Panskura: ‘দাহ করো না-হলে নদীতে ভাসিয়ে দেব…’, চিপস-কাণ্ডে মৃত শিশুকে নিয়ে কেন বলল পুলিশ?

Panskura: উল্লেখ্য, ঘটনার দিন সন্ধেবেলা কৃষ্ণেন্দু দেহ নিয়ে অভিযুক্ত সিভিকের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসী। পরিস্থিতি কার্যত হাতের বাইরে চলে যায়। উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটা করার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে।

Panskura: দাহ করো না-হলে নদীতে ভাসিয়ে দেব..., চিপস-কাণ্ডে মৃত শিশুকে নিয়ে কেন বলল পুলিশ?
কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মাImage Credit source: Tv9 Bangla

| Edited By: অবন্তিকা প্রামাণিক

May 25, 2025 | 12:48 PM

পাঁশকুড়া: আলুথালু চুল। পরনে ছাপা শাড়ি। কথা বলতে-বলতে হাঁপিয়ে উঠছেন মহিলা। ছেলের মৃত্যুর শোক মা কী ভুলতে পারে এত তাড়াতাড়ি? মাটিতে বসে জানালায় হেলান দিয়ে ছোট্ট কৃষ্ণেন্দু দাসের মা একরাশ ক্ষোভ উগরে দিলেন অভিযুক্ত সেই সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে। তাঁর পরিষ্কার অভিযোগ, যদি না ওই সিভিক ভলান্টিয়ার এভাবে ভরা বাজারে সামান্য চিপসের প্যাকেটের জন্য ছেলেটাকে বকত তাহলে হয়ত সন্তান এত বড় সিদ্ধান্ত নিত না। এমনকী পুলিশ নাকি বলেছিল, দ্রুত দেহ সৎকার করতে নয়ত নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হবে, দাবি করেছেন শিশুটির মা। এর পাল্টা বক্তব্য দিল পুলিশও।

মৃত কৃষ্ণেন্দুর মা সুমিত্রা দাস আজ রবিবার বললেন, তাঁরা ওই সিভিক পুলিশের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানাবেন। “আমরা সন্তান হারিয়ে দু’জনে ক্লান্ত। যেতে পারিনি এখনও….।” বারেবারে সন্তানহারা মা প্রশ্ন তুললেন, একজন সিভিক ভলান্টিয়ারের এত ঔদ্ধত্য হয় কী করে? মহিলা বলেন, “একটা সিভিক পুলিশ হয়ে দাদাগিরি দেখিয়েছে। ও যদি না শাসন করত তাহলে আমার সন্তানও এমন করত না।”

উল্লেখ্য, ঘটনার দিন সন্ধেবেলা কৃষ্ণেন্দু দেহ নিয়ে অভিযুক্ত সিভিকের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসী। পরিস্থিতি কার্যত হাতের বাইরে চলে যায়। উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটা করার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে। ছোট্ট কৃষ্ণেন্দুর মা বলেন, “আমরা কাউকে পাশে পাচ্ছি না। যে আসছে। তাঁকেই গ্রেফতার করছে। তাহলে কে পাশে আসবে। একটা সিভিকের এত ক্ষমতা ? আমার সন্তানকে দশ মিনিট দেখতে দিল না? পুলিশ সেদিন বলল, দেহ দাহ করো, না হলে নদীতে ভাসিয়ে দেব, অথবা মর্গে ফেরত নিয়ে চলে যাব। মার কাছে সন্তানকে রাখতে দেয়নি। ওরাই দাহ করে দিল। এত লাঠিচার্জ করল গ্রামবাসীও আমাদের পাশে দাঁড়াতে পারল না।” তবে সুমিত্রা দেবীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তমলুক মহকুমার পুলিশ আধিকারিক আফজাল আবরার জানান, “মৃতের মা যে কথাটা বলছে ঠিক ওই মানে করে বলা হয়নি। যখন সিভিক কর্মী শুভঙ্কর দীক্ষিতের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ হচ্ছিল। সেই সময় পরিবারের লোক ছিল না। বাচ্চাটির দেহ নিয়ে বিক্ষোভ ও বাড়ি ভাঙচুর করছিল কিছু লোকজন। ঠিক তখনই আমরা আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য এই কথা বলা হয়েছে।  আমরা এটাই বলতে চেয়েছি যে আপনারা সৎকার করার ব্যবস্থা করুন। নচেৎ আমরা ব্যবস্থা করবো।”

এখনও রংচটা দালানের এক কোণে পড়ে রয়েছে কৃষ্ণেন্দুর নিত্যদিনের সঙ্গী পুরোনো সাইকেল। যে সাইকেলে চড়ে স্কুল যেত ছোট্ট কৃষ্ণেন্দু দাস। শুধু স্কুল নয়, খেলার মাঠ, এমনকী চিপস লজেন্স কিনতে যাওয়ার সঙ্গীও ছিল এই সাইকেল। ঘরের এক কোণে পড়ে রয়েছে বইখাতা। হাওয়ার দমকায় মাঝে মাঝে উল্টে যায় পৃষ্ঠা। সুন্দর হস্তাক্ষরে ভরা অর্ধেক খাতা। ফাঁকা পাতা আর ভরবে না….। মা কেঁদে-কেঁদে সেই কথাই বললেন।

পাঁশকুড়ার গোসাইবেড় গ্রামের বছর বারোর কৃষ্ণেন্দু দাস বেরিয়েছিল চিপস কিনতে। দোকানে গিয়ে দোকানদারকে অনেকবার ডাকাডাকি করার পরে দেখতে পায়নি দোকানদারকে। দোকানের বাইরেই পড়েছিল হাওয়ায় উড়ে আসা চিপসের প্যাকেট। সেই চিপসের প্যাকেট তুলে সাইকেলে করে বাড়ির পথে রওনা দিয়েছিল। এরপরেই অভিযোগ, স্থানীয় ওই দোকানদার যিনি পেশায় সিভিক ভলান্টিয়ার ও বটে। ওই নাবালককে চোর অপবাদ দেয় ভরা বাজারে। ঘটনার পরে ওই নাবালকের মা দোকানে এসে শাসন করেন ছেলেকে। কিন্তু এই চোর অপবাদ মানতে পারেনি ওই নাবালক। বাড়ি ফিরে একটি সুইসাইড নোট লিখে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করে সে। যে নোটে লেখা ছিল “মা আমি চুরি করিনি…”। ঘটনার সময়কার সিসিটিভি ফুটেজ ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে। নাবালকের পরিবারের অভিযোগের তীর সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে। থানায় অভিযোগ হয়নি এখনো। কিন্তু খুব শীঘ্রই অভিযোগ জানাবেন থানায় এমনটাই জানান কৃষ্ণেন্দুর মা।