বর্ধমান: হাড়হিম ঘটনা। থানার সামনেই গায়ে আগুন দিয়ে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা প্রৌঢ়ের। এই ঘটনায় সোমবার বিকেলে ব্যাপক চাঞ্চল্য পূর্ব বর্ধমানের ভাতার থানা চত্বরে। গুরুতর জখম অবস্থায় উদ্ধার করে অগ্নিদগ্ধ ব্যক্তিকে ভর্তি করা হয়েছে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে নিয়ে আসা হয় এসএসকএম (SSKM)।
জানা গিয়েছে, বাড়ির পাশেই বিশাল আয়তনের পুকুর। সেই পুকুরে কয়েক বছর আগেই মাছচাষ করেছিলেন হোটেল ব্যবসায়ী সুশান্ত দত্ত। কিন্তু তারপর থেকেই ওই পুকুরের মালিকানা নিয়ে চলছিল টানাপোড়েন। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। আর পুকুরের দখল নিতে না পারায় দীর্ঘকাল ধরেই প্রচণ্ড মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন সুশান্ত বলে জানান পরিবারের সদস্যরা।
সোমবার বিকেলে ভাতার থানার গেটের কাছে নিরবিলি জায়গা খুঁজে গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি। সারা শরীর যখন দাউদাউ করে পুড়ছিল, তখনই ভাতার থানার পুলিশ কর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়রদের নজরে পড়ে। তড়িঘড়ি থানা থেকে কম্বল বের করে চাপা দিয়ে আগুন নেভান। পুলিশ তাঁকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। জানা গিয়েছে, সুশান্তবাবুর অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক।
পরিবার সূত্রে খবর, কুলচন্ডা মৌজায় ৯৯৩ দাগ নম্বরে ১ একর ৭৩ শতক আয়তনের এই পুকুরটি একটি পরিবারের কাছে বছর আটেক আগে তিনি কিনেছিলেন। তারপর তাঁদের নামে রেকর্ড পরিবর্তনও হয়ে গিয়েছিল। পুকুর কেনার পর ২০১৯ সালে সুশান্তবাবু পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেন। কিন্তু তারপর থেকেই শুরু হয় সমস্যা।
জানা গিয়েছে সন্তোসের নামে থাকা ওই পুকুরটি খাস জমিতে দাবি করে আদালতে মামলা করেন স্থানীয় কয়েকজন। তারপর থেকেই জটিলতার সূত্রপাত। সেই থেকেই পুকুরের উপর দখল সুশান্তবাবুর ছিল না। যদিও সেখানে মাছও কেউ ধরতে যায়নি। কলকাতা উচ্চ আদালতে মামলা চলছিল। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতা উচ্চ আদালত থেকে সম্প্রতি বর্ধমান জেলাশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয় ওই পুকুর নিয়ে জটিলতার বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে। জেলাশাসক গত ২৭ ফেব্রুয়ারি এবং গত ৩ মার্চ দুদফায় শুনানিতে ডাকেন। সর্বশেষ শুনানির পর জেলাশাসক কেসটি খারিজ করে দেন এবং ওই পুকুরের মালিকানা সুশান্ত দত্ত দের নয় বলে জানানো হয়। এরপর সোমবার বিকেলে ‘বাজারে যাচ্ছি ‘ বলে সুশান্তবাবু বেড়িয়ে যান। তারপর থানার সামনেই গায়ে আগুন ধরান। কাছাকাছি কেউ না থাকায় বাধা পাননি। আহতের ভাই তাপস দত্ত বলেন, “আমাদের একটা পুকুর নিয়ে দীর্ঘদিন ঝামেলা চলছে। সেইটা নিয়েই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। আজ বাজার যাচ্ছি বলে বের হন দাদা। তারপর শুনছি গায়ে আগুন দিয়ে দিয়েছে।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, থানা চত্বরে ঢুকে আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনায় পুলিশ একটি মামলা রুজু করেছে। এ দিকে, সুশান্তবাবুর অবস্থা খারাপ হওয়ায় বর্ধমান মেডিকেল কলেজ এবং সেখান থেকে গ্রিন করিডোর করে নিয়ে আসা হয় এসএসকেএম হাসপাতালের ট্রমা কেয়ারে ভর্তি করা হয়েছে।