই অবস্থায় ছেলে পড়তে পারে কখনও?”
এই বিষয়ে চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী (অ্যাসোসিয়েশন অব হেল্থ সার্ভিস ডক্টর রাজ্য যুগ্ম সম্পাদক) বলেন, “এই ঘটনার সময় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন সুহৃতা পাল। অভীক দে ছিলেন ছাত্র নেতা। এরকম ডেডলি কম্বিনেশন। এরা যে কোনও অপরাধ অবলীলায় করে ফেলতে পারে। যাবতীয় যা যা ঘটেছে কোনও কিছুই সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়।”