পূর্ব মেদিনীপুর: ‘শালীনতা ছাড়িয়ে মন্তব্য’। তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বিরুদ্ধে কাঁথি আদালতে মামলা দায়ের করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) ভাই সৌমেন্দু অধিকারী। অভিযোগ, অত্যন্ত ‘কদর্য’ ভাষায় শুভেন্দুকে আক্রমণ করেছেন কুণাল (Kunal Ghsoh)।
সূত্রের খবর, কুণালের ‘কুমন্তব্যের’ বিরুদ্ধে কাঁথি আদালতে একটি ফৌজদারী মামলা দায়ের করেছেন শুভেন্দুর ছোটভাই সৌমেন্দু। তাঁর কথায়, “শালীনতা ছাড়িয়ে মন্তব্য করেছেন তৃণমূল মুখপাত্র। গোটা অধিকারী পরিবারকে নিশানা করে অশ্রাব্য ভাষায় আক্রমণ করেছেন। আজ আমার আইনজীবী মারফত মামলা দায়ের করেছি। আশা করছি ওঁ সময়ে হাজিরা দেবেন। এ বিষয়ে আর বিশেষ কিছু আমার বলার নেই।
তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যে পেছন থেকে ছুরি মেরে গিয়েছে তাকে আর কী বলব! অকৃতজ্ঞ, গদ্দার একজন! সবাই জানে, তৃণমূলের দৌলতে ওদের এত প্রভাব প্রতিপত্তি। সেই তৃণমূলনেত্রীকেই ছুরি মেরে গিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যখন ‘বেগম’ বলত, সেটা কি খুব ভাল ছিল! মামলা করেছে তো করেছে। সবটা আদালতে দেখে নেব!”
ঠিক কী হয়েছিল? ‘বেইমান’, ‘অকৃতজ্ঞ’, ‘জানোয়ার’ এবং ‘এক বাপের ব্যাটা’- নন্দীগ্রাম দিবসে (Nandigram Dibas) সেখানকারই মাটিতে দাঁড়িয়ে এ রকম একাধিক বিশেষণে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে (Suvendu Adhikari) আক্রমণ করেন তৃণমূল মুখপাত্র।
২০০৭ সাল থেকেই রাজ্য রাজনীতির অন্যতম নাম হয়ে নিজের জায়গা খোদাই করেছে জমি আন্দোলনের পীঠস্থান নন্দীগ্রাম। আর সেই জায়গার উপর ভর করে রাজ্যে পালা বদল। দু দফায় ঘাসফুলের আধিপত্য বজায় রাখার পর তৃতীয় দফাতেই এই আন্দোলনের সেনাপতি বেসুরো হওয়াতে বিপাকে পড়তে হয় শাসকদল তৃণমূলকে। সেই প্রেক্ষিতে নন্দীগ্রাম দিবসে তৃণমূল ও বিজেপির তরফে একাধিক পৃথক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল।
সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে শুভেন্দু অধিকারীকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন কুণাল। সেক্ষেত্রে অনেকসময় রাজনৈতিক শালীনতার সীমাও লঙ্ঘিত হয়। কুণাল ঘোষ বলেন, “শুভেন্দু নন্দীগ্রামের মানুষকে ভাগ করেছেন। শুভেন্দুকে নন্দীগ্রাম থেকে উত্খাত করব আমরাই।” তাঁর কটাক্ষ, “শহিদ বেদীতে মালা দিয়ে আসতে চায় শুভেন্দু। হিন্দুত্বের এজেন্সি শুভেন্দুকে কেউ দেয়নি। বিজেপিতে গিয়ে হিন্দুত্বের বিষ ছড়াচ্ছে শুভেন্দু।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা সমাজটাকে এক রাখতে চেয়েছি। বিজেপি ভাগ করতে চাইছে। সিপিএম কী করেছিল? গা জোয়ারি করে জমি নিতে চেয়েছিল। তখন শুভেন্দু কোথায় ছিল? ও তো কাঁথিতে এসি ঘরে বসেছিল। লড়াই তো আপনারা করেছিলেন। ভূমি উচ্ছেদ কমিটি এখান থেকে তৈরি হয়েছে। শহিদের রক্ত বেঁচে নিজে রাজনৈতিক কেরিয়ার তৈরি করেছে শুভেন্দু।”
এরপরই তিনি বলেন, “শুভেন্দু অধিকারী একটা অকৃতজ্ঞ, বেইমান, জানোয়ার- সে বলে পাঠিয়েছে শহিদ বেদিতে মালা দিতে চান। বিজেপিতে নাম লেখানোর পর হঠাত্ হিন্দু হয়ে গেল।” তিনি বলেন, “শুভেন্দু তো মুসলমানদের জেহাদি বলেছে। এখন কেন শহিদ বেদিতে মালা দিতে আসবে? এই শহিদ বেদিতে তো মুসলমানেরও রক্ত রয়েছে। কোন লজ্জায় তুমি আসবে? আমরা ফিরোজা বিবিকে শহিদ মাতা বলি, তুমি কী বলবে জেহাদির মা? এই সব মানুষ নরকের কীট।” এই প্রসঙ্গের প্রেক্ষিতেই শুভেন্দু জন্মবৃত্তান্ত নিয়ে একের পর এক কুরুচিকর মন্তব্য করেছেন কুণাল ঘোষ।
কুণাল ঘোষ যখন এই সব মন্তব্য করেছেন, আক্রমণ শানিয়েছেন, তখন হাততালির জোয়ার সভামঞ্চে। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক শৃষ্টাচার, শালীনতার সীমা লঙ্ঘিত হয়েছে তাতে।
প্রসঙ্গত, গদিতে আসার আগে থেকেই প্রতিবছর নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারীকে সামনে রেখেই কর্মসূচি নিয়েছে তৃণমূল। তবে ২০২১-এ ছবিটা উল্টো। তৃণমূলের দোর্দন্ডপ্রতাপ নেতা শুভেন্দু অধিকারী এখন বিজেপির টিকিটে জিতে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। বুধবার, তাঁরই নেতৃত্বে বিজেপির তরফে পালিত হয় নন্দীগ্রাম দিবস। যে শুভেন্দু অধিকারী নন্দীগ্রামের ভূমিপুত্র বলা হত, সেখানেই তাঁকে একের পর এক বাণে বিদ্ধ করেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে নন্দীগ্রামের পরিস্থিতি। এরপরেই বৃহস্পতিবার, শুভেন্দুর ভাই সৌমেন্দু কুণাল ঘোষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
আরও পড়ুন: Anubrata Mondal: ‘বাহিনী-টাহিনী এনে কিছু হবে না, ওদের চারটে বেশি হাত-পা আছে নাকি!’