Purulia: এখনও আলো নিভে যায়নি, অযোধ্যার পাহাড়ের বুকে শিক্ষার টর্চ জ্বালিয়ে রেখেছেন যে মালতী

Purulia: তাঁর নিজের দুই সন্তান রয়েছে। বাড়ির কাজও সামলাতে হয়। তার মধ্যে শিশুদের পড়াতে গিয়ে সংসারের কাজে কিছুটা সমস্যা হয়। তবে সেটাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে রাজি নন মালতী। তাঁর চোখে যে আরও বড় স্বপ্ন।

Purulia: এখনও আলো নিভে যায়নি, অযোধ্যার পাহাড়ের বুকে শিক্ষার টর্চ জ্বালিয়ে রেখেছেন যে মালতী
কী বলছেন মালতী মুর্মু?Image Credit source: TV9 Bangla

| Edited By: সঞ্জয় পাইকার

Jul 11, 2025 | 4:58 PM

পুরুলিয়া: টিনের ছাউনি। মাটির দেওয়াল। সূর্যের আলো ওই ঘরের প্রতিটা কোণ আলোকিত করতে পারেনি। কিন্তু, ওই আলো-আঁধারে ঘেরা ঘর থেকে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়ছে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের জিলিংসেরেং গ্রামে। মালতীর পাঠশালায় শিক্ষার আলোয় আলোকিত হচ্ছে সেখানকার শিশুরা।

মালতী কে? কীভাবে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন তিনি?

তাঁর নামের পাশে বড় বড় ডিগ্রি নেই। উচ্চমাধ্য়মিক পাশ। কিন্তু, আজ জিলিংসেরেং গ্রামে মালতী মুর্মুর প্রশংসায় পঞ্চমুখ সবাই। কয়েক বছর আগেও এই গ্রামের সঙ্গে মালতীর কোনও সম্পর্ক ছিল না। ২০২০ সালে এই গ্রামের যুবক বাঙ্কা মুর্মুর সঙ্গে বিয়ে হয় মালতীর। আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামে পা দিয়েই মালতী দেখেন, গ্রামে শিক্ষার আলো তেমন করে পৌঁছয়নি। গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের দেখে মন কেঁদে ওঠে তাঁর। সিদ্ধান্ত নেন, গ্রামে জ্ঞানের আলো জ্বালাতেই হবে। তাঁর এই সিদ্ধান্তে সহমত হন বাঙ্কাও। স্ত্রীর উদ্যোগে সাহায্যের হাত বাড়ান তিনি।

অযোধ্যা পাহাড়ের একেবারে প্রত্যন্ত পাহাড়ি এই গ্রামে স্বামীকে নিয়ে ঝুপড়ি ঘরে স্কুল শুরু করেন মালতী। ধীরে ধীরে তাঁর এই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়ে। গ্রামবাসীরাও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। গ্রামবাসীদের উদ্যোগে মাটির দেওয়াল ও টিনের ছাউনি দেওয়া ঘর হয়। দুটি রুম রয়েছে। এখন সেখানে ৪৫ জন আদিবাসী ছেলেমেয়ে সকালবেলা আসে পড়াশোনা করতে। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত বিনা পয়সায় শিশুদের পড়াশোনা করানো হয়। আবার সেখানে যাওয়া পর্যটকদের কাছে নিজেদের এই উদ্যোগের কথা জানান মালতীরা। পর্যটকদের অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়ান। আর সেই আর্থিক সাহায্যেই ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য ইউনিফর্ম কেনা হয়েছে। ছেলেমেয়েদের বই কিনে দেওয়া হয়েছে।

এই গ্রামে যে প্রাথমিক বিদ্যালয়টি রয়েছে, তা বাংলা মাধ্যমের। তাই, আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষা অলচিকি শেখান মালতী। পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজিও পড়ান। কোনও সরকারি সাহায্য ছাড়াই নিজেদের উদ্যোগে জিলিংসেরেং গ্রামে চলছে মালতীর পাঠশালা।

মালতীর উদ্যোগে খুশি গ্রামবাসীরা। সুনীতা মান্ডি নামে গ্রামের মহিলা বলেন, “আগে অবস্থা অনেক খারাপ ছিল। এখন মালতী পড়াশোনা করানোয়, ছেলেমেয়েরা ভাল শিক্ষাদীক্ষা পাচ্ছে। আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের ওখানে পাঠাই। লকডাউনের সময়ও ওই স্কুল খোলা ছিল। সেইজন্য ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা ভোলেনি।

স্ত্রীকে নিয়ে গর্বিত বাঙ্কা মুর্মু। বললেন, “২০২০ সালে ওকে যখন বিয়ে করি, তখন আমাদের গ্রামে শিক্ষার হাল খুবই খারাপ ছিল। তারপরই ও গ্রামের ছেলেমেয়েদের পড়ানোর কথা বলে। পড়াশোনা শুরু হওয়ার পর অনেক NGO এসেছিল। তবে তেমন সহযোগিতা করেনি। তবে কেউ যদি সহযোগিতা করে, স্কুলটা আরও ভাল হবে।”

বাঙ্কা মুর্মু

যাঁকে ঘিরে গোটা গ্রামের মানুষ আজ উচ্ছ্বসিত, সেই মালতী মুর্মু কী বলছেন? দু’চোখে নতুন স্বপ্ন নিয়ে মালতীর জবাব, “আমার যখন বিয়ে হয়, তখন এখানে শিক্ষার দিক থেকে শিশুরা কাঁচা ছিল। আমার স্বামীকে বলি, চলো আমরা শিক্ষাদান করি। প্রথমে ঝুপড়িতে পড়াশোনা শুরু হয়। তারপর গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় মাটির দেওয়াল তুলি। এখন ৪৫ জন বাচ্চা পড়ে। ফোর পর্যন্ত পড়াই।”

পড়াচ্ছেন মালতী মুর্মু

তাঁর নিজের দুই সন্তান রয়েছে। বাড়ির কাজও সামলাতে হয়। তার মধ্যে শিশুদের পড়াতে গিয়ে সংসারের কাজে কিছুটা সমস্যা হয়। তবে সেটাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে রাজি নন মালতী। তাঁর চোখে যে আরও বড় স্বপ্ন। গ্রামের আদিবাসী ছেলেমেয়েদের শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে চান তিনি। সেখানে কোনও প্রতিবন্ধকতাকেই আমল দিতে চান না। মাটির দেওয়াল আর টিনের চালের ওই ঘরের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলেন মালতী। যেখান থেকে শিশুরা পড়াশোনার পর হাসিমুখে বাড়ির পথ ধরেছে।