পূর্ব মেদিনীপুর: প্রায় ২৪ ঘণ্টার প্রচেষ্টা। এখনও সাফল্য এল না। এখনও নিখোঁজ সাত মৎস্যজীবীর ট্রলার। তিন বাহিনীর চেষ্টা এখনও অসফল। যার জেরে উদ্ধারকার্যের প্রকৃত পরিকাঠামো নিয়েও উঠে এল প্রশ্ন। গোটা ঘটনায় উদ্বিগ্ন পরিবার।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় পেটুয়া ঘাট ও রসুলপুর নদী মোহনায় মৎস্যজীবী ট্রলার দুর্ঘটনার পর ২৪ ঘণ্টার বেশি কেটে গিয়েছে। এখনোও নিখোঁজ ট্রলারের মাঝি সহ সাত মৎস্যজীবী। উল্টে যাওয়া ট্রলার উদ্ধারে শুক্রবারের পর শনিবারও তৎপর প্রশাসন। ঘটনাস্থলে রয়েছেন এনডিআরএফ ও ইণ্ডিয়ান কোস্ট গার্ড ও পুলিশের প্রতিনিধিরা। শনিবার ভোর রাত থেকেই চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা। এ দিকে, খবর পেয়ে পেটুয়াঘাটে হাজির হয়েছেন নিখোঁজ মৎস্যজীবী পরিবারের পূর্ব মেদিনীপুরের লোকজন ও আত্মীয়-স্বজন। বাড়ির পথ চেয়ে বসে রয়েছেন তাঁরা। কখন বাড়ি ফিরবে পরিবারের সদস্যরা তা জানার জন্যই অপেক্ষায়। সময় যত কাটছে নিখোঁজদের বেঁচে থাকার সম্ভবনা ততই ক্ষীণ হয়ে আসছে।
যদিও, এদিন সকাল থেকে দফায়-দফায় তল্লাশি চালালেও ট্রলারের কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি। কয়েকজন এনডিআরএফ আধিকারীকরা তল্লাশি চালাতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওই এলাকায় সকাল থেকে ঘটনাস্থলে রয়েছেন কাঁথির মহকুমা শাসক আদিত্য মোহন বিক্রম ইরানি, মহকুমা পুলিশ আধিকারীক সোমনাথ সাহা, এডিঅফ-মেরিন সুরজিৎ বাগ, কাঁথি ব্লকের বিডিও শুভজিৎ জানা সহ আধিকারীরা।
আজও হলদিয়া কোস্টগার্ড জলপথে ও আকাশ পথে কপ্টার দিয়ে তল্লাশি চালান হয়েছে। কোনও নিখোঁজ হওয়ার ট্রলারের কোথাও সন্ধান পাওয়া যায়নি। কাঁথির পেটুয়া মৎস্যবন্দরে পথ চেয়ে বসে রয়েছেন নিখোঁজ মৎস্যজীবি পরিবারের সদস্যরা। মৎস্যজীবী শুকদেব করণের দিদি ভবানী দাস বলেন, ‘কী হবে বুঝে উঠতে পারছি না। ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি সুস্থ হয়ে ফিরে আসুক ভাই।’ কাঁথির মহকুমা শাসক আদিত্য বিক্রম মোহন হিরানি বলেন, ‘আবারও আজকে ভোররাত থেকে তল্লাশি অভিযান শুরু করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত যা খবর পাওয়া যাচ্ছে উল্টে যাওয়া ট্রলারটি গতকাল যে জায়গায় ছিল সেখানে সরে একটু গভীর সমুদ্রে চলে গিয়েছে। যার কারণে প্রপার লোকেট করা যায়নি। সেই কারণে এখনো তাঁদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই ভাল রেজাল্ট পাব আশাবাদী আমরা।’
এই বিষয়ে সহ মৎস্য অধিকর্তা (মেরিন) সুরজিৎ বাগ জানান, ‘শেষ পাওয়া খবর বেলা দেড়টার দিকে একটা ট্রলার দেখতে পাওয়া গিয়েছে। পেটুয়া থেকে দুই কিমি দূরে খেজুরির কলাগেছিয়া দিকে। কিন্তু ট্রলারটির কাছে উদ্ধারকারীরা যেতে পারছে না। কারণ সেটি ভেঙে গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। হতে পারে ওটাই আলামিন আবার না ও হতে পারে। তিনজন কোস্টগার্ডের ডুবুরি চেন্নাই থেকে এসেছে।’
বস্তুত, মৎস্য শিকারের জন্য রওনা দিয়েছিল ট্রলার। নন্দীগ্রাম থেকে পেটুয়া মৎস্য বন্দরে আসার পথে সমুদ্রে ডুবে যায় সেটি। ভয়ঙ্কর এই ট্রলারডুবিতে মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। জানা গিয়েছে, ঘটনার সময় ১২ জন মৎস্যজীবী ছিলেন ট্রলারে। এরমধ্যে সাতজন নিখোঁজ হয়ে যান। তিনজনকে উদ্ধার করা হয়। অন্যদিকে দু’জনের দেহ উদ্ধার হয়। নিহত দু’জন দুই ভাই বলে জানা গিয়েছে। বন্দরে আসার সময় চরে ধাক্কা লাগে বলে খবর। তাতেই এই ভয়াবহ ট্রলারডুবি হয়। খবর পৌঁছতেই তল্লাশি অভিযানে নামে উপকূলরক্ষী বাহিনী। সঙ্গে ছিল এনডিআরএফ ও পুলিশ।