
খেজুরি: কয়েকদিন আগের ঘটনা। জলসা দেখতে গিয়ে দুই বিজেপি কর্মীর দেহ উদ্ধার হয়। সেই ঘটনায় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেখে পুলিশ দাবি করেছিল বিদ্যুৎস্পষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে। তবে দুই মৃতের পরিবার প্রথম থেকেই অভিযোগ করছিল খুন করা হয়েছে তাঁদের। পরবর্তীতে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ফের ময়নাতদন্ত হয়। সেই রিপোর্ট আসে ভিন্ন। মঙ্গলবার এই দ্বিতীয় রিপোর্ট কলকাতা হাইকোর্টে জমা পড়তেই স্তম্ভিত হয় কোর্ট। এরপরই বুধবার ফের মৃতদের পরিবার সরব হয়। একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ করা শুরু করে।
মৃত সুধীর পাইকের ছেলে নন্দন কুমার পাইক বলেন, “পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। পুলিশ এতদিন আইনি কোনও ব্যবস্থা করেনি। পুলিশ টাকা খেয়ে ধামা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি শমুদ্ভব দাস আমাদের বাড়িতে কারেন্টের অফিস থেকে লোক পাঠিয়ে দিয়ে বলেছে কারেন্ট খেয়ে মরেছে। এই কাগজে সই করে দিলে ৩ লক্ষ টাকা পাবে। খুনটাকে ধামাচাপার চেষ্টা করছে। আমরা সুবিচার চাইছি। হাইকোর্ট অবধি গিয়েছি।” অপরদিকে, মৃত সুজিত দাসের বাবা শশাঙ্ক দাস বলেন, “এটা আমার যন্ত্রণার সময়। যখন ঘটনা ঘটে সেদিন থেকে পুলিশ খালি বলছিল কারেন্টের শক লেগে মারা গিয়েছেন। খালি বলত এখানে সই করুন-ওইখানে সই। আমরা শুনিনি। শুভেন্দু অধিকারীই সুবিচার করেছেন আমাদের সঙ্গে। মেদিনীপুর মেডিক্যালে থেকে এল ভুয়ো রিপোর্ট। পরে এসএসকেএম থেকে এল আসল রিপোর্ট।”
যদিও, অভিযোগ উড়িয়েছেন খেজুরি ২ব্লক তৃণমূল সভাপতি শমুদ্ভব দাস। তিনি বলেন, “এমন ঘটনা জানা নেই। এই সব মিথ্যা কথা। আমি কার সঙ্গে কথা বলেছি জানি না। আইনি প্রসেস চলবে।”
খেজুরি থানা এলাকার ভাঙনমারি এলাকায় মেলা চলছিল। সেই মেলার বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে সুধীর পাইক ও সুজিত দাস নামে দুই ব্যক্তি গুরুতর আহত হন। তাঁদের স্থানীয়ই ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে গেলে মৃত্যু হয়েছে বলে জানান চিকিৎসকরা। যদিও বিজেপির অভিযোগ ওই মেলায় দুষ্কৃতীরা হামলা করেছে। তার জেরেই মৃত্যু হয়েছে ওই দুই ব্যক্তি সুজিত ও সুধীরের। এর জেরেই উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। বিজেপি কর্মীরা খেজুরি থানা ঘেরাও করে। খুনের অভিযোগে তুলে বনধ ডাকা হয়। প্রথম ময়নাতদন্ত হয় তমলুক মেডিক্যাল কলেজে। তার রিপোর্টে পাওয়া যায় বিদ্যুৎস্পষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে। পরে আবার এই রিপোর্টকে চ্যালেঞ্জ করে দুই পরিবার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। আদালতের নির্দেশে SSKM হাসপাতালে ময়নাতদন্ত হয়। গতকাল তা জমা পড়ে কোর্টে। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ বলেন, “আমি খুব বিরক্ত। প্রথম ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বিদ্যুৎস্পষ্ট হয়ে মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে। এখন দ্বিতীয় রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে দেহে আঘাতের চিহ্ন আছে।”