পূর্ব মেদিনীপুর: সদ্য ফল প্রকাশ হয়েছে ১০৮ পুরসভার। সিংহভাগেই ঘাসফুল ফুটেছে। এরপরই কে কোথায় চেয়ারম্যান হচ্ছেন তা নিয়ে শুরু হয় জল্পনা। সোমবার একাধিক পুরসভার চেয়ারম্যানের নাম সামনে এসেছে। সব থেকে বেশি আগ্রহ যে পুরসভা নিয়ে ছিল, সেই ‘হাইভোল্টেজ’ কাঁথিতে এবার নতুন অধ্যায়ের সূচনা হল। চার দশকের ‘অধিকারী’ মিথ ভেঙেছে ভোটের ফলেই। সূত্রের খবর, এবার কন্টাই পুরসভার কুর্সিতে বসতে চলেছেন সুবল মান্না। ১৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী হয়েছেন তিনি। কাঁথির রাজনীতিতে বর্ষীয়ান রাজনীতিক। ৩৭ বছর ধরে কাউন্সিলর তিনি। তাঁর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে কাঁথিতে এবার রাজনীতির নতুন হাওয়া তুলতে চায় শাসকদল। একইসঙ্গে এই পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান হচ্ছেন সুপ্রকাশ গিরি। ১৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী হয়েছেন তিনি, মন্ত্রী অখিল গিরির ছেলে। যদিও সুবল মান্না জানান, “আমি যে চেয়ারম্যান তা আমি এখনও জানি না। দলের তরফে আমাকে এখনও কিছু জানানো হয়নি। আজ নিমতৌড়িতে এক বৈঠক আছে। আমাদের মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র ডেকেছেন। আমি এখনও চেয়ারম্যান কী সাধারণ কাউন্সিলর জানি না।”
একটা সময় বলা হত, এ পুরসভা রাজ্যের বাকি পুরসভার থেকে আলাদা। কারণ, এখানে শুধু অধিকারীদেরই অধিকার রয়েছে। কিন্তু একুশের বিধানসভা ভোটের আবহেই বদলের হাওয়া ঢুকতে শুরু করে কাঁথিতে। পুরভোটে সেই হাওয়ায় ভেঙে পড়ে ‘অধিকারী গড়’। কাঁথিতে জয় হয় ‘অধিকারীহীন’ তৃণমূলেরই।
শিশির অধিকারীর দুই ছেলে এখন বিজেপিতে। শুভেন্দু রাজ্যের বিরোধী দলনেতা, সৌমেন্দুও আছেন পদ্মে। তবে অভিযোগ, শিশির অধিকারী নিজে কোন শিবিরে আছেন, তা প্রায়ই গুলিয়ে যায় কাঁথির মানুষের। সাংসদ পদ পেয়েছেন তৃণমূলের টিকিটে জিতে। এখনও সে পদের মেয়াদ প্রায় ২ বছর। তাই এখনই নতুন কোনও সিদ্ধান্ত শিশিরবাবু নেবেন বলে মনে করে না রাজনৈতিক মহল। একই যুক্তি শোনা যায় তাঁর আরেক ছেলে দিব্যেন্দুর ক্ষেত্রেও। তৃণমূলের টিকিটে জিতে তিনিও তমলুকের সাংসদ। যদিও এই দুই সাংসদের পদ নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল। তাদের অভিযোগ, বিজেপির হয়ে ভোট চান তাঁরা, অথচ সাংসদ তৃণমূলের।
সে বিতর্ক তো জিইয়ে রয়েছেই। তবে এবার কাঁথি পুরসভায় পালাবদলই সব থেকে বড় খবর। কেমন হবে নতুন বোর্ড, কেমনই বা হবে তাদের কাজ সেটাও নজরে থাকবে সকলের। যিনি চেয়ারম্যান হচ্ছেন বলে খবর, সেই সুবল মান্নার রাজনীতির শুরু কংগ্রেস থেকে। অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ মুখ তিনি। শোনা যায়, এক সময় শিশির অধিকারীর সঙ্গে মতের বিরোধ হওয়ায় ভোটের টিকিট দেওয়া হয়নি তাঁকে। সে সময় তিনি এই ১৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকেই নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়ান। তিনি জেতেনও। এরপর তৃণমূলে যোগ দেন। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক জীবন তাঁর। চুলে পাক ধরেছে এই রাজনীতির রং বদল দেখতে দেখতেই। গত দু’বছর কাঁথি পুরসভায় প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্যও ছিলেন তিনি। এবার কাঁথি পুরসভার চেয়ারে বসলে তা যে আলাদা মাত্রা যোগ করবে মানছেন জেলার অনেকেই।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অন্য দুই পুরসভা এগরার চেয়ারম্যান হচ্ছেন স্বপন নায়েক। তিনি ১১ নম্বর ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি। ভাইস চেয়ারম্যান হচ্ছেন জয়ন্ত সাউ। তাঁর ওয়ার্ড ১২। তমলুকের চেয়ারম্যান হচ্ছেন দীপ্তেন্দ্রনারায়ণ রায়। ১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জিতেছেন তিনি। ভাইস চেয়ারম্যান লীনা (মাভুই) রায়। ১২ নম্বর ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি তিনি।