মেদিনীপুর: মাথায় চোট, তীব্র যন্ত্রণা, রক্তে ভাসছে সারা শরীর। সেসব ছেড়েই ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন হলদিয়ার সাহসী ছেলে অভিজিৎ জানা। মৃত্যুপুরী থেকে বাঁচতে অন্ধকার হাতড়ে ভেঙে ফেলেন কোচের কাচের জানালা। তারপর একাই শুরু করেন উদ্ধারকাজ। যাত্রীরা আর্তনাদ করছেন। প্রথমে মারাত্মক জখম সহকর্মীদের এক এক করে জানালা দিয়ে বের করেন। সিটের তলায় এক বন্ধুর পা ভেঙে বসেছিলেন। একাই তাঁকে উদ্ধার করেন। স্থানীয় উদ্ধারকারীদের নিয়ে আরও কয়েকজন বন্ধু ও যাত্রীকে উদ্ধার করেন অভিজিৎ। এরপর স্থানীয় হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর শনিবার বেলা ১১টা নাগাদ বাড়ি ফিরেছেন তাঁরা চার বন্ধু। সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকে সহযাত্রীদের বাঁচিয়ে গ্রামবাসীদের কাছে কার্যত ‘হিরো’র মর্যাদা পেলেন অভিজিৎ।
শুক্রবার হলদিয়ার দেউলপোতা পঞ্চায়েতের বাড়বাসুদেবপুর গ্রামের রাউত পাড়া থেকে চেন্নাই যাচ্ছিলেন ৭ জন যুবক। তাঁরা হলেন নিতাই রাউত, নিমাই রাউত,কানাই রাউত,তাপস রাউত ওরফে রাজু,মহাদেব ও প্রণবেশ রাউত। এদের মধ্যেই ছিলেন অভিজিৎ। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন মহিষাদল থানার আরও দুই যুবক। এঁরা সবাই পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করেন চেন্নাইয়ের বিভিন্ন প্রজেক্টে।
রবিবার বাড়ি ফিরে এদিন ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে বারবার শিউরে উঠছিলেন বছর আঠারোর অভিজিৎ। তিনি বলেন, “সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ গরম সিঙাড়া কিনে সবাই খাচ্ছিলাম। হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দ হওয়ার পর কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমরা সিট থেকে পড়ে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে গেলাম ৷ পরে বুঝলাম, আমাদের বগি উল্টে গিয়েছে। মুহূর্তের মধ্যে সব অন্ধকার। বগির দেওয়ালগুলো ভেঙে ঢুকে এসেছে। তবে বগিটি ট্রেনের মাঝখানে থাকায় আমরা রক্ষা পেয়েছি। পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখি তাপসদার ডান পা সিটে তলায় ঢুকে গিয়ে ভেঙে গিয়েছে। ভাঙা পা সোজা করে তাঁকে প্রথমে বের করে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দিই।”