
বর্ধমান: ফের পুলিশের উপর ক্ষোভ উগরে দিলেন রাজ্যের গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী। একই সঙ্গে দিলেন মন্তেশ্বর থানা ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দিলেন তিনি। মন্তেশ্বর থানার আইসিকে পক্ষপাতহীন হওয়ার এবং গভীর রাতে গৃহস্থের বাড়িতে গিয়ে দরজা ঠোকা বন্ধ করার বার্তাও দিয়েছেন রাজ্যের ক্যাবিনেট মন্ত্রী।
সম্প্রতি, বীরভূমের কোর কমিটির আহ্বায়ক অনুব্রত মণ্ডল বোলপুর থানার আইসিকে কদর্য ভাষায় হুমকি দেন। তা নিয়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। তারপর আবার গত শনিবার বীরভূম জেলার পুলিশ সুপার আমনদীপকে নিশানা করে অনুব্রত মণ্ডল তীব্র ক্ষোভ উগরে দেন। তিনি অভিযোগ করেন, “মুখ্যমন্ত্রীর ছবিতে কালি লাগানো, একের পর এক তৃণমূল নেতা খুন এইসব আগে বীরভূমে ছিল না। এই পুলিশ সুপার আসার পর থেকেই এই সংস্কৃতি শুরু হয়েছে।” অনুব্রতর পথ ধরে ওই দিনই অর্থাৎ শনিবার সন্ধ্যায় মন্তেশ্বর থানার আইসির বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীও। এমনকী, তিনি আইসির বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভও উগরে দেন।
মন্তেশ্বর বিধানসভার অধীন মেমারির সাতগেছিয়া এলাকায় রয়েছে সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর বিধায়ক কার্যালয়। ‘পাড়ায় সমাধান’ কর্মসূচি নিয়ে শনিবার সেখানেই দলের নেতা ও কর্মীদের নিয়ে আলোচনা সারেন। আলোচনা শেষে মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী মন্তেশ্বর থানার আইসির বিরুদ্ধে সরব হন। একই সঙ্গে তিনি নাম না করে ওই দিন মন্তেশ্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আহমদ হোসেন শেখকেও নিশানা করেন। বস্তুত, চলতি বছরের ৩ জুলাই নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী ও আহমদ হোসেন শেখের সম্পর্ক সাপে নেউলের মত।
সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী বলেন, “যে যে ব্যক্তি মারধর করেছিল, তাঁদের বিরুদ্ধে আমি জেলার পুলিশ সুপার, জেলাশাসক, মুখ্যমন্ত্রী এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি। এরা সব আসামী।” সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী আরও বলেন, “আমি মন্তেশ্বরের মানুষের সঙ্গে আছি। আমি ধোকা দেওয়ার লোক নই। কাটমানি, মারামারি, দালালি-এসব আমি সহ্য করতে পারি না। এসব মুখ্যমন্ত্রী ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নীতি ও আদর্শের বহির্ভূত কাজ।”
একই সঙ্গে সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী বলেন, তাঁর কাছে মন্তেশ্বর থানার আইসি’র বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আসছে। তিনি শুনতে পাচ্ছেন, রাতের অন্ধকারে মন্তেশ্বর থানার আইসি নিজে লোকের বাড়ির দরজায় লাঠি দিয়ে ঠকঠক করছে। ওইসব বাড়িতে যে যুবতী ও বয়স্ক মহিলারা থাকছে, তারা আতঙ্কিত হয়ে দরজা খুলছে। রাত ১২টা ও ১ টায়, ঘুমন্ত অবস্থায় কারোর গায়ে বস্ত্র আছে,কারুর গায়ে নেই। দরজা ঠুকে কাউকে আইসি বলছেন এই তোর স্বামী কোথায় ,আবার কাউকে বলছেন- এই তোর বাবা কোথায়। এটা কি কোন পুলিশের কাজ? থানার বড় বাবুর কাজ? এর থেকে তো গরু- ছাগল চরানো অনেক ভাল।
আইসিকে উদ্দেশ্য করে মন্ত্রীকে এও বলতে দেখা যায়, “কেন এই ভাবে খাকির ও মুখ্যমন্ত্রীর বদনাম করছেন। আপনি দায়িত্ব পালন করতে না পারলে ছেড়ে দিন। ওই গুণ্ডা প্রকৃতির নেতা যা বলছে তাই আপনি একতরফা ভাবে শুনছেন। যদি আপনি নিরপেক্ষ না হন, তাহলে বাধ্য হয়ে আমায় থানা ঘেরাওয়ের ডাক দিতে হবে। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে,আঙুলটা বেকানোর জায়গায় চল যাবে।”
মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর হুমকি-হুঁশিয়ারির কথা কানে গেলেও তা নিয়ে জেলা পুলিশের কেউ কিছু বলতে অস্বীকার করেন। একই ভবে, রাজ্য নেতৃত্ব যা বলার বলবেন বলে জানিয়ে দলের জেলা নেতারা এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। তবে বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, “বাংলার মুখ্যমন্ত্রীই পুলিশ মন্ত্রী। সেই পুলিশের প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়ে থানা ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন রাজ্যের একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রী।”