পূর্ব বর্ধমান: বুধবার রাত সাড়ে ৯টায়ও দিদির সঙ্গে ফোনে কথা হয়। তখনই বলেছিলেন, মেয়ে নিয়ে বাপের বাড়িতে চলে যাবেন। এত অত্যাচার আর সহ্য করতে পারছেন না। এরপর গভীর রাতে মেয়ের শ্বশুরবাড়ির এলাকা থেকে ফোন যায় রসুলপুরের (Rasulpur Burdwan) বাড়িতে। এক প্রতিবেশী বলেন, মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এরপর হাসপাতালে গিয়ে লাশকাটা ঘরে মেয়েকে দেখতে পান বাবা। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে বর্ধমানের পদ্মপুকুর রথতলা এলাকায়। নিহতের নাম মৌ মিস্ত্রি (২৫)। এই ঘটনায় শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নামে বর্ধমান থানায় মেরে ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন মৌয়ের বাবা সুধন মিস্ত্রি। মেমারি থানার রসুলপুর এলাকার বাসিন্দা মৌ মিস্ত্রির সঙ্গে ২০১৯ সালে বর্ধমানের পদ্মপুকুর রথতলার বুবাই নন্দীর বিয়ে হয়। তাঁদের একটি মেয়েও রয়েছে। মৌয়ের বাবার অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই তাঁদের মেয়েকে অত্যাচার করতেন জামাই। ক্রমেই তা বাড়তে থাকে। একইসঙ্গে জামাই ও জামাইয়ের বৌদির মধ্যে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। মেয়ে সেসব জেনে যাওয়ায় অত্যাচার আরও তীব্র হয় বলে অভিযোগ।
সুধন মিস্ত্রি বলেন, “বিয়ের পর তিন মাস যেতে না যেতেই মেয়ের সংসারে ঝামেলা শুরু। ক্রমেই গন্ডগোল বাড়তে থাকে। বহু পয়সাকড়ি, সোনা-গয়না দিয়ে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। তারপরও মেয়েটা একদিনও শান্তি পায়নি। দিনের পর দিন দাবিদাওয়া। এরপর তো অন্য কথা শুনলাম। মেয়ে বলতে চায় না, কাকিমার কাছে বলেছে, ওর বৌদির সঙ্গে কিছু একটা আছে। মেয়ে সেটা জানার পর আরও তিক্ততা বাড়ে। অস্বাভাবিক অত্যাচার করত মেয়েটাকে। এরপর মেরে দিল। বৌদির সঙ্গে ওরকম ব্যাপার। মেয়ে প্রতিবাদ করেছিল। দেখতে পেয়ে গিয়েছিল বলে এসব করল।”
একই অভিযোগ মৌয়ের দিদি চন্দ্রাণী মজুমদারেরও। তিনি বলেন, “আমরা বোনকে একবার নিয়েও চলে এসেছিলাম। আবার বুঝিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। আসলে বোন সংসারটা করতে চেয়েছিল। কিন্তু এরইমধ্যে বোন জানতে পারে বৌদির সঙ্গে ওর বরের সম্পর্ক আছে। মারধর শুরু করে আরও। বাচ্চা মেয়ে আছে, ওকেও কেউ ধরত না। বোন বিড়ি বেঁধে বাচ্চাটার খরচও চালাত। বরের বৌদিরও টাকার দরকার থাকলে আমার বোনের উপর চাপ দিত। সবই আমাকে বলত। রাত সাড়ে ৯টায়ও আমি ফোন করি। বলল দিদি, আমি এবার বাবার কাছে গিয়েই থাকব। এরপর ওর বর ফোনটা কেটে দেয়। ওর বরই ওকে মেরে ঝুলিয়ে দিয়েছে।” ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। তবে এই ঘটনার পর জামাই ও তাঁর বাড়ির লোকজন পালিয়ে গিয়েছেন বলে দাবি মৌয়ের বাবার। অভিযুক্তের তরফে কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তা পাওয়া গেলে যুক্ত করা হবে এই প্রতিবেদনে।