বর্ধমান: জিপ গাড়িতে নম্বর প্লেট লাগিয়ে গড়গড়িয়ে ছুটছে বোলেরো গাড়ি। তাও আবার পশ্চিমবঙ্গ সরকার লেখা। যে চারচাকা গাড়িটি নিয়ে এত হইচই সেটি পূর্ব বর্ধমানের ‘জামালপুর ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসের’। গাড়িটিতে যে নম্বর প্লেট লাগানো রয়েছে, সেই নম্বর প্লেট অনুযায়ী ‘বোলেরো মডেল’ পাশাপাশি গাড়িটির গায়ে সামনের দুই জায়গায় এবং পিছনের দরজার কাচের উপরে লাল রঙের বড় বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে ‘Government Of West Bengal’ তবে গাড়িটিকে দেখে বোঝারই উপায় নেই তার সর্বাংশ জালিয়াতিতে ভরা ।
গাড়িটির সরকারি চালক অনিল মুর্মু। বিডিও অফিসের সরকারি আমলারা সরকারি তেল খরচে চলা ওই গাড়িতে চেপেই প্রশাসনিক কাজ মেটান। এছাড়াও জেলাশাসকের অফিস,মহকুমা শাসকের অফিস সহ জেলার বিভিন্ন সরকারি দফতরে যাতায়াতের ক্ষেত্রেও ওই গাড়িটি ব্লকের আমলাদের ভরসা। লোকসভা নির্বাচনের সময় নির্বাচনী কাজে নিযুক্ত সরকারি আমলারা ওই গাড়িটিকে পুরো মাত্রায় ব্যবহারও করেন। সেই সময় গাড়িটির পিছনে যে দুর্নীতি হয়েছে বিষয়টি কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক জওয়ানের নজরে আসে। তার থেকেই গাড়িটি চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় ।
এক সময়ে জামালপুর বিডিও অফিসের জন্য বরাদ্দ ছিল ২ টি জিপ। তার মধ্যে একটি জিপ গাড়ি বিকল হয়ে যায়। ফলে অনেকদিন আগেই সেটিকে কাটাইয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ওই জিপটির পরিচিতি এখন শুধুমাত্র বিডিও অফিসের পুরনো নথিতেই আছে। অন্য বিকল ১টি জিপ গাড়ি এখনও বিডিও অফিসের গ্যারেজে। সেই গাড়িটিতে এখনও নম্বর প্লেট লাগানো রয়েছে। এই নম্বরের গাড়িটি দীনবন্ধু দে নামে বিডিও অফিসেরই সরকারি চালক চালাতেন। জামালপুর বিডিও অফিসে এখন একজনই সরকারি চালক রয়েছেন। তিনি অনিল মুর্মু। গাড়িটিতে লাগানো থাকা নম্বর প্লেটে উল্লিখিত নম্বরটি আসলে হল জিপ গাড়ির নম্বর। কিন্তু বিরোধীদের দাবি, বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্যে সরকারি অর্থ খরচ করে ওই জিপ গাড়িটির রূপ বদলে দিয়ে সেটিকে বোলেরো গাড়ির রূপ দেওয়া হয়েছে।
গোটা বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর গাড়িটির চালক অনিল মুর্মু অবশ্য আর সত্য ধামাচাপা দিতে পারেননি।ক্যামেরার সামনে মুখ না খুললেও তাঁকে গাড়িটির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি স্বীকার করে নেন, WGJ 2585 নম্বরের গাড়িটি আসলে জিপ গাড়ি। জেলার আউসগ্রাম ১ নম্বর ব্লক প্রশাসনের কাছে আবেদন করে গাড়িটি সেখান থেকে জামালপুর বিডিও অফিসে আনা হয়েছিল। তার পর ওই জিপ গাড়িটি গ্যারেজে পাঠিয়ে তার ইঞ্জিন সহ অনেক কিছু বদলে দিয়ে গাড়িটিকে ডিজেল চালিত বোলেরো গাড়ির মডেলে করানো হয়। তবে গাড়ির মডেল চেঞ্জ করা হলেও গাড়িতে জিপ গাড়িটারই নম্বর প্লেট লাগানো হয়।
কিন্তু যে গাড়িকে সরকারি খরচে এত অভিনব রূপ দেওয়া হল,সেই গাড়ির কোনও তথ্য পরবহন দফতরের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে না কেন? প্রশ্নের উত্তরে অনিল মুর্মু বলেন, “গাড়িটির ইঞ্জিন ,চ্যাসিস এবং মডেল বদলে দেওয়া হয়েছে বলেই হয়তো পরিবহন দফতরের ওয়েবসাইটে গাড়িটির তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। এই বিষয়ে জামালপুরের বিডিও পার্থসারথি দে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “আমি ব্লকের দায়িত্ব নেওয়ার আগে থেকেই গাড়িটি চলছে। গড়িটির বিষয়ে আমি সবিস্তার খোঁজ খবর নেব।”