বর্ধমান: বেলা চারটে। আদালত চত্বরে ঠাসা ভিড়। সেই সময় টাউন স্কুলের গেটের দিকে জিআরও অফিসের পিছনে রাস্তায় এক যুবকের সঙ্গে কয়েকজনের ধস্তাধস্তি শুরু হয়। অনেকেই মারপিট বলে ছাড়াতে যান। দৃশ্যপট এমন, সেই সময় একজন নিজেকে পুলিশ কর্মী বলে পরিচয় দেন। যুবককে তিনি কোমড় জাপটে ধরেন। ওই যুবক নিজের প্যান্টের পকেটে হাত ভরে কিছু বার করতে যায়। যুবকের পকেটে আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে বলে চিৎকার শুরু করেন ওই পুলিশ কর্মী। চারপাশ থেকে আরও কয়েকজন সাদা পোশাকের পুলিশ যুবকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। কেউ যুবকের হাত ধরেন, কেউ ধরেন পা। এক দুঁদে অফিসার চোখে আঙুল ভরে যুবককে কব্জা করেন। বহু কষ্ট করেও যুবকের পকেট থেকে হাত বের করতে পারছিলেন না পুলিস কর্মীরা। শেষমেশ অবশ্য বিস্তর টানাটানির পর যুবককে কব্জা করতে সক্ষম হন পুলিশ কর্মীরা। বর্ধমান আদালত চত্বরে হুলস্থুল কাণ্ড।
আদালত চত্বর থেকে এক যুবককে বাগে আনতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। পুরো দৃশ্য দেখতে ভিড় জমে যায় আদালত চত্বরে। রাস্তার পাশেও বহু মানুষ দাঁড়িয়ে পড়েন। যেন কোনও হিন্দি সিনেমার শ্যুটিং চলছে।
বিষয়টা ঠিক কী হয়েছে?
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবারই দ্বিতীয় ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে একটি ডাকাতির মামলার শুনানি ছিল। সেই মামলায় ৪ জন অভিযুক্ত। অন্য একটি মামলায় তাঁদের দশ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়েছে। সেই মামলার শুনানিতে সাজাপ্রাপ্তদের নাম অজয় দাস, রীতেশ কুমার রাম, সঞ্জিত কুমার বিন্দ ও রঞ্জিৎ কুমার বিন্দদের সঙ্গে আদালতের লকআপে দেখা করার জন্য ওই যুবক এসেছিলেন বলে অনুমান আইনজীবীদের একাংশের।
কিন্তু, বিষয়টি চাউর হওয়ার পরই আতঙ্ক ছড়ায় আদালতের কর্মী, আইনজীবী ও ল’ক্লার্কদের মধ্যে। তদন্তে জানা যায়, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে যে যুবক এসেছিলেন, তাঁর নাম শেখ রজ্জাক। কলকাতার ট্যাংরা থানার ডিসি দে লেনে তাঁর বাড়ি। তাঁর কাছ থেকে একটি নাইন এমএম পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন উদ্ধার হয়েছে। ম্যাগাজিনে তিন রাউণ্ড গুলিও ছিল। পুলিশ ওই যুবককে গ্রেফতার করেছে। ধৃতকে শনিবার বর্ধমান সিজেএম আদালতে পেশ করা হয়। আরও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে এবং তার মোটিভের বিষয়ে জানতে ধৃতকে ৭ দিন নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়ে আদালতে আবেদন জানায় পুলিশ। সেই আবেদন মঞ্জুর করেন ভারপ্রাপ্ত সিজেএম।