বর্ধমান: যখনই রান্নার লোক আসতেন, তখনই নাকি তাঁর স্বামী রান্নাঘরের সামনে দিয়ে ঘুরঘুর করতেন। কখনও বলিয়ে কইয়ে রান্নাও করাতেন। কিন্তু সেটা পছন্দ হত না স্ত্রীর। একাধিকবারে স্বামীকে বুঝিয়েছিলেন। কিন্তু আচরণে কোনও বদলই আসছিল না স্বামীর। সন্দেহ দানা বাঁধে আরও, যখন বাড়ির বারান্দায় পরিচারিকার সঙ্গে বসে চা খান স্বামী। স্ত্রীর মনে সন্দেহ হতে থাকে পরিচারিকার সঙ্গেই সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন তাঁর ঘরের লোক। আর কেবল সন্দেহের বশেই ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত নিলেন গৃহকর্ত্রী। পরিচারিকার গলার নলি কেটে খুনের অভিযোগ উঠল এক মহিলার বিরুদ্ধে। শিউরে ওঠার মতো ঘটনা বর্ধমানের মন্তেশ্বরের মামুদপুর এলাকায়। নিহতের নাম শান্তি হাজরা (৬০)। অভিযুক্ত গৃহকর্ত্রী ভারতী রায়কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মামুদপুর এলাকায় স্বামীর সঙ্গে থাকতেন ভারতী। তাঁদের বাড়িতে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে পরিচারিকার কাজ করতেন বছর ষাটেকের শান্তি। প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, ওই বাড়িতে নিত্য অশান্তি লেগে থাকত। ভারতী তাঁর নিজের স্বামীকে সন্দেহ করতেন। এমনকি বাড়ির পরিচারিকার সঙ্গেও তাঁর স্বামীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল বলে সন্দেহ করতেন। এই নিয়ে নিত্য অশান্তি হত তাঁদের বাড়িতে। স্বামীকে পরিচারিকার সঙ্গে কথা বলতেও নিষেধ করে দিয়েছিলেন ভারতী। শান্তিকে একাধিকবার কাজ থেকে ছাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তিনি তা পারেননি স্বামীর বাধায়।
এর ফলে তাঁর সন্দেহ আরও গাঢ় হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবারও নির্দিষ্ট সময়ে ভারতীর বাড়িতে কাজে এসেছিলেন শান্তি। তাঁদের বাড়িতে সেদিন অবশ্য কোনও চিৎকার চেঁচামেচি হয়নি, দাবি স্থানীয়দের। সন্ধ্যায় শান্তিকে পড়শিরা বাড়ি থেকে বের হতে দেখেছিলেন। তাঁরা ভেবেছিলেন কাজ শেষে বেরিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু রাতেই একটা ফাঁকা মাঠ দিয়ে ভারতীকে হেঁটে আসতে দেখেছিলেন প্রতিবেশীরা। তাঁর শাড়িতে চাপ চাপ রক্তের দাগ লেগে ছিল। তা দেখেই সন্দেহ হয় প্রতিবেশীদের। এরপর ভারতী চেপে ধরে প্রশ্ন করতে থাকেন তাঁরা।
প্রতিবেশীদের চাপে কার্যত ভেঙে পড়েন ভারতী। এরপর ফাঁকা ওই মাঠ ধরেই এগোতে থাকেন স্থানীয়দের কয়েকজন। তখন শান্তি হাজরার রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। তাঁর গলার নলি কাটা ছিল বলে স্থানীয়রা জানাচ্ছেন। খবর দেওয়া হয় মন্তেশ্বর থানায়। এরপর পুলিশ ভারতীকে গ্রেফতার করে। দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়।
ভারতীর এক্ষেত্রে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে পড়শিরা বলছেন, “ওদের বাড়িতে অশান্তি হতই। স্বামী সন্দেহ করতেন মহিলা। ভাবতেন বাড়ির কাজের লোকের সঙ্গে স্বামীর সম্পর্ক রয়েছে। সত্যি না মিথ্যা তা তো বলতে পারব না। তবে সন্দেহ এমন একটা রোগ, যা চেপে ধরলে মানুষ শেষ… এটা তারই ফল।”