
কালনা: ওরা রাঁধে, ওরা চুলও বাঁধে। তাই বলে লেদ কারখানায় লোহা পেটাইয়ের কাজ ওরা পারবে নাকি! সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন সহকর্মীরা। আর সেটাকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলেন কালনার রিয়া। বয়স ২৯। ঘরে রয়েছে স্বামী ও এক ৬ বছরের সন্তান। ওই এলাকার একটি লেদ কারখানায় গেলেই দেখা যায়, কীভাবে অনায়াসে লোহা পেটাচ্ছেন রিয়া। ‘তার সোজাসাপ্টা কথা, সমাজকে দেখিয়ে দিতে চেয়েছি।’
বর্তমানে যুদ্ধবিমানের ককপিটেও দেখা যায় মহিলা পাইলট। তবে লেদ কারখানায় একজন মহিলাকে লোহা লক্কর পেটাতে দেখা যায় না খুব একটা। পুরুষরা সেই কাজে দক্ষ, ধারণা এমটাই। আর সেই ধারণাই বদলে দিতে চেয়েছেন রিয়া। কিন্তু কেন এমন কাজ বেছে নিলেন তিনি?
কালনা শহরের জিউ ধারা এলাকার বাসিন্দা রিয়া ধারার অভাবের সংসার। স্বামী তপন পাল পেশায় রাজমিস্ত্রি। তবে সংসার চালাতে কাজ করেন রিয়াও। তিনি জানান, বছর কয়েক আগে অভাবের তাড়নায় রিয়া একটি লোহার কারখানায় কাজ শুরু করেছিলেন। তখন তাঁকে শুনতে হয়েছিল নানা কটূক্তি। একজন মেয়ে হয়ে লোহার কারখানার কাজ করতে পারবে না, বেশিদিন হবে না। এমন অনেক কথা শুনতে হত তাঁকে। এরপর সেই কাজটাই হয়ে ওঠে রিয়ার জেদ।
শুধুমাত্র নারী বলেই কি তাচ্ছিল্য! এই কাজ কেন পারবেনা সে! এই প্রশ্ন নিয়েই ৩ বছর আগে সেই কারখানার কাজ ছেড়ে একটি লেদ কারখানায় কাজ নেন রিয়া। হাতে তুলে নেন ভারী লোহার হাতুড়ি। লেদ কারখানার মালিকের তত্ত্বাবধানে শিখে নেন কাজ। হয়ে ওঠেন একজন দক্ষ লেদ মিস্ত্রি। বর্তমানে ভারী হাতুড়ির আঘাতে শেপিং করেন বিভিন্ন যন্ত্রাংশের। অবলীলায় আগুন হাতে নিয়েই সারেন ওয়েল্ডিং-এর কাজও।
স্বামী কাজে বেরিয়ে গেলে রান্নাবান্না সেরে একমাত্র সন্তানকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে প্রতিদিনই নিয়ম করে লেদ কারখানায় যান রিয়া। তিনি বলেন, “অভাব থাকলেও স্বাচ্ছন্দ্য কিছুটা ফিরেছে। যে চ্যালেঞ্জ আমি নিয়েছিলাম, তাতে মানসিক শান্তি ফিরেছে। আমি খুশি।” লেদ মালিক মধুসূদন হালদার জানান, একজন মহিলাকে লেদের কাজ শেখাতে পেরে তিনিও গর্বিত।