মহিষাদল: পুরীর রথের পরই আসে হুগলির মাহেশের রথ, পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের (Mahishadal Rathyatra) রথের কথা। মহিষাদলের রথ দেখতে ফি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ আসেন জেলায়। দিন যত যাচ্ছে, মানুষের ভিড়ও তত বাড়ছে। রথের পূণ্য রশিতে টান দিতে শুধু জেলার মানুষই নন, হাজির হন পার্শ্ববর্তী জেলার মানুষও। এখনও এই রথের দিন মহিষাদল রাজবাড়ি থেকে রাজা আসেন। পালকি চড়ে রাজা হরপ্রসাদ গর্গ আসেন। রাজাবাহাদুরের সঙ্গে সঙ্গে চলে রাজছত্র, দেহরক্ষীর হাতে থাকে রুপোর বর্শা। রাজা পালকি থেকে নামার আগে নিয়ম মেনে এখনও ডঙ্কা বাজে। এরপর সুপ্রাচীনকাল থেকে চলে আসা নিয়ম মেনেই এগোয় রথের আচারঅনুষ্ঠান। মঙ্গলবারও একইভাবে পালিত হবে মহিষাদলের রথযাত্রা।
মহিষাদলের রথের চাকা গড়ানোর আগে রাজামশাই প্রথামাফিক সমস্ত মঙ্গলানুষ্ঠান করেন। হাত রাখেন রথের রশিতে। তোপধ্বনি দিয়ে শুরু হয় এই রথের যাত্রা। গুণ্ডিচাবাটি পৌঁছয় রথ। ফি বছর এই রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে বিশাল মেলা বসে এখানে। রথের মেলা বললেই সকলের চোখের সামনে পাঁপড় ভাজার ছবি ভেসে উঠলেও, এলাকার লোকজন বলেন, মহিষাদলের মেলায় নাকি সবথেকে বেশি বিক্রি হয় কাঁঠাল। মেলাচত্বরে লাইন করে কাঁঠালের পসরা নিয়ে বসেন দোকানিরা। এছাড়া ফুচকা, ঘুগনি, তেলেভাজা, পাঁপড়ভাজার দোকান তো থাকেই।
মহিষাদলের রথের মেলা প্রায় ২৪৭ বছরের পুরনো। শোনা যায়, মহিষাদলের রাজা আনন্দ লালের স্ত্রী রানি জানকির উৎসাহে ১৭৭৬ সালে রথযাত্রার শুরু হয়। সেই থেকে চলে আসছে এই রথেরমেলা। দিন যত গিয়েছে, মেলা বহরে বেড়েছে। আগে তো ১৫ দিনের মেলা হতো, এখন তা একমাস ধরে চলে। আগে মেলায় পালাগান হতো। কলকাতা থেকে যাত্রার দল আসত। সময়ের হাত ধরে সেসব এখন হারিয়েছে। তবে জৌলুস ম্লান এ কথা বলা যাবে না। এই মেলায় সবং থেকে আসেন মাদুরশিল্পীরা। হরেক রকমের গাছ, ফুল বিক্রি হয় মেলায়।
মেচেদা-হলদিয়া সড়ক পথে পড়ে মহিষাদল। হলদিয়া যাওয়ার নতুন বাসস্ট্যান্ড বা মেচেদা যাওয়ার পুরানো বাজার বাসস্ট্যান্ডে নেমে ১০ মিনিট হাঁটলেই রথের মাঠ বা সড়ক। রথের রশিতে বাঁধন পড়ে রথের একদিন আগেই। ‘লেদ উৎসব’ বা ‘নেত্র উৎসব’ বলা হয় একে। রাজ পরিবারের সদস্যরাই রথে এই রশি বাঁধেন। বলা যায়, রথে রশি বাঁধার সঙ্গে সঙ্গেই রথযাত্রা শুরু। রথ টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য চারটি রশি থাকে। এর মধ্যে একটি রশি আবার মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকে। এই রথ দেখভালের দায়িত্ব রাজ পরিবারের। বছরভর তারাই এর রক্ষণাবেক্ষণ করে। তবে রথযাত্রার সময় এখানে মেলা বা অন্যান্য যে আয়োজন সেগুলির খবর দেয় মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতি।
যেহেতু বহু মানুষের ভিড় হয়, তাই জেলা পুলিশ সবরকম অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে গাইড ম্যাপ পর্যন্ত তৈরি করেছে। মহিষাদল থানার ওসি প্রলয় চন্দ্র জানান, বিভিন্ন ব্লকে গাইড ম্যাপের ভিজুয়াল ডিসপ্লে হবে। নিরাপত্তায় থাকবে ড্রোনের নজরদারি, পুলিশি হেল্প ক্যাম্পও। মহিষাদলের বিধায়ক তিলককুমার চক্রবর্তী জানান, আগের রীতি মেনেই মহিষাদলের প্রাচীন রথ উৎসব পালিত হবে। অনেকেরই মনে প্রশ্ন, সামনে পঞ্চায়েত ভোট কি এই রথের ধুমধামে প্রভাব ফেলবে? মহিষাদল রাজ পরিবারের বর্তমান সদস্য হরপ্রসাদ গর্গের কথায়, “আমাদের এখানে একটা গেস্ট হাউজও আছে। যে পরিমাণ বুকিং আশা করেছিলাম ততটা হয়নি। কারণ অসহ্য গরম। ভোটের কোনও প্রভাব ফেলবে বলে মনে হয় না।”