বর্ধমান: দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। প্রথমে বন্ধুত্ব, তারপর প্রেম। দুই বাড়ি থেকেই সম্পর্ক মেনে নিয়েছিল। কিন্তু তারপরও আচমকা বেঁকে বসে মেয়ের বাড়ির লোক। তবুও হাল ছাড়েননি বছর আঠাশের যুবক। নিত্য যাতায়াত করতে প্রেমিকার বাড়িতে। তাঁর পরিবারের সদস্যদের বোঝানোর চেষ্টা করতেন। মঙ্গলবার রাতেও গিয়েছিলেন। কিন্তু ভয়ঙ্কর অবস্থায় প্রেমিকার বাড়ির উঠোন থেকে উদ্ধার হলেন তিনি। হাত দুটো জোড়া করে বাঁধা। মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছেন। প্রেমিকার বাড়ি থেকেই এক যুবকের দেহ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়াল পূর্ব বর্ধমানের মেমারিতে। যুবকের পরিবারের অভিযোগ, খুন করা হয়েছে তাঁদের ছেলেকে। মৃত যুবকের নাম শুভ শীল (২৮)। বাড়ি মেমারির পারিজাত নগর এলাকায়।
পারিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার এক তরুণী প্রিয়াঙ্কা কীর্তনিয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিল শুভর। প্রথমে না জানলেও পরে দুই বাড়ির সদস্যরাই তা জানেন ও মানেন। দুই বাড়ির লোকেদের মধ্যে যাতায়াতও ছিল আগে। পরে বাড়ির লোকেদের যাতায়াত কমে যায়। তবে প্রেমিকার বাড়িতে যাতায়াত ছিল শুভর। শুভ চাকরির খোঁজ করছিল। চাকরি পেলেই বিয়ের দিন ঠিক করা হত।
অভিযোগ, এসবের মাঝেই গত কয়েক মাস ধরে মেয়েটি শুভর সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চাইছিলেন না। তাঁর বাড়ির লোকও শুভর ওপর চাপ সৃষ্টি করত বলে অভিযোগ। বাড়ির শুভ তাঁর প্রেমিকার বাড়িতে গিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করতেন। মঙ্গলবার যান। পরিবারের সদস্যরা জানাচ্ছেন, রাত দেড়টা নাগাদ প্রিয়াঙ্কার বাড়ির লোকই শুভর মাকে ফোন করে জানান যে, তাঁদের ছেলে বাড়ির উঠোনে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান শুভর দাদা। দেখেন হাত দড়ি দিয়ে বাঁধা ছিল। শুভর পরিবারের তরফ থেকে খুনের অভিযোগ তোলা হয়। পারিজাতনগরের উদয়পল্লির প্রেমিকার বাড়ি উঠোন থেকে যুবককে উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পরপরই অভিযুক্ত প্রেমিকার বাড়িতে ভাঙচুর করেন প্রতিবেশীরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন বর্ধমান সদর দক্ষিণ এসডিপিও সুপ্রভাত চক্রবর্তী। বিশাল বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এলাকার মানুষজন প্রেমিকা এবং তাঁর পরিবারকে গ্রেফতারের দাবিতে মেমারি তারকেশ্বর রোড অবরোধ করেন। পরে পুলিশ অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
পরিবারের অভিযোগের পরিপেক্ষিতে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছে মেমারি থানার পুলিশ। শুভর দাদা বলেন, “মেয়েটা আমাদের বাড়িতে আসত। কিন্তু ইদানীং মেয়ের বাড়ির লোক শুভকে মানছিল না। প্রিয়াঙ্কার বাবা-মা দাদা বাড়িতে ডেকে টর্চার করত শুভর ওপর। ওরা আসলে পথের কাঁটা সরাতে চেয়েছিল। ওরাই মেরে দিয়েছে।” মেয়েটির পরিবারের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।