
দিঘা ও শ্রীরামপুর: স্নানযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে গেল রথযাত্রার দিনগোনা। শ্রীরামপুরের মাহেশ থেকে দিঘা, সকাল থেকেই তুমুল ব্যস্ততা, মানুষের ঢল। এবার ৬২৯ বর্ষে এবার মাহেশের রথ ও স্নানযাত্রা উৎসব। অন্যদিকে সদ্য দিঘায় এসেছেন জগন্নাথ দেব। মাসখানেক আগে মহাসমারোহে উদ্বোধন হয়েছে মন্দিরের। সেখানেও রথযাত্রার ঠিক ১৫ দিন আগে বুধবার জ্যৈষ্ঠ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে স্নানযাত্রার আয়োজনকে কেন্দ্র করে দেখা যাচ্ছে ব্যাপক উন্মাদনার ছবি।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দিরের রথের মহড়াও সুচারুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। বিশাল পুলিশি নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী এই মহড়ায় মন্দিরের ৭ নম্বর গেট দিয়ে রথ বের করে প্রায় ৫০০ মিটার পথে চাকা ঘোরানো হয়। আসন্ন রথযাত্রার দিন যাতে কোনও ত্রুটি না থাকে তাই প্রস্তুতি পর্বেই সব ঠিকঠাক আছে কিনা দেখে নিতেই এই উদ্যোগ বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের।
দিঘা জগন্নাথ ধাম ট্রাস্ট্রির সদস্য এবং কলকাতা ইসকনের সহ-সভাপতি রাধারমণ দাস জানিয়েছেন এবার রথযাত্রায় থাকছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই নিরাপত্তা-সহ যাবতীয় আয়োজনে বিশেষভাবে জোর দেওয়া হচ্ছে। মন্দির সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, রথযাত্রার অন্যতম প্রস্তুতি যে বিষয়টিকে ধরা হয় সেই ৪২ দিনব্যাপী চন্দনযাত্রাও মঙ্গলবার সফলভাবে শেষ হয়েছে। ‘বাহার চন্দন’ ও ‘ভিতারা চন্দন’ – এই দুই পর্বে বিভক্ত এই উৎসব। শোনা যায়, গ্রীষ্মের দাবদাহ থেকে মুক্তি পেতে দেবতারা চন্দন লেপন করেন। বাহার চন্দনে দেবতারা সুসজ্জিত নৌকা ‘নন্দা’ ও ‘ভদ্রা’-তে সরোবরে জলকেলি করেন এবং ভিতারা চন্দনে মন্দিরের ভিতরে মূল দেবমূর্তিগুলিকে চন্দন লেপন করা হয়। বুধবার সকাল ৯টায় ‘পাহাণ্ডি বিজয়’ শোভাযাত্রার মাধ্যমে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা, সুদর্শন চক্র এবং মদনমোহন বিগ্রহকে মন্দিরের বাইরে স্নানমণ্ডপে নিয়ে আসা হয়।
ভক্তদের সুবিধার জন্য মন্দিরের সামনে উঁচু মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। যাতে দূর থেকেও বিগ্রহ দর্শন সম্ভব হয়। বেলা ১১টা থেকে ১০৮ কলসি পবিত্র জল দিয়ে দেবতাদের স্নান করানো হয়। ১০৮টি তীর্থক্ষেত্র থেকে আনা এই বিশেষ জলে মেশানো হচ্ছে গঙ্গা জল, তুলসি পাতা, কাঁচা দুধ, আতর, চন্দন ও কর্পূর। স্নানকালে পুরোহিতরা মুখ ঢেকে ভক্তিভরে মন্ত্রোচ্চারণ করবেন এবং চারপাশ মুখরিত হবে কীর্তন ও শঙ্খধ্বনিতে। স্নানের পর দেবতাদের মনোমুগ্ধকর পোশাকে সাজানো হবে। জগন্নাথদেব ও বলরামকে গণেশের রূপে (গজবেশ) এবং সুভদ্রাদেবীকে পদ্মবেশে সাজানো হবে। এই গজবেশ ধারণের পেছনে ভক্ত গণপতি ভট্টের প্রতি ভগবানের কৃপার এক প্রচলিত বিশ্বাস জড়িত বলে শোনা যায়। দুপুর ১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ভক্তরা গজবেশে দেব দর্শন করতে পারবেন। ১২ জুন থেকে শুরু হবে ‘অনসর’ পর্ব। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, অতিরিক্ত স্নানের ফলে দেবতাদের ‘জ্বর আসে’ এবং তাঁরা ১৫ দিনের জন্য নিভৃত কক্ষে বিশ্রাম নেন। এই সময়ে রাজবৈদ্যের তত্ত্বাবধানে দেবতারা আয়ুর্বেদিক পাঁচন খেয়ে সুস্থ হবেন। এরপর ২৬ জুন দেবতারা ‘নবযৌবন দর্শন’ দেবেন এবং ২৭শে জুন তাঁদের বহু প্রতীক্ষিত মাসির বাড়ি যাত্রার জন্য রথে আরোহণ করবেন।