Rath Yatra 2025: ‘জগন্নাথ দেবেরও হাত নেই, আমারও নেই’, বছরের পর বছর পা দিয়েই ব্ল্যাক বোর্ডে লিখে বাচ্চাদের পড়াচ্ছেন বর্ধমানের জগন্নাথ

Purba Bardhaman: তিনি বলেন, "আমার জীবন বদলে দেওয়া মানুষ ছিলেন শিক্ষাগুরু স্বর্গীয় ভূতনাথ পাল। উনি আমার বাড়ি গিয়ে আমাকে স্কুলে নিয়ে যেতেন। পায়ের আঙুলের মাঝে পেন্সিল গুঁজে স্লেটে লেখা শিখিয়েছিলেন। সেই থেকেই শুরু আমার পথচলা।"

Rath Yatra 2025: জগন্নাথ দেবেরও হাত নেই, আমারও নেই, বছরের পর বছর পা দিয়েই ব্ল্যাক বোর্ডে লিখে বাচ্চাদের পড়াচ্ছেন বর্ধমানের জগন্নাথ
জগন্নাথ বাউরীImage Credit source: Tv9 Bangla

| Edited By: অবন্তিকা প্রামাণিক

Jun 26, 2025 | 4:45 PM

বর্ধমান: নাম জগন্নাথ। পেশায় শিক্ষক। দুটো হাতই নেই তাঁর। ঠিক জগন্নাথ দেবের মতোই। আর তাই ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই জগন্নাথ দেবের রথের দড়ি টানার। রথযাত্রা এলেই মনে পড়ে না-পারার সেই বেদনার ছবি। তবুও থেমে থাকেন না জগন্নাথ। এগিয়ে যান। লড়ে যান। দুই হাতে নেই স্পর্শ করার সাধ্য, তবুও জগতকে টেনে নেন নিজের ইচ্ছার রথে। কারণ তিনি নিজেই দৃষ্টান্ত। শারীরিক সীমাবদ্ধতা যে  কোনও বাধা নয়, যদি লক্ষ্য থাকে স্থির। আজ সেই জগন্নাথই হয়ে উঠেছেন শিক্ষার কারিগর। নিজের প্রতিটি পদক্ষেপে অনুপ্রেরণা জাগান অসংখ্য হৃদয়ে। তিনি জগন্নাথ বাউরি। বর্তমানে পড়াচ্ছেন জয়কৃষ্ণপুর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখানেই প্রধান শিক্ষক পদে কর্মরত তিনি।

পূর্ব বর্ধমান জেলার আউসগ্রাম-১ ব্লকের বেলেডি গ্রামে বাড়ি জগন্নাথ বাউরীর।
জন্ম থেকেই দু’টি হাত নেই তাঁর। কিন্তু সেই অক্ষমতা আটকাতে পারেনি তাঁকে। ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি তিনি শিক্ষকতা পেশায় নিযুক্ত হন। আজ তিনি একজন আদর্শ শিক্ষক। যার শিক্ষাদানের নেশা অন্যদের চেয়ে কম কিছু নয়। নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে জগন্নাথ বাবু বলেন, “জন্ম থেকেই আমার দুটো হাত নেই। কিন্তু আমি অসুবিধা বলতে কিছু বুঝি না। মনোবলই আমার ঈশ্বর।”

তিনি বলেন, “আমার জীবন বদলে দেওয়া মানুষ ছিলেন শিক্ষাগুরু স্বর্গীয় ভূতনাথ পাল।
উনি আমার বাড়ি গিয়ে আমাকে স্কুলে নিয়ে যেতেন। পায়ের আঙুলের মাঝে পেন্সিল গুঁজে স্লেটে লেখা শিখিয়েছিলেন। সেই থেকেই শুরু আমার পথচলা।”

প্রথমে মা-ও ছিলেন সংশয়ে। ছেলে লড়বে কী করে জীবনের লড়াই? কিন্তু শিক্ষক ভূতনাথ পালের দৃঢ় উচ্চারণ ছিল, “এটা আমার চ্যালেঞ্জ। আমি লেখাপড়া শেখাবোই।” সেই চ্যালেঞ্জ আজ বাস্তব।

রথযাত্রা উপলক্ষে আবেগঘন কণ্ঠে তিনি বলেন, “বাবা জগন্নাথেরও তো দুটো হাত নেই, আমারও নেই। রথ টানতে বড় ইচ্ছে করে। কিন্তু ভগবান আমায় হাত দেননি। রথ আমি টানবো কীভাবে?”

শিক্ষকতার শুরুতে অভিভাবকেরা জগন্নাথ বাউরীর স্কুলে পড়ানো নিয়ে সংশ্রয়ে ছিলেন। যার হাত নেই সে কীভাবে বাচ্চাদের পড়ালেখা সেখাবে? তাই ছাত্রছাত্রীদের যখন জগন্নাথ বাউরী পড়াতেন তখন অভিভাবকেরা ভ্রু উঁচু করে জানালা থেকে উঁকি দিয়ে দেখতেন। আর মাস্টারমশাইয়ের পড়ানো দেখে মুগ্ধ অভিভাবকেরা। পড়াশোনার পাশাপাশি জগন্নাথবাবুর ছাত্রছাত্রীদের প্রতি দায়বদ্ধতা মন কাড়ে অভিভাবকদের।
জগন্নাথবাবুর সান্নিধ্য পেয়ে আপ্লুত স্কুলে তার সহশিক্ষকরাও। রুমানা মণ্ডল (সহ শিক্ষিকা বলেন, “আমি যখন প্রথম এখানে আসি ভাবতাম দাদা কীভাবে কাজ করবেন। কিন্তু উনি যে ভাবে লড়াই করেন তাতে হ্যাটস অফ।” অভিভাবক মনিকা মাঝি বলেন, “জগন্নাথ স্য়রের মন খারাপ লাগে। কিন্তু আমাদের মনে হয় উনি দেবতা। রথের মধ্যে যেন স্যরকে দেবতা হিসাবে বসানো হয়। যেভাবে উনি লড়ছেন ওঁকে দেবতার আসনেই বসানো উচিত।”