দবর্ধমান: বাড়ির পাশেই সব বাড়িতে তখন গাঁক গাঁক করে টিভি চলছে। চলছে বিশ্বকাপের ফাইলাল ম্যাচ। সকলের মধ্যে টানটান উত্তেজনা। পাড়ার ছেলেদের চিৎকার চেঁচামেচি চলছে। আর তার পাশেই ঘরের মধ্যে এমন ঘটনা ঘটে যাবে পাড়ার বৌদির সঙ্গে, তা ভাবতেও পারেননি কেউ। ঘরের দরজা খুলে ‘বৌদি’র বোন যখন বিষয়টা দেখেন, শরীর দিয়ে হিমস্রোত বয়ে যায়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ চলাকালীন ঘরের ভিতর থেকে গৃহবধূর গলার নলি কাটা দেহ উদ্ধার হয়েছে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়াল পূর্ব বর্ধমানের মেমারিতে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত গৃহবধূর নাম প্রতিমা চক্রবর্তী (৩৮)।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মেমারির সুলতানপুরের বাসিন্দা হৃদয় চক্রবর্তী রাঁধুনির কাজ করেন। তাঁর স্ত্রীর নাম প্রতিমা। হৃদয় বাইরে কাজে যাওয়ার পর থেকে বাড়িতে একাই ছিলেন তাঁর স্ত্রী প্রতিমা।পরিজনের দাবি, শনিবার রাত ৮ নাগাদ মেমারির চকদিঘিমোড় এলাকায় বোনের দোকানে যান প্রতিমা চক্রবর্তী। প্রতিমার বোনের দাবি, কিছুক্ষণ পর দিদি তাঁর নিজের বাড়িতে ফিরেও যান।
এরপর রাত ১০টা নাগাদ বোন বাড়ি ফিরে ‘দিদি’কে দীর্ঘক্ষণ ডাকাডাকি করেন। কিন্তু তাঁর সাড়া পাননি। পাড়ার মোড়ে খেলা দেখার জন্য তখন অনেকেই ছিলেন। ডাকাডাকি করতেই তাঁরা চলে আসেন। তাঁরাও ডাকতে থাকেন, ‘বৌদি চা দাও তো… দরজাটা খোলো…’ কিন্তু কোনওভাবেই সাড়া পাননি তাঁরা। বিপদ আঁচ করেই দরজা ভেঙে ঢুরতেই তাঁরা দেখেন, গলার নলি কাটা রক্তাক্ত অবস্থায় বাড়ির মেঝেতে পড়ে রয়েছেন প্রতিমা। এরপর পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে প্রতিমা চক্রবর্তীকে। কে বা কারা কী উদ্দেশ্যে এই খুন করল, তা খতিয়ে দেখছে মেমারি থানার পুলিশ। মৃতার বোন বুলবুল মজুমদার বলেন, “দোকান বন্ধ করে দিদির বাড়িতে ঢুকে দেখি, দিদি রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। জামাইবাবু হৃদয় রান্নার কাজ করেন। শনিবার সকালে টুরিস্ট বাসে করে দিঘা গিয়েছেন রান্নার কাজে।” মৃতার আরেক বোন সজনী চৌধুরী বলেন, “দিদির সঙ্গে কারও কোনও বিবাদ বা ঝামেলা ছিল না। ওর কোন সন্তান নেই । বাড়িতে একাই ছিল।”
তবে এর পিছনে বিবাহ বহির্ভূত কোনও বিষয় রয়েছে কিনা, নাকি চুরি ডাকাতি করতে গিয়ে বাধা পেয়ে খুন, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। তবে পুলিশ মনে করছে, অপরাধী প্রতিমার পরিচিত। কারণ দরজা খুলে তিনি নিজেই হয়তো অভিযুক্তকে ভিতরে ঢুকিয়েছিলেন। দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল।