পূর্ব বর্ধমান: অবশেষে কাউন্সেলিংয়ে বসলেন মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে পিএইচডি করতে চলেছেন অর্ণব। সোমবার সেই ভর্তিরই কাউন্সেলিং ছিল। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কাদম্বিনী গাঙ্গুলি ভবনে নিয়ে যাওয়া হয় মাওবাদী অর্ণব দামকে। সেখানে ইতিহাস নিয়ে পিএইচডির জন্য তাঁর কাউন্সেলিং হয়। কাউন্সেলিং শেষে প্রিজন ভ্যানে ওঠার আগে ইতিহাসের গবেষক ছাত্র অর্ণব দাম বলেন, “আজ কাউন্সেলিং হল। আমার পিএইচডি ভর্তি নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল আজকে আশা করি তার অবসান হল। উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার এই সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারা দফতরের আধিকারিক ও রাজ্য সরকারের সহযোগিতা ছাড়া এই জায়গায় আসতে পারতাম না। তাই তাদেরও ধন্যবাদ।”
সোমবার ঘড়ির কাঁটা তখন ঠিক দুপুর ২ টো। বাইরে বৃষ্টি পড়ছে। বর্ধমান জেলা সংশোধনাগার থেকে প্রিজন ভ্যান এসে পৌঁছল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাপবাগ ক্যাম্পাসে। গাড়ি থেকে নেমে এল সাদা পোশাকের পুলিশ। এরপরই গোলাপি শার্ট, প্যান্ট। হাতে ঝোলানো সাদা রঙের প্লাস্টিক, প্রিজন ভ্যান থেকে নেমে এলেন অর্ণব দাম।
অর্ণব দাম এক সময় খড়গপুর আইআইটিতে পড়তেন। সেখান থেকে বেরিয়ে গিয়েই মাওবাদী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন। শিলদাকাণ্ডে গ্রেফতার হন, দোষী সাব্যস্ত হয়ে যাবজ্জীবনের সাজাও পান। তবে ছোট থেকেই মেধাবী অর্ণব ইগনু থেকে ইতিহাসে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন। এরপরই জেল থেকেই পিএইচডির জন্য আবেদন করেন।
বহু কাঠখড় পুড়িয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডির প্রবেশিকায় বসার সুযোগ পান। কিন্তু সমস্ত মোড় ঘুরিয়ে দেয় এই পরীক্ষার ফলাফল। মেধা তালিকায় প্রথম নামটিই অর্ণব দামের। যিনি এক সময় ছিলেন কিষেণজির অত্যন্ত স্নেহভাজন।
এরপরই শুরু হয় জটিলতা। অর্ণবকে কীভাবে এই কোর্সে ভর্তি করানো হবে তা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে কাউন্সেলিং প্রক্রিয়াই স্থগিত করে দেয় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যাল কর্তৃপক্ষ। তবে সেই ঘটনায় হস্তক্ষেপ করেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। সংশোধনাগারে অর্ণব এক সময় কুণালের প্রতিবেশি ছিলেন। অর্ণবের পড়াশোনার প্রতি টান, সে সময় চাক্ষুষ করেছিলেন কুণাল।
কুণালই ফোন করেন শিক্ষামন্ত্রী, কারামন্ত্রী থেকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে। কুণালের ফোনে কাটে জটিলতা। সোমবার সকালেই সাংবাদিক সম্মেলন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য গৌতম চন্দ্র বলেন, আজই ইতিহাস বিভাগের পিএইচডির ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হবে। জানান, শনিবার সকালে কুণাল ঘোষ তাঁকে ফোন করে নিজেকে প্রাক্তন সাংসদ হিসাবে পরিচয় দিয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করার কথা বলেন।
এতদিন হুগলি সংশোধনাগারে ছিলেন অর্ণব। রবিবারই হুগলি জেলা সংশোধনাগার চুঁচুড়া থেকে বর্ধমান জেলা সংশোধনাগারে আনা হয় অর্ণবকে। রবিবার থেকেই অর্ণব কার্যত বর্ধমান জেলের আবাসিক হয়েছেন। তবে অর্ণব দাম কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে ক্লাস করবেন, সেই বিষয়ে উপাচার্য কার্যত অন্ধকারে। তার নিরাপত্তা নিয়েও কিছু বলতে পারেননি তিনি।
ইতিহাস বিভাগের প্রধান সৈয়দ তানভীর নাসরিন বলেন, “ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে গেল। এরপর তাঁকে শুধুমাত্র ফি জমা দিতে হবে। ১৯ জুলাই তাঁকে ফি জমা করতে হবে। তবে তার জন্য তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ে না এলেও চলবে। অনলাইনে ফিজ জমা করা যাবে।”