
বর্ধমান: দেড় কিমি রাস্তা সংস্কার। ১২ লক্ষ টাকার বরাত। আর সেই কাজের জন্য ঠিকাদারের কাছে ১ লক্ষ টাকা চাওয়ার অভিযোগ উঠল। টাকা দিতে না চাওয়ায় রোড রোলার ও অন্য জিনিসপত্র আটকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ। ঘটনাকে ঘিরে শোরগোল পড়েছে পূর্ব বর্ধমানের বর্ধমান এক নম্বর ব্লকে। শাসকদলের দুই নেতার বিরুদ্ধে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন শেখ সুখচাঁদ নামে ওই ঠিকাদার। তবে তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বাকীর করেছেন বর্ধমান ১ নম্বর ব্লক তৃণমূল সভাপতি মানস ভট্টাচার্য।
পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের ঠিকাদার শেখ সুখচাঁদের বক্তব্য, জেলা পরিষদের ই-টেন্ডার অনুযায়ী সরাইটিকর থেকে নতুনগ্রাম পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের বরাত পান তিনি। তাঁর অভিযোগ, গত ১৮ ডিসেম্বর কাজ সম্পূর্ণ হলেও বর্ধমান ১ নম্বর ব্লক তৃণমূল সভাপতি মানস ভট্টাচার্য ও সরাইটিকর তৃণমূল কংগ্রেসের অঞ্চল সভাপতি বাবু হাজরার নির্দেশে তাঁর রোড রোলারসহ কাজের যন্ত্রপাতি আটকে রাখা হয়েছে। দাবি করা হয়েছে, এক লক্ষ টাকা কমিশন না দিলে যন্ত্রপাতি ছাড়া হবে না। এই ঘটনায় জেলাশাসক ও জেলা পরিষদের সভাধিপতির কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই ঠিকাদার।
যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বর্ধমান ১ নম্বর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি মানস ভট্টাচার্য। তাঁর দাবি, তাঁর ও অঞ্চল সভাপতির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রমাণিত হলে তিনি পদ ছেড়ে দেবেন। বলেন, “এক লক্ষ টাকা নয়, এক টাকা চেয়েছি প্রমাণ করতে পারলে পদ ছেড়ে দেব। শুধু তাই নয়, ওই ঠিকাদার যদি প্রমাণ করতে পারেন, কাজ শেষ করে ফেলেছেন, তাহলেও পদ ছেড়ে দেব।” তিনি দাবি করেন, রাস্তার কাজ সম্পূর্ণ না হওয়ায় গ্রামের মানুষই যন্ত্রপাতি আটকে রেখেছেন। পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে বলে দাবি করে তদন্তের আবেদন জানিয়ে জেলা পরিষদ ও বর্ধমান থানায় লিখিত অভিযোগও করেছেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়েছে। জেলা বিজেপির মুখপাত্র শান্তিরূপ দে বলেন, “টেন্ডার ডাকা থেকে টেন্ডার পাশ, সবেতেই কাটমানি দিতে হয় তৃণমূল নেতাদের। সাধারণ মানুষ ও ঠিকাদারদের উপর এই ভাবেই জুলুমবাজি করা হচ্ছে। তৃণমূল নেতারা বিধানসভা নির্বাচনের আগে এইভাবে শেষ কামড় দিচ্ছে।”
ঠিকাদার শেখ সুখচাঁদ বলেন, ” আমি যন্ত্রপাতি ভাড়া করেছি। রোড রোলার-সহ রাস্তা নির্মাণের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি আটকে রাখায় আমার প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা ক্ষতি হচ্ছে।” শেখ সুখচাঁদ এক সময়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা ছিলেন। তৃণমূলের বর্তমান অবস্থা দেখে তাঁর লজ্জা লাগছে বলে জানান। একইসঙ্গে তিনি বলেন, তৃণমূলের ওই দুই নেতা বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত। প্রসঙ্গত, এক দলীয় কর্মীর বাবাকে খুনের চেষ্টার (২০১৭ সালের ঘটনা) মামলায় মানস ভট্টাচার্য ও বাবু হাজরা-সহ ১২ জন তৃণমূল নেতা কর্মীকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা ঘোষণা করেছিল বর্ধমান আদালত। পরে কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন জানান সাজাপ্রাপ্তরা। হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ১২ জনের জামিন মঞ্জুর করে। হাইকোর্টে মামলাটি চলছে।