
তমলুক: ৫ বছর আগে হলদিয়ার নদী পাড়ে জোড়া খুনের ঘটনায় তোলপাড় পড়েছিল রাজ্যে। মা-মেয়েকে জ্যান্ত পুড়িয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে। সেই মামলায় শনিবার রায় শোনাল তমলুক জেলা ও দায়রা আদালত। ৪ জন দোষীসাব্যস্তের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হল।
২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। হলদিয়া পৌরসভার ঝিকুরখালি এলাকার হলদি নদীর ধারে মা ও মেয়ের অর্ধদগ্ধ দেহ উদ্ধার হয়। পরে জানা যায়, জোড়া খুনে অভিযুক্ত হলদিয়ার বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন। তদন্তে উঠে আসে, উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুরের রমা দে নামে এক মহিলার সঙ্গে অভিযুক্ত সাদ্দামের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। রমা তাঁর ১৮ বছরের মেয়ে জেসিকাকে নিয়ে অভিযুক্ত সাদ্দামের কাছে হলদিয়ায় চলে আসেন। হলদিয়ায় একটি বাড়ি ভাড়া করে তাঁদের রাখেন সাদ্দাম। ধীরে ধীরে রমার পাশাপাশি তাঁর মেয়ে জেসিকার সঙ্গেও সাদ্দামের প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। পরে সাদ্দাম জেসিকাকে বিয়ে করেন। মা-মেয়ে দু’জনের সঙ্গেই সম্পর্ক রাখতে গিয়ে তৈরি হয় বিবাদ। সাদ্দাম সব সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা চালান। তারপরই ঘটনা মোড় নেয় নৃশংসতায়।
জেসিকার সঙ্গেও সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল সাদ্দামের
তদন্তে উঠে আসে, মা-মেয়েকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে আসা হয় ঝিকুরখালির নদীপাড় এলাকায়। সাদ্দামের সঙ্গে আরও তিনজন ছিল। মৃত ভেবে মা-মেয়ের গায়ে পেট্রোল ঢেলে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারে অভিযুক্তরা। ধোঁয়া দেখে সেখানে হাজির হন স্থানীয় বাসিন্দারা। সাদ্দামকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। সেই ঘটনার ৯০ দিন পরে চার্জশিট জমা দেয় দুর্গাচক থানার পুলিশ। পাঁচ বছর মামলা চলার পরে এদিন সাজা ঘোষণা করে তমলুক জেলা আদালত। মূল অপরাধী সাদ্দাম এবং বাকি ৩ অপরাধী মঞ্জুর আলম মল্লিক, শুকদেব দাস এবং আমিনুর হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন তমলুক জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক প্রিয়ব্রত দত্ত।
আদালতের রায়ের পর সাদ্দাম হোসেন
আসামি পক্ষের আইনজীবী সুব্রত কুমার মাইতি বলেন, “আমার মনে হচ্ছে, প্রমাণের উপর নয়, সমাজকে বার্তা দিতে এই রায় দেওয়া হয়েছে। এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যাব। আমার মনে হচ্ছে, সেখানে রায় আমাদের পক্ষে যাবে।” এদিন আদালতের রায়ের পর সাদ্দাম হোসেন বলেন, “আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ।”