
পাঁশকুড়া: সাত হাজার টাকায় বিক্রি! তারপর খদ্দেরদের হাতে তুলে দেওয়া হল নাবালিকাকে! বারবার ধর্ষণের মতো অভিযোগও উঠল। পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার ঘটনা। নিষিদ্ধপল্লী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে সেই নাবালিকাকে। একটা ফোনই বাঁচিয়ে দিল তাঁকে।
প্রেমিকের হাত ধরেই জীবনের সব থেকে বড় ভুল করে বসল নাবালিকা! যুবকের হাত ধরে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এসে ঠাঁই হয় মহিষাদলের পতিতালয়ে। পাঁশকুড়া থানার পুলিশের তৎপরতায় ঘটনার প্রায় ১৫ দিনের মাথায় নিষিদ্ধপল্লী থেকে উদ্ধার করা হয় ওই নাবালিকাকে। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে নারী পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত তিন অভিযুক্তের সন্ধান পায় পুলিশ। দীর্ঘ শুনানির পর অবশেষে শনিবার এই তিন অভিযুক্তকেই দোষী সাব্যস্ত করেছে তমলুকের পকসো আদালত। সোমবার তাঁদের বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা হবে বলে সূত্রের খবর।
এই মামলার সরকারি আইনজীবী কিঙ্কর গায়েন জানান, এই মামলায় তিন অভিযুক্তেকেই দোষী সাব্যস্ত করেছেন তমলুকের পকসো আদালতের বিচারক। তাঁদের বিরুদ্ধে অবৈধ নারী পাচার, ধর্ষণ ও টাকার বিনিময়ে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করার মতো একাধিক ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
সোমবার অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা করা হবে। সূত্রের খবর শনিবার দোষ প্রমাণিত হওয়ার পরেই ৩ অভিযুক্তকেই হেফাজতে নেয় পুলিশ। অভিযুক্তদের তমলুক জেলে পাঠানো হয়েছে।
সূত্রের খবর, ২০১৭ সালে পাঁশকুড়া থানা এলাকার বছর ১৭-র নাবালিকার সঙ্গে ফোনে আলাপ হয় এক যুবকের। মিসড্ কল দিয়েই নাকি আলাপ জমায় ওই যুবক। নিজেকে সাদ্দাম পরিচয় দিয়ে ওই যুবক নাবালিকাকে প্রেমের জালে জড়ানোর চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। এরপর প্রেমিকের ডাকে একদিন বাড়ি ছাড়ে নাবালিকা। তারপরই সুযোগ বুঝে ওই নাবালিকাকে মহিষাদলের নিষিদ্ধ পল্লীতে নিয়ে গিয়ে তোলা হয় বলে অভিযোগ।
অভিযোগ, ওই পতিতালয়ে নাবালিকাকে ধর্ষণের পর ৭ হাজার টাকার বিনিময়ে এক মহিলার কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এরপর প্রায় ১৫ দিনে ওই নাবালিকার ওপর চলে চরম পাশবিক অত্যাচার। তুলে দেওয়া হয় খদ্দেরদের হাতে। বাঁচার কোনও উপায় খুঁজে পাচ্ছিলেন না নাবালিকা।
পরে নিষিদ্ধপল্লীতে আসা এক ব্যক্তির ফোন থেকে ওই নাবালিকা নিজের বাড়িতে ফোন করে ও জানায় মহিষাদলের পতিতালয়ে আটকে আছে সে। খবর পেয়েই পাঁশকুড়া থানার তৎকালীন এসআই মানস মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী মহিষাদলে ‘রায়ের ঠেক’ নামক নিষিদ্ধ পল্লীতে হানা দিয়ে ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করে। নাবালিকার মেডিক্যাল পরীক্ষাও হয়। সেই সঙ্গে বিচারক তাঁর গোপন জবানবন্দি নেন।
তদন্তে নেমে মহিষাদলে অবৈধ পতিতালয় চালানোর অভিযোগে সায়রা বানুকে পুলিশ গ্রেফতার করে। সেই সঙ্গে মহিষাদলে পারিবারিক জায়গায় অবৈধ দেহ ব্যবসার আসর খোলার জন্য মহিলার স্বামী টিটু রায়কেও পাকড়াও করা হয়। তবে ঘটনার পর থেকেই গা ঢাকা দেয় অভিযুক্ত সাদ্দাম। ঘটনার প্রায় দেড় বছর পর পুলিশের জালে ধরা পড়ে চণ্ডীপুর থানা এলাকার বাসিন্দা সাদ্দাম ওরফে শাজাহান চিত্রকর। টিআই প্যারেডে অভিযুক্তদের শনাক্ত করে নির্যাতিতা। সেই থেকেই জেল হাজতে রয়েছে সাদ্দাম ওরফে শাজাহান।