বিজেপি-পুত্রের হয়ে প্রচারে তৃণমূল সাংসদ পিতা! নজিরবিহীন লড়াইয়ের সাক্ষী নন্দীগ্রাম

"শুভেন্দু নন্দীগ্রামের বিধায়ক ছিল, রাজ্যের মন্ত্রীও ছিল, নন্দীগ্রাম থেকে বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে ও।'' দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিলেন শিশির অধিকারী

বিজেপি-পুত্রের হয়ে প্রচারে তৃণমূল সাংসদ পিতা! নজিরবিহীন লড়াইয়ের সাক্ষী নন্দীগ্রাম
অলংকরণ: তুহিন সেন
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Mar 07, 2021 | 12:45 AM

পশ্চিমবঙ্গ: জল্পনার অবসান। নন্দীগ্রামে তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) বিরুদ্ধে বিজেপির হয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে ময়দানে শুভেন্দু অধিকারীই (Suvendu Adhikari) থাকছেন। আর এই দ্বৈরথে দলনেত্রী নয়, ছেলের হয়েই প্রচারে নামবেন বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন তৃণমূল সাংসদ শিশির অধিকারী (Sisir Adhikari)।

শনিবার বারবেলায় নন্দীগ্রাম আসন থেকে প্রার্থী হিসেবে শুভেন্দুর নাম ঘোষণা অব্যবহিত পরে কাঁথির ‘শান্তিকুঞ্জ’ থেকে শিশিরের বার্তা, প্রয়োজনে ছেলের হয়ে প্রচারেও নেমে পড়তে পারেন তিনি। তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ যোগ করেন, “শুভেন্দু নন্দীগ্রামের বিধায়ক ছিল, রাজ্যের মন্ত্রীও ছিল, নন্দীগ্রাম থেকে বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে ও।”

খাতায় কলমে তিনি এখনও তৃণমূলের সাংসদ। তাঁর দলের হয়ে নন্দীগ্রাম থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দলনেত্রী স্বয়ং। অন্যদিকে বিরোধী দলের প্রার্থী হয়েছেন ছেলে। এই ধর্মসঙ্কটে দল নয়, পরিবারের মেজো ছেলের পাশেই দাঁড়াচ্ছেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ। এর আগেই অবশ্য তিনি জানিয়ে রেখেছিলেন, মমতার বিরুদ্ধে প্রার্থী হচ্ছেন ছেলে শুভেন্দুই। এবং নন্দীগ্রামে যে ফল ভাল হবে না সেটা নাকি তাঁর নেত্রী নিজেই জানেন বলে মন্তব্য করেন শিশিরবাবু। এবার দ্ব্যর্থহীন ভাবে অশীতিপর রাজনীতিবিদ জানিয়ে দিলেন, দরকার পড়লে ছেলের হয়ে প্রচারেও নামতেও কসুর করবেন না।

কিন্তু নিজে তো এখনও তৃণমূল সাংসদ, তারপর পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান, তারপরে বিজেপি প্রার্থী ছেলের হয়ে প্রচার করা দল বিরোধিতা হবে না? শিশিরবাবু কাছে এই উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে তিনি যদি সত্যিসত্যিই ছেলের হয়ে নির্বাচনী প্রচারে নামেন তবে এক নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী থাকবে রাজ্য-রাজনীতি।

২০১৬ সালে বিধানসভার ভোটের প্রায় তিনমাস আগে নন্দীগ্রাম থেকে প্রথম প্রার্থী ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়েছিলেন শুভেন্দু লড়বেন নন্দীগ্রামের মাটি থেকে। তারপর গত পাঁচ বছরে হলদি নদী দিয়ে বয়ে গিয়েছে বহু জল। এবারও ভোটের প্রায় তিন মাস আগে সেই নন্দীগ্রাম থেকে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন মমতা। তবে এবার প্রার্থী তিনি নিজেই। আর গতবারে তাঁর সৈনিক এখন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী। এই মহাযুদ্ধে দলনেত্রী নন, পুত্রের পাশেই দাঁড়াছেন রাজনীতিবিদ পিতা।

শুভেন্দু বিজেপিতে যাওয়ার পর তাঁর এক ভাই সৌমেন্দুও বিজেপিতে যোগদান করেছেন। শিশিরবাবু এবং তাঁর আর এক ছেলে তমলুকের সাংসদ দীব্যেন্দু অধিকারী খাতায় কলমে এখনও তৃণমূলে আছেন বটে তবে কার্যত একঘরে হয়ে আছেন। দলীয় সভা-সমাবেশ থেকে নির্বাচনী প্রচার সব জায়গা থেকেই নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন তাঁরা। মাসখানেক আগে এক দলীয় সভা থেকে যা নিয়ে কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অধিকারী পরিবারকে বিঁধে তিনি বলেছিলেন উপসর্গহীন করোনা রোগীর মতো এঁরা উপসর্গহীন বেইমান। এরপর গত মাসেও অধিকারী গড় কাঁথিতে দাঁড়িয়েও ফের আক্রমণ শানান অধিকারী পরিবারকে। যার প্রেক্ষিতে অশীতিপর রাজনীতিবিদ শিশির বলেছিলেন, নিজের দল তাঁকে যে অপমান করল, গোটা রাজনৈতিক জীবনে বিরোধীরাও তা করেনি। তারপরেও অবশ্য দলত্যাগের কথা বলেননি শিশির অধিকারী। বরং দাবি করেছেন, দলই আসলে চায় যে তাঁরা বিজেপিতে চলে যান।

আরও পড়ুন: নন্দীগ্রামে শুরু, নন্দীগ্রামেই কি শেষ, মমতা-শুভেন্দুর সম্পর্কের একাল-সেকাল

প্রথমে দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান, তারপর দলের জেলা সভাপতির পদ থেকে তাঁকে সরিয়েছে তৃণমূল। সেই শিশির অধিকারী আজ বলছেন, নন্দীগ্রাম আন্দোলনে তাঁর পরিবারের ভূমিকা সম্পর্কে স্থানীয়রা ওয়াকিবহাল। শুভেন্দুর ভূমিকার কথাও সবাই জানেন। তাই নন্দীগ্রামের প্রাক্তন বিধায়ক তথা ভূমিপুত্রের পাশেই থাকবে মানুষ, বিশ্বাস শিশির অধিকারীর।